শৈলেন রায় (১১ এপ্রিল ১৯০৫ – ৭ জুলাই ১৯৬৩) কবি, গায়ক, চিত্রনাট্যকার ছিলেন। তিনি জন্মেছেন ১৯০৫ সালের ১১ এপ্রিল কুচবিহারে। বাবা গোবিন্দ রায় এবং মা বিরাজময়ীর অষ্টম সন্তান তিনি। কোচবিহার শহরের প্রাচীন বনেদি এলাকা চালতাতলায় ( অধুনা যুব সংঘ ) তাঁর পৈত্রিক বাড়ি। বাবা ও মা চেয়েছিলেন ছেলে ওকালতি করুক। ছেলের কাব্য প্রতিভা দেখে বাবাই তাকে উৎসাহিত করেন।
লেখাপড়া শুরু জেনকিন্স স্কুল, তারপর ভিক্টরিয়া কলেজ (আজকের A.B.N. Seal College ) তবে কলেজ জীবন শেষ করেন কলকাতার City College থেকে। কবিতা দিয়েই সাহিত্য জীবনের হাতে-খড়ি, তবে গান গাইতে পারতেন। বাজাতেন নিপুণভাবে হারমোনিয়ম ও এসরাজ। তাঁর প্রথম গান রচনা কোচবিহার ভিক্টরিয়া কলেজে ছাত্ররূপে, কলকাতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অভিনন্দন সভায় ১৯২৪ সালে।
কাজী নজরুল ইসলাম ও আব্বাসউদ্দীনের আমন্ত্রণে কলকাতায় যান ১৯২৬ সালে এবং সিটি কলেজে ভর্তি হন। শুরু হয় গীত-পরিক্রমার। ১৯২৭ সালে আব্বাসউদ্দীনই তাঁর গান প্রথম রেকর্ড করেন। তার পরেই গানের বন্যা। নজরুল ও কৃষ্ণচন্দ্র দে তার সবচেয়ে বড় প্রেরণাদাতা। কৃষ্ণচন্দ্রের কণ্ঠে তাঁর বেশ কিছু গান জনাদর পায়; যেমন “জাগে হিন্দুস্থান” উল্লেখযোগ্য গান।
সেকালের নামি দামি শিল্পীরা তাঁর গান গেয়েছেন। শচীন দেব বর্মন, আব্বাসউদ্দীন, আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখা গান গেয়েই সংগীত জীবনে প্রবেশ করেছিলেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও তাঁর লেখা গান গেয়ে ছায়াছবির গানে প্রবেশ করেছিলেন । “প্রেমের সমাধি তীরে নেমে এলো শুভ্র মেঘের দল, তাজমহলের মর্মরে গাঁথা কবির অশ্রুজল” বাংলার হৃদয়ে তোলপাড় করে তোলা এগান একই সঙ্গে গীতিকার শৈলেন রায় , সুরকার হিমাংশু দত্ত এবং গায়ক শচীন দেব বর্মনকে বাংলা গানের জগতে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।
শৈলেন রায়ের অধিকাংশ গানই ছিলো মর্মস্পর্শী। “বিদ্রোহী” ছবির মধ্য দিয়ে তাঁর ছায়াছবির সংগীত রচনায় প্রবেশ ঘটে। তারপর অসংখ্য ছবি ও অসংখ্য গান। ছায়াছবির চিত্রনাট্য ও গান রচনাও অনেক করেছেন। শচীন দেববর্মণের কণ্ঠে তার গান ‘প্রেমের সমাধিতীরে’ বোধ হয় সবচেয়ে বিখ্যাত।
গীতিকার শৈলেন রায় বহু পুরস্কারে ভূষিত হলেও কাজী নজরুলের দেওয়া পুরস্কার তাঁর শ্রেষ্ঠ ভূষণ । H.M.V কোম্পানি ছেড়ে চলে যাবার আগে নজরুল রেকর্ড কোম্পানির উদ্দেশে লিখে গেলেন একখানি ছোট্ট চিঠির বিশাল বার্তা “আপনাদের দুটো বস্তু উপহার দিয়ে গেলাম এক শচীন দেব বর্মন অন্যটি শৈলেন রায়।”
যে সব চলচ্চিত্রে শৈলেন রায়ের গান বিখ্যাত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শহর থেকে দূরে’, ‘উদয়ের পথে, ‘স্বপ্ন ও সাধনা’, ‘বাবলা’, ‘লালুভুলু’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘শেষ উত্তর’, ‘সমাপিকা, ‘রাইকমল’। তার লেখা গান প্রায় প্রত্যেক বাঙালী শিল্পীই গেয়েছেন। তার গানের জনপ্রিয়তা অর্জনে সুরকার কমল দাশগুপ্ত, সুবল দাশগুপ্ত, হিমাংশু দত্ত, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় ও কৃষ্ণচন্দ্র দে-র ভূমিকা খুব বড়।
১৯৬৩ সালের ৭ জুলাই কর্কট রোগে এই গীতকারের প্রয়াণ ঘটে। দুই সহস্রেরও বেশি গান রয়েছে তার, সংকলিত হবার অপেক্ষায়। তাঁর লেখা আর হিমাংশু দত্তের সুর দেওয়া পঁচিশখানি গানের একটি সংকলন আছে ‘সুরসাগর’ নামে।
তথ্যসূত্র:
১. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা গান, প্যাপিরাস, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১ বৈশাখ ১৩৯৪, পৃষ্ঠা, ১৮১।
২. অসিত কুমার ঘোষ সম্পাদিত তোমারে গিয়েছিনু ভুলি, কবি গীতিকার শৈলেন রায় এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি (কল্যাণ ব্যানার্জি) স্মরণিকা, ৪০তম সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব-২০১০, যুব সংঘ চালতাতলা, কুচবিহার।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
‘মুক্তির মন্দির’ শৈলেন রায়ের লেখা নয়।
ধন্যবাদ, লেখাটি সংশোধন করা হয়েছে।