নরওয়ে ইউরোপের প্রত্যন্ত উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। তার উপকূল উচু পাহাড়চড়া ও অসংখ্যা ফিয়র্ড চিহ্নিত। উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের কল্যাণে নরওয়ের উপকূল সারা বছর তুষারমুক্ত থাকে। উপকূলীয় সংকীর্ণ একফালি নিম্নভূমিতেই দেশের সর্বাধিক সংখ্যক জনবসতি অবস্থিত। এই অঞ্চল মধ্যম ধরনের সামুদ্রিক আবহসেবিত ও বন্দরাকীর্ণ।
দেশের লোকসংখ্যার ৫০ শতাংশই গ্রামের মানুষ এবং নিম্নভূমির বিক্ষিপ্ত খামারেই এদের অধিকাংশের বসবাস। প্রতিবেশী অন্যান্য স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের মতো নরওয়ের শহরগুলিও ছোট। দেশের রাজধানী ওসলোর জনসংখ্যা ৫ লক্ষ।
নরওয়ে একটি শিল্প-কৃষিসমৃদ্ধ দেশ। অর্থনীতির বহু শক্তিব্যয়ী শিল্পশাখা, মাছশিকার, নৌপরিবহণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে দেশটি খুবই উন্নত।
রপ্তানির জন্য পণ্যোৎপাদক শিল্পগুলির মধ্যে কাঠ, মণ্ড ও কাগজ শিপ, তড়িৎ-ধাতুশিল্প, তড়িৎ-রাসায়নিক ও জাহাজনির্মাণ উল্লেখ্য। নরওয়ে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপরই প্রধানত নির্ভরশীল।
পার্বত্য নদীর জলবিদ্যুৎ এখানকার শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তম নরওয়ের জলবিদ্যুৎ সম্ভার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার চেয়েও বহত্তর। তার বিদ্যুৎ স্টেশনগুলিতে বছরে ৮০০০ কোটির বেশি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এবং সে শক্তিব্যয়ী উৎপাদনী শাখায় তা ব্যবহার করে। তার তড়িৎ-ধাতুশিল্প কারখানাগুলিতে অত্যুচ্চ মানের ইস্পাত, লৌহসঙ্কর এবং অ্যালুমিনিয়াম সহ লৌহেতর ধাতু উৎপন্ন হয়ে থাকে। তার ইঞ্জিনিয়রিং শিল্প ইলেকট্রো-টেকনিকাল ও রেডিও ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনে তথা জাহাজনির্মাণে বিশেষীকৃত। বাৎসরিক নির্মিত জাহাজের হিসাবে নরওয়ে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইতালিকে অতিক্রম করে গেছে।
দেশের পর্যাপ্ত কাঁচামালের ভিত্তিতে সেখানকার কাষ্ঠশিল্প, মণ্ড ও কাগজ তৈরির কারখানাগুলি প্রচুর পরিমাণ কাঠমণ্ড, সেলুলুজ, কাগজ ও কার্ডবোর্ড উৎপাদন করে। এসব উৎপন্নের, বিশেষত সেলুলুজ ও কাগজের একটা প্রধান অংশই রপ্তানি করা হয়।
নরওয়ে পৃথিবীর অন্যতম অতিবৃহৎ মৎস্যশিল্পের মালিক; দেশটি বার্ষিক উৎপাদন ৩০ লক্ষ টন। টিনবন্দী ও শুটকি মাছ তার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। পৃথিবীর তিমিশিপেরও প্রায় ৪০ ভাগ নরওয়ের দখলে।
বাণিজ্যিক নৌবহরের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ও লাইবেরিয়ার পর নরওয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম নৌশক্তি (বিদেশে ভাড়া-দেয়া জাহাজ সহ)। তার নৌবহরের মোট মালবহনক্ষমতা ২ কোটি ৭০ লক্ষ রেজিস্টার্ড টন। এই নৌবহরের ৯০ শতাংশই অন্যান্য দেশে ভাড়া খেটে থাকে। দেশের প্রধান শিপইয়ার্ডগুলি ওসলো, বাজেন ও অন্যান্য বন্দরে অবস্থিত।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৯৬-১৯৭।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।