ইরান সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত পুঁজিবাদ অনুসারী দেশ

ইরান সাম্রাজ্যবাদ বা পারস্য বা ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র (ইংরেজি: Islamic Republic of Iran) এশিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রবর্তী দেশ। ইরানের উত্তরে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাস্পিয়ান সাগর ও তুর্কমেনিস্তান; তার দক্ষিণ ভারত মহাসাগরধৌত। ট্রান্স-ইরানীয় রেলপথ কাস্পিয়ান সাগরতীরের বন্দর-শাহকে পারস্য উপসাগর তীরের বন্দর-শাহপুরের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে ভারত মহাসাগরে ইরানের প্রবেশপথ তৈরি হয়েছে। ইরান তার পশ্চিমের প্রতিবেশী তুরস্ক ও ইরাকের সঙ্গে পূর্বদিকের আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের যােগসূত্রস্বরূপ। সাধারণভাবে গুরত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক যােগাযােগ পথ বরাবর এই দেশের অবস্থান।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও বৈদেশিক পুঁজি সমর্থিত রাজতান্ত্রিক কঠোর নির্যাতনের চাপে ইরানের জনগণ দীর্ঘকাল জর্জরিত হয়েছে। রাজতন্ত্রবিরােধী ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে এই প্রতিক্রিয়াশীল শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে, যদিও সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী ইরানে পোক্ত থেকেই যায়। রাজতন্ত্রপন্থী ও তাদের সাম্রাজ্যবাদী সমর্থকেরা দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনে সর্বদাই বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিচারে ইরান একটি কৃষি-শিল্পসমৃদ্ধ দেশ। এর কর্মক্ষম জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই কৃষক। পশুপালনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে জমিচাষও আজ উন্নতিমুখী। শস্যফসল, প্রধানত গম, উৎপাদনের বাৎসরিক পরিমাণ এখন ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টন অবধি পৌছেছে। কিন্তু নিজ ফসল দিয়ে খাদ্য চাহিদা মেটাতে না পারায় ইরানকে বিদেশ থেকে গম আমদানি করতে হয়।

তৈলােৎপাদনই অর্থনীতির প্রধান শাখা। ইরানের তৈলমজুদের নির্ধারিত পরিমাণ ৯০০ কোটি টন এবং বার্ষিক উৎপাদনমাত্রা প্রায় ৩০ কোটি টন। কিন্তু ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ ও অন্যান্য ঘটনাবলীর ফলে এটি এখন ৭ কোটিতে পৌছেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইরানের প্রধান তৈলাঞ্চল খুজিস্তান যুদ্ধের ফলে বিধস্ত হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ইরানের তৈল পাইপযােগে উত্তরে তেহরানে পাঠানাে হয় এবং সেখান থেকে তা উত্তর-পূর্বে রেশাত ও পূর্বে মেশেদ-এ পৌছয়। এই তৈল উন্নত পুঁজিবাদী দেশে রপ্তানি করা হয়। মার্কিনীদের তৈল কোম্পানিগুলির নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা অতিবৃহৎ একচেটিয়াদের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইরানের তৈল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত। আজ দেশের সমগ্র তৈলশিপ রাষ্ট্রায়ত্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন:  ভারত পৃথিবীর বৃহৎ নয়া উপনিবেশিক পুঁজিবাদী শোষণমূলক রাষ্ট্র

ইরান সাম্রাজ্যবাদ-এর মােটরযােজন, ট্রাক্টর, তৈল-রাসায়নিক, সিমেন্ট ও ধাতুশিল্প কারখানা তৈরি করছে। সােভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে ইস্পাহানে একটি ধাতুশিল্প কারখানা তৈরি হয়েছে। সােভিয়েত ইউনিয়ন ও ইরান দুই দেশের সীমান্তবর্তী নদী আরাক্সে একযােগে জলবিদ্যুৎ স্টেশন তৈরি করেছিল। সােভিয়েত ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহের জন্য নির্মিত ট্রান্স-ইরানীয় গ্যাস পাইপলাইনটি চালু হয়ে গেছে। রেলপথ পুনর্নির্মাণ ও বৈদ্যুতীকরণ এবং কাস্পিয়ান সাগরের বন্দর গভীরকরণে সােভিয়েত ইউনিয়ন ইরানকে সাহায্য দিচ্ছিল।

সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে বর্ধমান সহযােগিতার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরানের অবস্থান মজবুত হয়েছে। বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিক বোমা নির্মাণ সংক্রান্ত জটিলতায় ইরান আরো শক্তিশালী হয়েছে।

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৩৯-১৪০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!