ফুল সংরক্ষণ করতে হলে গাছ থেকে ফুল তুলতে হবে সূর্যের আলো বা রৌদ্র লাগার আগেই; এক্ষেত্রে ধারালো কাঁচি দিয়ে বোঁটা কাটতে হবে। হাতের আঙুল দিয়ে বোঁটা ছিঁড়ে নিলে ফুলের ক্ষতি হয়। যেকোনো ফুল বেশিক্ষণ তাজা থাকে না। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ফুল সংরক্ষণ করতে হয়। ফুল গাছে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ তার রং, সুবাস, সৌন্দর্য ঠিক থাকে।
১. ফুলের ডাঁটার নিচের অংশ যতটুকু ফুলদানিতে রাখা হবে সেই অংশের সব পাতা কেটে ফেলে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ফুলদানির পানি যাতে ময়লা ও টক না হয়, সেজন্য একদিন পর পর ফুলদানির পানি বদলে নতুন পানি দিতে হবে ।
২. পানি পাল্টানর সময় ডাঁটার নিচ অংশ থেকে কিছুটা তেরচা করে কেটে দিতে হবে । ফাঁপা ডাঁটার বেলায় মাথা কাটা প্রয়োজন নেই । ফুলদানির পানিতে কয়েক টুকরা অংগার রাখলে পানি পরিষ্কার থাকবে এবং ঘন ঘন পানি বদলানোর প্রয়োজন হবে না ।
৩. ফুলদানির মুখ যত প্রশস্থ হয় ততই ভালো এতে করে ফুলের ডাটা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে না। তবে ফুলদানিতে একসাথে অনেক ফুল জড়ো করে বা ঠাসাঠাসি করে না রাখাই ভালো ।
৪. নেতিয়ে পড়া ফুলের ডাঁটার নিচের সামান্য অংশ কেটে ডাঁটাসহ লম্বা ফুলদানিতে ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা অন্ধকার স্থানে রেখে দিলে অনেক সময় ওই ফুল আবার তাজা হয়ে উঠবে পারে।
৫. এক লিটার পানিতে এক চা চামচ চিনি গুলে তার মধ্যে যদি জার্বেরা, গ্লাডিওলাস, ক্যালেন্ডুলা, লিলিয়াম, ডেইজি, রজনীগন্ধা, টিউলিপ এসব ফুলের বোঁটা ডুবিয়ে রাখা হলে তাহলে ফুল স্বাভাবিক অবস্থা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি তাজা রাখা সম্ভব।
এছাড়াও ফুল বেশিক্ষণ তাজা রাখতে হলে ফুলদানিতে পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন একটু করে বোঁটা কাটতে হবে।
৬. পপিজাতীয় ফুলের ডাঁটা ভেতরে ফাঁপা থাকে। কাটলে ডাঁটা থেকে কষ বা রসজাতীয় পদার্থ বের হয়। তাই সাথে সাথে ওই ফুল উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পপিজাতীয় ফুল কাটার সাথে সাথে ডাঁটার এক ইঞ্চি পরিমাণ ফুটন্ত পানিতে এক মিনিট ডুবিয়ে রাখলে অথবা কাটা স্থানটি আগুনে পুড়ে নিলে ফুল অনেকদিন তাজা থাকবে ।
৭. গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি যেসব ফুলের শক্ত ডাঁটা তার কাটা মাথাটি থেতলিয়ে ২ চামচ চিনি বা ফিটকারি গোলা পানি ফুলদানিতে রেখে তাতে ফুলের ডাঁটা ডুবিয়ে রাখলে ফুলগুলো অনেক সময় পর্যন্ত তাজা থাকবে। এজন্য ফুলের গোড়ার পাতা বা কাঁটা ফেলে দিতে হবে।
৮. ঘরের মধ্যে ফুলদানি কখনো ফ্যানের নিচে রাখা উচিত নয়। ফুলে হওয়া বাতাস অথবা রৌদ্র না লাগলে তিন বা চার দিন পর্যন্ত তাজা রাখা যায়।
৯. সদ্য তোলা শুষ্ক ফুলের পাঁপড়ির গায়ে সেলিসাইলিক এসিডের গুঁড়া ছিটিয়ে ব্রাশের সাহায্যে ভালোভাবে ছড়িয়ে শুকানোর পর ঝেড়ে নিয়ে রাখলে ফুলের লালচে আভা পর্যন্ত রক্ষা করা যেতে পারে ।
১০. বন্ধু –বান্ধব বা কোনো অনুষ্ঠানে গিফট বা উপহারস্বরূপ ফুল পাঠাতে হলে ফুল প্যাক করে পাঠানো ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় কাঠের বা কাগজের মোটা বাক্সে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পাঠালে ফুল তাজা থাকবে এবং কোন আঘাতপ্রাপ্ত বা থেতলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা এবং ফুলের পাঁপড়ি ঝড়ে পড়বে না। ফুলের তোড়া তৈরি করেও ফুল পাঠানো যেতে পারে। এতে ফুল অনেকদিন তাজা থাকে। ফুল কাটার পর বোঁটায় পাতলা কাপড় জড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা সবচেয়ে ভালো এবং ফুল তাজা রাখার প্রধান ও সহজ পদ্ধতি। ভিজা অবস্থায় কখনো ফুল প্যাক করা উচিত নয় এতে ফুল পঁচে যেতে পারে। ফুলের বোঁটায় মোম ঘষে প্যাকেট করা উচিত।
তথ্যসূত্রঃ
১. বালাইলাল জানা: ক্যাকটাস ও ফুলচাষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তকপর্ষৎ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৮৮, পৃষ্ঠা, ১৪৬-১৪৭।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।