জীবন এবং প্রকৃতির ক্ষেত্রে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং বস্তুবাদের বিরোধীতা হিসাবে ‘আকষ্মিক বিবর্তনবাদ’ বা ‘আকষ্মিক বিকাম’ (ইংরেজি: Accidental Evoluation)- এর উদ্ভব দেখা যায়। এ মতের প্রধান ব্যাখ্যাদাতাদের মধ্যে স্যামুয়েল আলেকজাণ্ডার, এস. লয়েড মরগান, সি. ডি. ব্রড প্রমুখ দার্শনিকের নাম উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত দার্শনিককে ‘নব বাস্তববাদী’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এ ভাবধারা মূলত ভাববাদী দর্শনের প্রকারবিশেষ।
চার্লস ডারউইন তাঁর ‘অরিজিন অব স্পিসিস’ গ্রন্থে বলেছিলেন, জীবন ও প্রকৃতির ইতিহাস হচ্ছে ক্রমবিকাশের ইতিহাস। বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে জীবনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্ত প্রকার প্রাণীর বিকাশ ঘটেছে। জীবনের বিবর্তনে অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক-শূন্য কোনো নতুনের আবির্ভাব সম্ভব নয়। ডারউইনের এই মত বস্তুবাদী মত। উল্লিখিত দার্শনিকগণ বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বকে জীবনের ব্যাখ্যায় যথেষ্ট মনে করেন না। এঁদের মতে জীবনের বিকাশের ইতিহাসে এমন সমস্ত পর্যায় এবং সৃষ্টির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, যাকে বিবর্তনবাদের ধারাবাহিকতা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। সৃষ্টির ধারা অনির্দিষ্ট। সে ধারার অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ কোনো নির্দিষ্ট করা যায় না। সৃষ্টি অগ্রসর হয় আকষ্মিক নতুন সত্তার উদ্ভাবের মাধ্যমে।
সৃষ্টির অগ্রগতির বৈশিষ্ট্য ক্রমবিকাশ নয়, আকষ্মিক উদ্ভব এবং উৎক্রমণ। জগতের কোনো নতুন অস্তিত্বের সঙ্গে অতীতের কোনো অস্তিত্বের সাদৃশ্য নাই। জীবনের বিকাশের এই ব্যাখ্যা আকষ্মিক বিবর্তনবাদের একটি দিক। এ ছাড়া সমগ্র অস্তিত্বের নতুনতর ব্যাখ্যাদানের চেষ্টাও এই দর্শনের অনুসারীগণ করেছেন। এই দর্শনের অন্যতম প্রবক্তা আলেকজাণ্ডার তাঁর ‘স্পেস, টাইম এণ্ড ডিটি’ গ্রন্থে এরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, অস্তিত্বের মূল হচ্ছে ‘স্থান-কাল’ এই ধারণা। ‘স্থান-কাল’ ধারণাই সমস্ত অস্তিত্বের সৃষ্টি করেছে; বস্তু বা অস্তিত্ব থেকে ‘স্থান-কাল’ ধারণার সৃষ্টি হয় নি। মর্গান মনে করেন, জগতের অস্তিত্ব মাত্রই সপ্রাণ। প্রাণ ব্যতীত আদৌ কোন বস্তু বা অস্তিত্ব নাই।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ২৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।