কী আশ্চর্য
কখনই তুমি তো কাঁদো না
পুঁটুলি পাকিয়ে রেখে গেছ
এ-বাড়ির আনাচে-কানাচে
যে মনোবেদনা
পুড়ে যাচ্ছি আমি তার আঁচে
এ একরকম ভালো
শুনতে পাই না কানে
কে কী বলল, কে কেন চাইছে বেশি আরও
থাকতে হয় না সাতে পাঁচে কারও
গলিতে তোমার ছোট্ট এক চিলতে বাগানে
লঙ্কাগাছে ফুল ধরেছে সবে
তুমি আসছ কবে
ছেঁড়া সেলাইয়ের ছুঁচে,
ভাঙা জোড়া দেয়ার আঠায়
তুমি আছো
ছুঁলেই টের পাই
লাঠি হাতে উঠে
এ-ঘর ও-ঘর করি খোঁড়াতে খোঁড়াতে
কখনও সাক্ষাতে
বলি নি লজ্জার মাথা খেয়ে মুখ ফুটে
তবু খুব জানতে ইচ্ছা করে
কখনও না-কেঁদে
সমস্ত বর্ষার জল কেন তুমি হাসিমুখে
তুলে নাও দু-চোখের কোলে—
একদিন বাঁধ ভেঙে দিয়ে
আমাকে ভাসিয়ে দেবে ব’লে ?
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।