একুশের গান

(হেলাল হোসেন ঢালীকে)

 

সমুদ্রের ছুটে আসা সফেন তরঙ্গমালার মতো, অথবা আকাশ থেকে

টিপ টিপ করে পড়া স্পঞ্জ রূপ বৃষ্টির শব্দের মতো

কিংবা স্বচ্ছ চকচকে কাঁচের মতো শিহরণ

খেলে যায় আমার কাব্যিক ত্বকের বুকে,

রঙধনুর রঙিন আভা ছড়িয়ে যায়

আমার ভ্রমণের র্কদমাক্ত মৃত্যু উপত্যকাপূর্ণ পথে;

অথচ এখন তুমি মহাবিশ্বের শ্রুতিময় ধ্রুবতারা

জ্বলে জ্বলে সুগন্ধ বিলিয়ে দাও, এই চোখে-ঠোঁটে,

কাছে পেতে বড়ো সাধ

নিবিড় ভালোবেসে

কাছে  এসে,  

যদিও আছি

খুব কাছাকাছি।

 

এদেশের গল্পফুলের মৌমাছিরা গুনগুনিয়ে

গেয়ে চলে অতীতের ধ্বংসকুণ্ডলি;

গনগনে বাতাসে লবনাক্ত দুঃস্বপ্ন ধুমকেতু হয়ে ছুটে বেড়ায়

পথে পথে পথিকের পদচুমে;

আর আমি অসন্তোষের কালবোশেখি রেখেছি জমা

গ্রামীণ লতাগুল্মের গহ্বরে,

এই চিরসবুজ লতাপাতা একদিন ফুলে ফলে রৌদ্রোজ্জল হবে;

তোমারও হবে ফুল, হবে ফল, বীজ বোনা হবে জানি।

 

আমি এক মূল্যহীন স্বাপ্নিক পথের প্রাণ

কতজনই মাড়িয়ে চলে গেল,

একবারও দেখল না কি অসহ্য অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত,

বিক্ষিপ্ত বিতাড়িত আগন্তুক কেন বেঁচে আছি?

কেন মিছিলে তুলেছি ঘূর্ণিঝড়ে পতিত সমুদ্রের উর্মিমালার

বিস্ফোরিত গর্জনের মতো উত্তাল নিগ্রো হাত,

তুমি

আসোনি

রক্তের তোড়ে ভাসেনি আজো পাথুরে প্রাসাদসমূহ,

অথচ আমি অপেক্ষা করতে করতে……..;

 

তোমার অনিঃশেষ ঘৃণা আমাকে টগবগে

ফেলে আসা একুশ ফিরিয়ে দিয়েছে,

সুক্ষ্ম সবুজ লতার মতো প্রিয় একুশকে, একুশের স্বাধীনতাকে।

 

২১.০৫.২০০২; সূর্যসেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউজের (১৮৪৯-১৯১৭) আঁকা চিত্র। চিত্রটির নাম মিরান্ডা (Miranda) যেটি শেক্সপিয়ারের নাটক টেম্পেস্টের চরিত্র। এখানে চিত্রটিকে উপরে নিচে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:  ইত্যাদি

Leave a Comment

error: Content is protected !!