নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ (জন্ম : ১৪ এপ্রিল, ১৯১২ – মৃত্যু ৪ আগস্ট ১৯৯৪) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী। বিপ্লবী মৃণাল কান্তি ঘোষ চৌধুরীর সংস্পর্শে যুগান্তর দলে যোগ দেন। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে তিনি বহুবার গ্রেপ্তার হন, কারাবরণ করেন এবং শাস্তি ভোগ করেন। অস্ত্রসহ পলাতক জীবন কাটিয়েছেন বহু বছর।
নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ ১৯১২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের দিনাজপুর জেলার বা বর্তমান বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালুবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দুর্গাদাস ঘোষ।
পুলিস ফাইল অনুযায়ী জানা যায় দুর্ধর্ষ বিপ্লবী নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ ১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর অস্ত্রসহ দিনাজপুরের পতিরামে গ্রেপ্তার হন। বিচারে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১১, (আইপিসি) অনুসারে ঐ বছরেরই ২৩ ডিসেম্বর তাঁর তিন মাসের কারাবাস হয়। সাজা শেষ হলেও তিনি ছাড়া পাননি। পুনরায় ১৯৩৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ড অ্যাক্ট অনুযায়ী বিচারে তাঁর ৫ বছরের সাজা ঘোষণা হয়। ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজরা নানা ফন্দি ফিকির করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিপ্লবী নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষকে বারবার জেলে ঢুকিয়েছে। ১৯৩৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা হল ১২০ বিআইপিসি ধারা, সাথে জুড়ে দেয়া হলো ৩৯৫ ধারাও। ১৯৩৬ সালের ২৩ মার্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হল নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষকে।
ইংরেজ শাসকের মহাশত্রু নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে আন্দামানে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। আন্দামান সেলুলার জেলের গারদে দিন গুনতে থাকেন তিনি। সেখানে গিয়েও বন্দীদের সুব্যবস্থার দাবিতে সংগঠিত দ্বিতীয় দফার আন্দোলনে অংশ নিয়ে নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ ১৯৩৭ সালে ৩৭ দিন অনশন করেন। দীর্ঘ পনের বছরের অধিক জেলে কাটানোর পরে তিনি মুক্তি পান।
নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ ১৯৪৭-এর পর জলপাইগুড়ি জেলায় চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি পাণ্ডাপাড়ায় বসবাসের জন্য প্লট পান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি সংসার জীবনে প্রবেশ করেন এবং সংসার প্রতিপালনে মনোনিবেশ করেন। তাঁর তিন পুত্র রয়েছে। ১৯৯৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্র:
১. নৃপেন্দ্রনাথ পাল ও অন্যান্য সম্পাদিত, ”উত্তরবঙ্গের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনালেখ্য”, প্রথম খণ্ড, ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটি, কোচবিহার, প্রথম প্রকাশ মে, ২০১৪, পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।