আত্ম-নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ (ইংরেজি: Self-determination) হচ্ছে একটি ভূখণ্ডের অধিবাসীদের একই ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে স্বাধীন স্বশাসিত ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের জাতীয় আবেগপ্রসূত অভিলাষ। প্রথম বিশ্ব-মহাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তাঁর চোদ্দ দফা সনদে এই অভিলাষকে স্বীকৃতি ও উৎসাহদান করেন, যখন পূর্ব ইউরােপে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় এবং অটোম্যান সাম্রাজ্য দুটি ভেঙে ছােট ছােট রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। তাতে আফ্রিকার বিভিন্ন জনজাতির মধ্যেও অনুরূপ স্বাজাত্যবােধের ভিত্তিতে একটি প্রাক-রাজনৈতিক পশ্চাৎপট এবং রাষ্ট্রীয় আবেগ উৎসারিত হয়।

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ-এর জন্য জাতীয় আবেগ সঞ্জাত পশ্চাৎপট থাকা প্রয়ােজন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের একটা সুস্পষ্ট সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় বিশ্ব-মহাযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগের কাছে পশ্চিমের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশ নতি স্বীকার করে। রাষ্ট্রসংঘে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত মানবাধিকার সনদের প্রথম অনুচ্ছেদেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অগ্রাধিকারকে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভ্লাদিমির লেনিনের চিন্তাতেও জাতীয় আত্ম-নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি সবিশেষ গুরুত্ব পায়। তাতে রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সমস্ত জাতির সমতা ও সার্বভৌমত্বের পন্থা স্বীকৃতি পায়। লেনিনবাদী দৃষ্টিতে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার ছাড়াও প্রতিটি দেশের বিশেষ কোনও যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যােগদানের অধিকার অথবা কোনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের স্বতন্ত্র জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের অধিকার আছে।

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!