দূর্বা বাংলাদেশে জন্মানো ঔষধি গুণসম্পন্ন ঘাস

দূর্বা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন ঘাস। এদের বৈজ্ঞানিক নাম: Cynodon dactylon, (L.) Pers এবং এরা পোয়াসি পরিবারের ঘাস। এই ঘাসটির ঔষধি ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো। ঘাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

দূর্বা একটি ভেষজ গুণের ঘাস

১. রক্তপিত্ত: এই রোগটির অভিব্যক্তি শরীরের বিভিন্ন পথে হয়ে থাকে; মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে। এমন কি লোমকুপ দিয়েও ঘামের মতো বিন্দু বিন্দু রক্ত বের হতেও দেখা যায়। আয়ুর্বেদ মতে এটা রক্তপিত্তের ক্ষেত্র; এক্ষেত্রে দূর্বার রস কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে নিশ্চিত উপশম হয়। এ কথা চরকের। শুধু তাই নয়, এটি পরীক্ষিত এবং চিরাচরিত। উক্ত ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদের শারীরবিদ্যার অন্য একটি বাস্তব দিগদ্রষ্টা সম্প্রদায়ের সংহিতা সুশ্রুতে বলা হয়েছে দূর্বা শুকিয়ে গুড়া করে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে একই কাজ হয়।

২. সন্তান লাভ: যে কোনো কারণেই হোক, গর্ভধারণে অসমর্থ হলে অথবা মৃতবৎসা হলে অর্থাৎ জীবিত সন্তান প্রসব না করলে সেক্ষেত্রে দূর্বা ও আতপ চাল একসঙ্গে বেটে বড়া বা ফুলুরি করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ২ বা ৩টি করে ভাত খাওয়ার সময় কিছুদিন খেলে সে অভাব থাকবে না বা গর্ভ দোষ নষ্ট হবে। এ ভিন্ন অকালে রজঃরোপে অথবা অধিক বয়স পর্যন্ত রজঃ অদর্শনেও এইভাবে ব্যবহারেও ফলপ্রসু হয়।

৩. শ্বেত প্রদর (Leucorrhoea) জনিত দুর্বলতায়: দূর্বা এবং কাঁচা হলুদের রস সমান পরিমাণ মিশিয়ে অথবা শুধু দুবার রস ২ বা ৩ চা চামচ অল্প কাঁচা দুধের সঙ্গে খেতে দিয়ে থাকেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। তবে বাতগ্রস্তা হলে এটা ব্যবহার করতে দেন না। এ ভিন্ন এই মুষ্টিযোগটিতে পুরাতন রক্ত আমাশাও সেরে যায়।

৪. চুল পড়া দূর করতে: এই একটি রোগ অনেকক্ষেত্রে যার প্রকৃত কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় দূর্বার রস দিয়ে তেল পাক করে মাথায় মাখলে চুল ওঠা বন্ধ হয়।

আরো পড়ুন:  হাতিশুঁড় উদ্ভিদের প্রচলিত নয়টি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণাগুণ

৫. ব্রণের ক্ষত দূর করতে: দ্যুষিত ও দুষ্ট ব্রণের ক্ষত শীঘ্র দূর করতে ৪ গুণ দূর্বার রস পাক করা ঘৃত লাগালে সেরে যাবে। একথা চরকের।

৬. ত্বকগত রোগে: স্বেদজ অদৃশ্য জীবাণুর বা কোনো ছাত্রাক জাতীয় আক্রমণে শরীরের কোনো স্থানে দাগ হলে কাঁচা হলুদ ও দূর্বা বেটে লাগালে সেরে যায়।

৭. কেটে গেলে:  দূর্বা থেতো করে সেখানে বসিয়ে চেপে বেধে দিলে তৎক্ষণাৎ রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে, এটা তো সকলেরই জানা।

৮. মূত্র কৃচ্ছ্রতায়: প্রস্রাব হতে কষ্ট অথচ পাথুরী নয়, সেক্ষেত্রে দূর্বার রস দেড় বা দুই চামচ দুধ ও জল মিশিয়ে খেলে সুন্দর ফল হয়; তবে অর্শ থাকলে কাজ হবে না।

৯. পায়োরিয়া: দূর্বা ঘাস শুকিয়ে গুড়ো করে তা দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া সেরে যায়।

১০. আমাশয়: সাদা বা রক্ত আমাশয়। যাই হোক না জামপাতা ২টি ও দূর্বা ঘাস ৫ থেকে ৭ গ্রাম একসঙ্গে বেটে সেই রস ছেকে নিয়ে একটু গরম করে অল্প দুধ মিশিয়ে খেলে ২ দিনেই সেরে যায়।

১১. বমন বা বমি নিবারণে:  সর্বদা গা বমি বমি করা এক্ষেত্রে দূর্বার রস আধা চামচ থেকে ১ চামচ পর্যন্ত অল্প একটু চিনি মিশিয়ে খানিকক্ষণ অন্তর অন্তর একটু একটু করে চেটে খেতে হবে। এতে অসুবিধাটা চলে যাবে।

১২. রক্তদাস্তে: মলের সঙ্গে মিশে রক্ত পড়ছে, অথবা মলত্যাগের পর পৃথক রক্ত পড়ছে, অথচ জ্বালা যন্ত্রণা নেই, এ ক্ষেত্রে দূর্বার রস ১ তোলা আন্দাজ, একটু গরম করে, অল্প চিনি, সম্ভব হলো ৭ থেকে ৮ চামচ ছাগল দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেতে দিলে রক্তদাস্ত বন্ধ হবে।

১৩. রক্তস্রাব:নারীদের অনেকক্ষেত্রে মাসিকের মতই রক্তস্রাব হয়, সে ক্ষেত্রে এই দূর্বার রসও ফলপ্রসু হয়।

১৪. নাসা অর্শে:  মাঝে মাঝে নাক টিনটিন করে; আবার নাক থেকে রক্তও পড়ে অথচ হাই ব্লাড প্রেসার নেই; সে ক্ষেত্রে দূর্বা ঘাসের নস্যি নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

আরো পড়ুন:  বড় নল বা মহানল ঘাসের ভেষজ গুণ ও প্রয়োগবিধি

১৫. কচ্ছু রোগে: গায়ে বিশেষ কিছু নেই। অথচ চুলকায়, সে ক্ষেত্রে তিলের তেলের সঙ্গে দূর্বা ঘাসের রস পাক করে গায়ে লাগাতে হয়। যতটা তেল তার সিকি ভাগ রস।

প্রস্তুত পদ্ধতি হচ্ছে সরিষায় বা নারিকেল তেল আগুনে চড়িয়ে নিষ্ফেন হলে তাকে নামিয়ে একটু  ঠান্ডা হলে পর রস দিয়ে পুনরায় পাক করে নিতে হবে। এমন সময় নামাতে হবে যে রসও থাকবে না। অথচ ওর সিটেগুলি পুড়েও যাবে না, তারপর ওকে ছেকে নিতে হবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৯৭-৯৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!