ইংল্যান্ড বা যুক্তরাজ্য বা বিলেত বা ব্রিটেন (ইংরেজি: England বা Britain) একটি মানব ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যাকারী সাম্রাজ্যবাদী সামরিকায়িত সন্ত্রাসবাদী দেশ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এখনো একটি প্রবল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্রিটেন তার প্রাক্তন অবস্থানগুলি সহ প্রাক্তন ক্ষমতার অনেকটাই হারিয়েছে।
ইউরোপের এই রাষ্ট্রটি একটি পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র যা দেশে দেশে যুদ্ধ, শোষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করেছে। পুঁজির উদ্ভবের কাল থেকে এটি জনগণের উপর জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে আছে। জাতি হিসেবে ইংরেজরা খুব রক্ষণশীল, সুবিধাবাদী ও পরজাতিপীড়ক এবং এখনো রাজতন্ত্রের মতো নোংরা একটি প্রথাকে টিকিয়ে রেখেছে।
ব্রিটেন পুঁজিবাদী বিকাশের পথবতী প্রথম ইউরোপীয় দেশ। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বহুবিধ কারণে সে ‘বিশ্বের কারখানা ও পৃথিবীর প্রধান বাণিজ্যিক শক্তির দাবিদার হয়ে ওঠে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ ভূমি ও জনসংখ্যা তার উপনিবেশভুক্ত হয়। উপনিবেশ দখল ও লুণ্ঠন ছিল তার সম্পদ ও শক্তির একটি প্রধান উৎস। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা অবশ্যই তুলনাহীন।
ইংল্যান্ডের ইতিহাস
ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর পাশাপাশি তাদের বিমান ও সেনাবাহিনীও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর তুলনায় তাদের নৌবাহিনী ছিল অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের মত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জনশক্তিও সময়ের সাথে সাথে বেড়ে বিশাল আকার ধারণ করে। ১৯১৪ সালে মাত্র ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩২ জন সৈন্য ব্রিটিশ সৈন্যের প্রতিনিধিত্ব করলেও ১৯১৬ সাল নাগাদ এই সৈন্য সংখ্যা বেড়ে গিয়ে হয় ২৬ লাখের কাছাকাছি। যার প্রায় ১৬ লাখ সৈন্য হতাহত হওয়ার ঘটনা থেকেই বােঝা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কত ধ্বংসাত্মক ছিল। তেমনি প্রথম দিকের একটি বেলুন ইউনিট দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বিমান বাহিনীও বলার মত শক্তিমত্তা অর্জন করে। তারা ১৯১৫ সালের মে মাসের দিকে ১৬৬ এর মত বিমান সংযােজন করতে সক্ষম হয়।
১৮টির মত আধুনিক ড্রিডনট, ১০টি ব্যাটল ক্রুজার, ২০টি টাউন ক্রুজার, ১৫টি স্কাউট ক্রুজার, ২০০টির মত ডেস্ট্রয়ার আর ২৯টি শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ নিয়ে তখনকার দিনে ব্রিটিশ নৌবাহিনী ছিল অন্যতম সেরা। অর্কনির স্কাপা ফ্লো কিংবা স্কটল্যান্ডের রােসিথে থেকে জার্মানদের যে কোনাে ধরনের আক্রমণ প্রতিরােধে সদা প্রস্তুত থাকতাে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। আর এক্ষেত্রে ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, সাবমেরিন ও হালকা অস্ত্রে সজ্জিত জাহাজগুলাে এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করত। এর পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, জিব্রালটার, মালটা ও আলেকজান্দ্রিয়া উপকূলের প্রহরায় নিযুক্ত থাকে দুটি বাটলকুজার ও ৮টির মত ক্রুজার। তবে জার্মান ইউবােটের আক্রমণে এই শক্তিশালী ব্রিটিশ বাহিনীও বেশ কয়েক দফা সংকটে পড়ে। যুদ্ধে জার্মানরা প্রথম দিকে তিনটি ক্রুজার ও একটি ডেস্ট্রয়ার হারালেও তারা ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ আরথােসার প্রায় ধ্বংস করে দেয়। এদিকে জার্মান ইউবােটের লাগাতার আক্রমণে ১৯১৪ সালের মধ্যেই ব্রিটিশরা তাদের যুদ্ধ জাহাজ ক্রেসি, আবুকির ও হগ হারায়। এতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ নৌসেনার প্রাণ যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণে অনেক ব্রিটিশ নৌবহরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
১৯১৪ সাল থেকে শক্তিশালী ব্রিটিশ বাহিনীর জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন জার্মান নৌ অধিনায়ক ফাঞ্জ ফন হিপার । তিনি নানাস্থানে আক্রমণ করে ব্রিটিশদের জন্য সংকট তৈরি করে। তবে নানা স্থানের যুদ্ধে এত ক্ষয়ক্ষতি ব্রিটিশ নৌবাহিনীকে নিঃশেষ করতে পারেনি। তারা ১৯১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে এক মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। জার্মান যুদ্ধজাহাজ সিডলিজ ও ব্লচার এবার আক্রান্ত হয় ব্রিটিশ নৌসেনার দ্বারা। জার্মানরা এর প্রতিশােধ নিতে ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল ডেভিড বিটির ফ্ল্যাগশিপ লায়নের সলিল সমাধি নিশ্চিত করে। ব্রিটিশরা আবার নতুন করে জার্মান নৌসেনার মুখােমুখি হয় ১৯১৬ সালের ৩১ মে জুটল্যান্ডের যুদ্ধে। এবার দুপক্ষেই প্রচুর হতাহত হয়। তাদের প্রত্যেকেরই ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেকগুলাে যুদ্ধজাহাজ, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার ও ব্যাটল ক্রুজার। এতে করে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি হতাশ হয়ে পড়ে। তারপরেও জুটল্যান্ডের লড়াইকে ব্রিটিশ কমান্ডারদের পক্ষ থেকে একটি বিজয় হিসেবে দাবি করা হয়। এরপর থেকেই ব্রিটিশ নৌবাহিনী বুঝে যায় যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকতে হলে সবার আগে জার্মান ইউবােটগুলাের আক্রমণ ঠেকাতে হবে। অন্যথায় এই বিপদজনক নৌযানগুলাে সমুদ্রপথে কাউকেই আর দাঁড়াতে দেবে না। আর এতাে কিছুর পরেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এক ব্রিটিশ নৌবাহিনীরই প্রায় ৩৪ হাজর ৬৪২ জন সদস্য নিহত হয় যার মধ্যে অনেক এশীয় নাগরিক ছিল। আর আহতের সংখ্যাও নিতান্ত কম ছিল না।[২]
কিন্তু প্রথম এবং বিশেষভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ব্রিটেনের অবস্থানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক আগেই পুঁজিবাদী বিশ্বে তার মুখ্য অবস্থানটি সে আরও শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে। এখন জাপান, জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ফ্রান্স ও ইতালি তাকে পশ্চাদভূমির আরও গভীরে হটিয়ে দিয়েছে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার পতনের ফলে ব্রিটিশ পুঁজিবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উপনিবেশ থেকে অর্জিত মুনাফায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং ন্যাটো ও অন্যান্য আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্যবাদী জোটের শরিক হিসাবে তার বিপুল সামরিক ব্যয় অর্জিত রাজস্বকে অতিক্রম করে যায়।
শিল্পোন্নয়নে ব্রিটেন পিছিয়ে পড়ার ফলে বিশ্ববাজারে ব্রিটিশ পণ্যের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য হ্রাস পায়, বিশ্বের রপ্তানি ক্ষেত্রে তার তৈরি পণ্যের অংশভাগ কমে যায় এবং এসঙ্গে সে নানাধরনের বিপুল পরিমাণ পণ্যাদি আমদানি শুরু করে। অতঃপর ব্রিটেনের লেনদেন স্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের এই দুর্বলতার আনুষঙ্গিক হিসাবে দেশের সামাজিক অসঙ্গতিগুলি আরও গভীরতা লাভ করে। নিজ অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে দৃঢ়সঙ্কল্প মেহনতি মানুষের ধর্মঘট-আন্দোলন এখন সারা দেশে প্রবল হয়ে উঠছে। অর্থনীতির মন্দাবস্থা, বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি প্রসার ও দরবৃদ্ধিই দেশের সামাজিক সংঘাতকে তীব্রতর করে তুলেছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নড়বড়ে অবস্থানটি মজবুত করার জন্য শাসকচক্র প্রাণান্ত করছে। দৃষ্টান্তস্বরুপ, এরা পশ্চিম ইউরোপে ব্রিটেনের অবস্থানে মদদ যোগাবার জন্য একে সাধারণ বাজারের অন্তর্ভুক্ত করেছে। অথচ এর ফলে ব্রিটেনের রপ্তানিক্ষেত্রে উৎসাহের বদলে বরং তার অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বলতর হয়েছে।
যুক্তরাজ্য অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র একটি দ্বীপরাজ্য। আয়তনের হিসাবে (২ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার) এটি পশ্চিম জার্মানির প্রায় সমান এবং ফ্রান্সের অর্ধেক। ৫ কোটি ৬০ লক্ষ জনসংখ্যার এই দেশটি পশ্চিম জার্মানি ও ইতালির পর পশ্চিম ইউরোপের তৃতীয় জনবহুল রাজ্য।
ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও জাতিবিদ্যার বিচারে যুক্তরাজ্য সমসত্ত্ব দেশ নয়। এখানে স্কট, ওয়েলশম্যান, আইরিশ এবং ওলস্টারম্যানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। এরা ইংরেজি ভাষাভাষি হলেও সকলেই নিজেদের ইংরেজ মনে করে না। আয়ারল্যাণ্ড থেকে জবরদখলক্রমে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ওলস্টারের (উত্তর আয়ারল্যাণ্ড) অধিবাসীরা জাতীয় স্বাধীনতার ও স্বদেশের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য তাদের সংগ্রাম তীব্রতর করছে।
অনুরূপভাবে দেশের বিভিন্ন বিভাগগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্তরও সমান নয় এবং এগুলির জাতীয় উপান্ত অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত এলাকারূপে চিহ্নিত।
ইংল্যান্ড দেশটির অর্থনীতি
যুক্তরাজ্য একটি পুঁজিবাদী দেশ। তার অত্যুন্নত শিল্প থেকে কৃষির দশ গুণ জাতীয় আয় উৎপন্ন হয়। কৃষি দেশের খাদ্যচাহিদার মাত্র অর্ধেক মেটাতে পারে।
ব্রিটেনের অর্থনীতি মূলত বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল, কারণ তার অধিকাংশ শিল্পই রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করে। এসঙ্গে তাকে শিল্পলগ্ন কাঁচামালের অধিকাংশ ও প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আমদানি করতে হয়। রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণের দিক থেকে এটি পুঁজিবাদী সমস্ত দেশের পেছনে রয়েছে। বাণিজ্যিক নৌবহরের মালবহন ক্ষমতার হিসাবে এদেশ জাপানের পরবর্তী স্থানে অবস্থিত। বিশ্বসমুদ্রে ব্রিটিশ পতাকাধারী জাহাজগুলি বিপুল পরিমাণ মাল বহন করে থাকে।
ব্রিটেনের যুদ্ধোত্তর অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় পুঁজির ভূমিকা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। রেল, অভ্যন্তরীণ জলপথ, জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদক শিল্পের মূল শাখাগুলি (কয়লা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ), যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ সংস্থা (পারমাণবিক সহ) এবং লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান অংশভাগ এরই আওতাধীন। একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থানুকূল্যে দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ শিল্প জাতীয়কৃত হয়েছে।
সব মিলিয়ে অবশ্য অর্থনীতির মূল অবস্থানগুলি আজও ব্যক্তিগত পজিরই আওতাধীন। ব্রিটিশ শিল্প ১৮০টি কোম্পানির করায়ত্ত এবং এদের ২০টি পুঁজিবাদী দুনিয়ার ১০০টি অতি প্রভাবশালী একচেটিয়াদের অন্তর্গত। তার মোটরগাড়ি, ইলেকট্রনিক, তৈল-রাসায়নিক এবং আরও কয়েকটি প্রধান শিল্প বিদেশী, বিশেষত মার্কিন পুঁজির প্রভাবাধীন।
মানুফ্যাকচারিংয়ের অত্যধিক প্রাধান্য ব্রিটিশ শিল্পের কাঠামোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মানুফ্যাকচারিং মোট জাতীয় উৎপাদের ৯০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করে। ব্রিটেনের খনিশিল্প অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, কারণ একমাত্র কয়লা (১৭,০০০ কোটি টন) ছাড়া অন্যান্য আকরিকের মজুদ তার নগণ্য।
অত্যুন্নত ইঞ্জিনিয়রিং দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প এবং মোট শিল্পপণ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের উৎপাদক। ব্রিটেনের রপ্তানিকৃত পণ্যমূল্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত এটি থেকেই অজিত। কিন্তু এসব ইঞ্জিনিয়রিং সামগ্রীর উচ্চমূল্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত শাখাগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ-ইঞ্জিনিয়রিং ও ইলেকট্রনিক শিল্পেই অগ্রগণ্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকই এদের প্রধান ক্রেতা। একই মন্ত্রকের ফরমাশের ভিত্তিতে বিমাননিমাণ ও ইঞ্জিনিয়রিংয়ের অন্যান্য শাখাগুলি কাজ করছে। পরিবহণ যন্ত্রাদি নির্মাণ অন্যতর উন্নত শিল্পশাখা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রিটেনের শিপইয়ার্ডের সামর্থ্য কম হওয়ার ফলে এগুলি অনেক কম। ফরমাশ পায় ও কমসংখ্যক জাহাজ তৈরি করে।
যথেষ্ট পরিমাণ আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহারকারী ব্রিটেনের ধাতুশিল্প বার্ষিক ২ কোটি টন পর্যন্ত ইস্পাত উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে সে প্রধান পুঁজিবাদী দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। মূলত আমদানিকৃত কাঁচামালের সাহায্যে সে তামা, সীসা, দস্তা এবং টিনও উৎপাদন করে থাকে।
রাসায়নিক শিল্প একটি নতুন ও অর্থনীতির দ্রুত বিকাশমান শাখা। ল্যাঙ্কাশায়ার, দক্ষিণ ওয়েলস এবং অন্যান্য অঞ্চলের কারখানাগুলিতে প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, রাসায়নিক আঁশ ও অন্যান্য সামগ্রী উৎপন্ন হয়।
১৯৭৫ সালের শুরু থেকে সে উত্তর সাগরে আবিষ্কৃত তেল ব্যবহার করছে। ১৯৮০ সালে সমুদ্রের তেলখনিগুলির তেল-উৎপাদন ৮ কোটি। টনে পৌছয় এবং ফলত দেশীয় কাঁচামালের সাহায্যে তৈলশোধনাগার গড়ে তোলার মাধ্যমে বৃটেনের তরল জ্বালানি ও তৈলরাসায়নিক উৎপাদের। চাহিদা মেটান সম্ভবপর হয়।
ব্রিটেনের বস্ত্রশিল্প প্রথম মহাযুদ্ধের পূর্বাবধি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম ছিল। সম্প্রতি এই শিল্পের উৎপাদন হ্রাস করছে।
আঞ্চলিক দিক থেকে তার শিল্প সারা দেশে যথেষ্ট সুসমভাবেই বিন্যস্ত থাকলেও শিল্পের ঘনীভবনে মাত্রিক তারতম্য রয়েছে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর লণ্ডন (জনসংখ্যা ৮০ লক্ষ) বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। যুক্তরাজ্যের এই রাজধানী একটি গুরুত্বপর্ণ শিল্প, বাণিজ্য ও ফিনান্স কেন্দ্র এবং বিশ্ববন্দর। শহরতলী সহ লণ্ডন দেশের শিল্পপণ্যের একচতুর্থাংশ উৎপাদন করে। এটি একাধারে প্রধান বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রও।
মিডল্যান্ড দেশের কয়লা, ধাতু ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনের প্রাচীনতম কেন্দ্র। বার্মিংহাম (পরিবহণ ও সামরিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন) ও কভেন্ট্রি (যন্ত্রনির্মাণে বিশেষীকৃত) এই অঞ্চলের শিল্পকেন্দ্র।
অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্রগুলির মধ্যে উল্লেখ্য: ল্যাঙ্কাশায়ারের মানচেস্টার (বস্ত্রশিল্প), ইয়র্কশায়ারের শেফিল্ড, উত্তর ইংলণ্ডের নিউকাসল ও স্কটল্যাণ্ডের গ্লাসগো। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্লাসগো (শহরতলী সহ জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ) একটি প্রধান জাহাজনির্মাণ ও ইঞ্জিনিয়রিং কেন্দ্র।
স্কটল্যাণ্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যাণ্ড শিল্পের দিক থেকে পশ্চাদপদ ও অবদমিত এলাকা। অর্থনৈতিক মন্দা সেখানকার ও সারা দেশের মেহনতিদের মারাত্মকভাবে আঘাত করে।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৭৮-১৮২।
২. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৩১-৩১; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।