তেলশুর দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দীর্ঘ গোলাকৃতি পত্রমোচী বৃক্ষ

ভূমিকা: তেলশুর (বৈজ্ঞানিক নাম: Hopea odorata)  Dipterocarpaceae  পরিবারের Hopea গণের পত্রমোচী বৃক্ষ। এই গাছ বাংলাদেশে জন্মে। এছাড়াও কম্বোডিয়া, ভারত, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং ভিয়েতনাম প্রচুর জন্মে থাকে। এই গাছের কাঠ খুব মূল্যবান।

বৈজ্ঞানিক নাম: Hopea odorata.

সমনাম: Hopea vasta Wall. nom. inval, Hopea wightiana Miq. ex Dyer nom. inval.

ইংরেজি নাম: জানা নেই , স্থানীয় নাম: তেলশুর।

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; অবিন্যাসিত: Rosids; বর্গ: Malvales ; পরিবার: Dipterocarpaceae; গণ: Hopea; প্রজাতি: Hopea odorata;

তেলশুর-এর বিবরণ:

তেলশুরের বলিষ্ঠ উন্নত ভঙ্গি দেখতে শালেরই প্রতিচ্ছবি মতো এবং এই তুলনা একেবারেই কাল্পনিক নয়। তেলশুর ও শাল সমগোত্রীয়। ঢাকা শহরে শালবন কিংবা শালবীথি নেই বললেই চলে। তাই শহরবাসীর পক্ষে তেলশুর ও শালের পার্থক্য নির্ণয় কিছুটা কঠিন। তেলশুরের কাণ্ড সরল, উন্নত, দীর্ঘ, গোলাকৃতি। এদের বাকল গাঢ়-ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং অজস্র ফাটলে রুক্ষ, অমসৃণ। বহু উচু পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়, প্রায় ভূসমান্তরালে প্রসারিত শাখায় ডিম্বাকৃতি ঘন-সবুজ পাতাগুলি সরু, দীর্ঘ প্রশাখান্তে একান্তরে ঘনবিন্যস্ত। তাই তেলশুর ছায়ানিবিড়। সব মিলিয়ে ঢাকার পথতরুর মধ্যে সে বিশিষ্ট এবং সৌন্দর্যেও আকর্ষণীয়। গাছটি পত্রমোচী।

শীতের শুরুতে গাছের পাতা ঝরে পড়ে শীতের উদাসী ব্যঞ্জনার সঙ্গে যেন একাত্ম হয়ে ওঠে। পরিপূর্ণ নিঃস্ব, রিক্ত এই তরুশাখায় বসন্তের শেষে হঠাৎ সবুজের ঢল আসে, উদ্দীপ্ত যৌবন অবারিত হয় সারা দেহে। সমস্ত গাছ জুড়ে প্রাণবন্ত কচি সবুজের সেই ঔজ্জ্বল্য এক অনুপম দৃশ্য। তারপরই আসে প্রস্ফুটন। ফুল খুব ছোট হলেও মঞ্জরির উপচে-পড়া প্রাচুর্য এবং স্নান-হলুদ বর্ণ-নির্ঝর যথেষ্টই আকর্ষণীয়। ফুল ধুনা-গন্ধি বিধায় পুষ্পিত তেলশুর বীথির সান্নিধ্য লোভনীয়। বছরে কয়েকবার ফুল ফুটলেও প্রথম প্রস্ফুটন গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাতা ও ফুলের চেয়ে ফলের সৌন্দর্য কিছুমাত্র কম। ফুলের মতো অজস্র এই ফলেরা প্রথমে সবুজ এবং পরে বাদামী রঙে সারা গাছ ছেয়ে ফেলে। স্বল্পদিনের জন্য হলেও পাতার রং তখন চাপা পড়ে যায় পরিপক্ব ফলের শোভায়।

আরো পড়ুন:  গামার বা গামারি গাছের ভেষজ গুণাগুণ

বর্ষার শুরুতে ফলভারে আনত এ গাছের দৃশ্য যেমন আকর্ষণীয় তেমনি দুষ্প্রাপ্যও। তেলশুরের ফল অবশ্য খুব ছোট, প্রায় গোল কিংবা দাড়িম্বাকৃতি এবং লম্বা-চওড়া দুটি পাখাযুক্ত। পক্ষল ফলমাত্রেই বায়ুবাহী এবং বীজ ছড়ানোর পক্ষে অভিযোজনাটি খুবই ফলপ্রসূ। বীজ সহজেই অংকুরিত হয় এবং বৃদ্ধিও খুব মন্থর নয়।

মূল আবাস মায়ানমারে হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া তেলশুরের অনুকূল। ঢাকায় বহু স্থানে পথপাশে নতুন গাছ চোখে পড়ে। কাঠ মূল্যবান, দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী এবং নিকটাত্মীয় গর্জন ও শালের মতো এ থেকেও ধূনা নিষ্কাশন সম্ভব। হোপিয়া হলও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক জন হোপের স্মরণিক। ওডরেটা অর্থ সুগন্ধি। ফুলের ধূনাগন্ধের জন্য এই নামকরণ। পূর্বস্থানে এখনও আছে! শহরে যত্রতন্ত্র চোখে পড়ে।

তথ্যসূত্র:

১. দ্বিজেন শর্মা শ্যামলী
নিসর্গ
প্রথম সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ ঢাকা, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা ৪৬-৪৮।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Silviculture

Leave a Comment

error: Content is protected !!