ভূমিকা: লালগলা সাপ বা ওরোল সাপ কলুব্রিডি পরিবারের রাবডোফিস গণের একটি সাপের প্রজাতি। বাংলাদেশের সাপের তালিকায় এই গণে বাংলাদেশে রয়েছে ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে এই ২২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এবং আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটি হচ্ছে লালগলা সাপ।
বর্ণনা: লালগলা সাপের দেহ জলপাই-বাদামী রঙের বা সবুজাভ, গ্রীবা সিঁদুরের মতাে লাল। লেজ সহ সাপের দৈর্ঘ্য ৭৫ সেমি। লেজের দৈর্ঘ্য ১৮-২৫সেমি (IUCN-Bangladesh, 2000)। দেহের উপরিভাগ সবুজাভ বা জলপাই-বাদামী রঙের এবং অঙ্কীয়ভাগ হলদে, উদরের আঁইশের বাহিরের কিনারায় কালে ফোঁটা থাকে । অপ্রাপ্ত বয়স্ক সাপ হলুদ-প্রান্ত বিশিষ্ট কালাে ব্যান্ড বা কলার মাধ্যমে পৃথক।
এদের আঁইশের বিন্যাস: আঁইশ মজবুত, দেহের মধ্যভাগে ১৯ সারিতে সাজানাে থাকে। আন্তঃনাসিকার সামনের অংশ প্রশস্ত ও শঙ্কু আকৃতির। সুপ্রাল্যাবিয়াল ৮টি, ৩য় থেকে ৫মটি চোখের কাছাকাছি অবস্থিত; প্রিঅকুলার ১টি, পােষ্টঅকুলার ২টি বা ৩টি, টেম্পােরাল ২+২ ২+৩ এবং নি-পুচেছর আঁইশ জোড়ায় থাকে। অঙ্কীয় আঁইশের সংখ্যা ১৩৭-১৬৪, নিম্ন-পুচ্ছের আঁইশের সংখ্যা ৭২৭৯টি। নুকাল আঁইশ বড় নয় তবে নুকাল খাজ সুস্পষ্ট (Whitaker and Captain, 2004) I
স্বভাব ও আবাসস্থল: এই প্রজাতির সাপ বন-জঙ্গল, জলাভূমি এবং জলস্রোত-এর সন্নিকটে চারণভূমিতে বাস করে। এই প্রজাতির সাপ সমতল ভূমি ও পাহাড়ের ১৭৮০ মিটার উঁচুতে বাস করতে পারে। এরা দিনের বেলায় সক্রিয়, খাদ্য হিসেবে কোলা ব্যাঙ, সােনাব্যাঙ, টিকটিকি এবং ছােট স্তণ্যপায়ী গ্রহণ করে। এরা উত্তেজিত হলে মাথা ও গ্রীবা উঠাতে পারে এবং ফনা (‘cobra mimic’) তুলতে পারে। এদের সত্যিকার অর্থে কোনাে বিষদাঁত নেই তবে পিছনের দাঁত বড় ও খাজবিহীন। এদের লালারস বিষাক্ত। এদের প্রজননকাল জুন-জুলাই। এরা ৫-১৭টি ডিম পাড়ে (Whitaker and Captain, 2004) |
বিস্তার: ভারত, ময়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বােডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া (Whitaker and Captain, 2004)। বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব অংশের মিশ্রিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।
অবস্থান: লালগলা সাপ বিশ্বে বিপদমুক্ত।[২] এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে সংকটাপন্ন (IUCN-Bangladesh, 2003)
মন্তব্য: এই সাপের কামড়ে তীব্র বিষাক্ত লক্ষণ দেখা দেয়।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: লালগলা সাপ, হংকংয়ের লান্টাউ দ্বীপ থেকে তোলা। আলোকচিত্র: Thomas Brown, cc-by-2.0
তথ্যসূত্র:
১. এম কামরুজ্জামান, জিয়া উদ্দিন আহমেদ (প্র. সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ, খণ্ড: ২৫ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৫৮।
২. “Red-necked Keelback”, https://www.iucnredlist.org/species/192116/2042128, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।