ঐতিহাসিকতাবাদ (ইংরেজি: Historicism) হচ্ছে ইতিহাসের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বস্তু বা বিষয়ের উদ্ভব এবং বিকাশের অনুধাবন। ঐতিহাসিকতাবাদ বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি মৌলিক পদ্ধতি। জগৎ ও সমাজের প্রশ্নে আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ছিল দার্শনিক কল্পনা ও বিশ্লেষণ। এ পদ্ধতিতে সমস্যা মাত্রকে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন মনে করা হতো। ফলে, বাস্তব অবস্থা, অতীত ঘটনা ইত্যাদি নিরপেক্ষভাবে দার্শনিকগণ যে-কোন সমস্যার রহস্যোদঘাটন এবং সমাধান সম্ভব বলে মনে করতেন। অনেকে ইতিহাসকে মনে করতেন একটা চক্রের আবর্তন। এরূপ আবর্তনে সমাজে এবং জগতে নতুনের কোনো বিকাশ সম্ভব বলে মনে করা হয় না। চক্রের আবর্তনে একই ঘটনা, সমস্যা বা বিষয় বারবার আবির্ভূত হয়।
ইতিহাস ও জগতের এই দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত সমাজ ও বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের বিকাশকে আড়ষ্ট করে রেখেছিল। ঐতিহাসিকতাবাদ দার্শনিক সেই ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করে সমাজ ও ইতিহাসের সর্বত্র আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোনো বস্তু বা ঘটনাই কালনিরপেক্ষ নয়। তার বর্তমান চরিত্র নিদিষ্ট হচ্ছে তার অতীত উদ্ভব এবং বিকাশ দ্বারা। তার ভবিষ্যৎও নির্দিষ্ট হবে সেই বিকাশের প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত বর্তমান দ্বারা।
সমাজের কোনো অবস্থারই হুবহু পুনরাবর্তন সম্ভব নয়। ইতিহাসকে সদা নতুন দিগন্তে অগ্রসরমান রথ বলে মনে করা চলে, তাকে শুধু চক্র বলে মনে করা চলে না। অতীতই ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে; কোনো অতীত ভবিষ্যৎ ফিরে আসতে পারে না। জীবনের জন্ম ও বিকাশকে চার্লস ডারউইন ঐতিহাসিকতার তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করে জীববিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের বিকাশকে অবারিত করে দিয়েছেন। ঐতিহাসিকতাবাদের তত্ত্ব প্রয়োগ করে মার্কসবাদ মানুসের সামাজকি জীবনের বিকাশের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তৈরি করেছে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৯৮-১৯৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।