প্রেমেন্দ্র মিত্র আধুনিক বাঙালি কবি ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক

প্রেমেন্দ্র মিত্র (জন্ম: ১৯০৪ – মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৮৮) বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক ছিলেন। তাঁর  জন্ম ১৯০৪ সালে বারাণসীতে। বিচিত্রকর্মা মানুষ। প্রধানত কবি ও কথা সাহিত্যিক। এছাড়া শিক্ষকতা, পত্রিকা সম্পাদনা, চিত্রনাট্য লেখা ও চলচ্চিত্র পরিচালনা, বেতার কেন্দ্র পরিচালনা ইত্যাদি নানাবিধ কাজ সারাজীবনে করেছেন। অশীতিপর জীবনেও পূর্ণসময়ের সাহিত্যসেবক ছিলেন।

ছোটবেলা থেকে ছিল সাহিত্যের বাতিক। তাঁর সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা বিখ্যাত ‘কালিকলম’। পরে বুদ্ধদেব বসু ও সমর সেনের সঙ্গে যুক্ত সম্পাদকতায় বের করেন ‘কবিতা’। ‘প্রথমা’ কাব্যের কবি হিসাবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। স্বভাবচঞ্চল এই সৃজনশীল মানুষটি কখনও একনিষ্ঠভাবে কোনো কাজে লেগে থাকতে পারেননি।

গান লেখাও ছিল প্রেমেন্দ্র মিত্রের একধরনের খেয়ালি খেলা। তাই সে-ব্যাপারে অভূতপূর্ব সাফল্য ও জনাদর সত্ত্বেও পরে আগ্রহ বোধ করেননি। অন্তত সার্ধশত গান লিখেছেন। সে-সব গান সংগৃহীত ও গ্রন্থভুক্ত হয়নি। প্রেমেন্দ্র মিত্র নিজে গান গাইতে পারতেন না। তবে ছোটবেলায় এসরাজের চর্চা করেছেন কিছুকাল। সুর বোধ ছিল। পরবর্তীকালে গান রচনায় সেই সংগীতজ্ঞান কাজে লেগেছে।

কোনো অন্তর্গত প্রেরণা থেকে তিনি গান লেখেননি। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তাকে গান লিখতে হয়েছে। অথচ তার অন্তঃশীল কবিত্বের তাপে আর বাচনের অভিনবত্বে চল্লিশের দশকে সে-সব গান শ্রোতাদের চমকিত করে। যেমন ‘রিক্তা’ ছবিতে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের সংগীত পরিচালনায় তার গান ‘চাদ যদি নাই ওঠে’, ‘আরও একটু সরে বসতে পারো’ বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তার লেখা আরও বহু গান বাঙালী শ্রোতার স্মৃতিতে জীবিত আছে। আর কেন গান লিখলেন না, এ প্রশ্নের জবাবে প্রেমেন্দ্র মিত্র জানান, গান লেখা মানেই সুরকার আর শিল্পীর পিছনে ছুটাছুটি, তাতে উৎসাহ পাননি। তাঁর গানগুলি সংকলিত হলে বাংলা গানের একটি নতুন ধরন পাওয়া যাবে, যা স্বাদু, পাঠযোগ্য এবং কবিত্ববহুল।

তথ্যসূত্র:

১. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা গান, প্যাপিরাস, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১ বৈশাখ ১৩৯৪, পৃষ্ঠা, ১৭৪-১৭৫।

আরো পড়ুন:  সজনীকান্ত দাস আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গদ্যলেখক

Leave a Comment

error: Content is protected !!