রাধাচূড়া বা লাল-রাধাচূড়া চাষযোগ্য আলংকারিক ও ঔষধি উদ্ভিদ

ভূমিকা: রাধাচূড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Caesalpinia pulcherrima, ইংরেজি: Peacock Flower, Paradise Flower, Barbados Pride, Flower-fence, Dwarf Poinciana.) হচ্ছে Fabaceae পরিবারের Caesalpinia গণের  একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রজাতি।  সারাবছরে কয়েকবার ফুল ফোটে। বসন্তকালে ছাটাই করতে হয়। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। [১]

বৈজ্ঞানিক নাম: Caesalpinia pulcherrima (L.) Swartz, Obs. Bot. Ind. Occ.: 166 (1791).

সমনাম: Poinciana pulcherrima L. (1753).

ইংরেজি নাম:  Peacock Flower, Paradise Flower, Barbados Pride, Flower-fence, Dwarf Poinciana.

স্থানীয় নাম: বাংলাদেশে রাধাচূড়া নামে পরিচিত, কখনও ছোট কৃষ্ণচূড়া নামেও ডাকা হয়। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots বর্গ: Fabales   পরিবার: Fabaceae গণ: Caesalpinia  প্রজাতি: Caesalpinia pulcherrima

রাধাচূড়া গাছের বর্ণনা:

রাধাচূড়া  কাঁটাযুক্ত বাহারি গুল্ম, ৩ থেকে ৬ মিটার উচু, শাখা প্রশাখা মসৃণ চকচকে, গাত্র কন্টক স্বল্প ছড়ান। পত্র দ্বিপক্ষল। যৌগিক, উপপত্র ও উপপত্রিকা যুক্ত, ৪৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রক অক্ষ ১০৪০ সেমি, পক্ষ ৬১২ জোড়া, প্রতিমুখ, ৮-৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রক ৫-১৩ জোড়া, ০.৫-৩.৫ x 0.8- ২.৩ সেমি, দীর্ঘায়ত, গোলাকার বা খাতাগ্র।

পুষ্পবন্যাস অক্ষীয় বা শীর্ষীয় রেসিম, ৪০ , সেমি পর্যন্ত লম্বা । পুষ্প বিভিন্ন বর্ণযুক্ত, কমলা হলুদ, লাল। ব থেকে গোলাপী লাল, প্রায়শ দলবৃন্ত যুক্ত, দলমন্ডলের মধ্যাংশ গাঢ় লাল, লাল বা স্বর্নালু লাল, আড়াআড়ি ৩ সেমি, ঐ বৃন্ত ৭.০-১০.০ সেমি লম্বা, উপরের দিকে সন্ধিযুক্ত, , বর্তুলাকার, প্রায়শ প্রান্ত খন্ডিত, বিভিন্ন বর্ণযুক্ত, লাল বা স্বর্নালু, পাপড়ির মধ্যাংশ গাঢ় লাল বা স্বর্ণালু লাল, প্রান্ত সরু লাল রেখা যুক্ত।

পুংকেশর ১০ টি, মুক্ত, পুংদন্ড ৭.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, গাঢ় লাল, বহির্গামী, পুরু, মূলীয় অংশ সাদা রোমশ, পরাগধানী সর্বমুখ। গর্ভাশয় খাটো গাইনোফোরের ওপর সন্নিবিষ্ট, রোম বিহীন, চাপা, গর্ভদন্ড লম্বা, হলদে লাল। ফল পড, ৫.০-৭.৫ x ১.৮-২.০ সেমি, গাঢ় লাল থেকে গাঢ় বাদামী, দীর্ঘায়ত, চাপা, রোমশ, ঠোটযুক্ত, বিদারী, বীজ বাদামী, বিডিম্বাকার, ১ সেমি লম্বা।

বংশ বিস্তার ও চাষবাস: ফুল ও ফল ধারণ প্রায় সারা বর্ষব্যাপী কিন্তু বেশি হয় বসন্তে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এবং শরতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-নভেম্বর। বীজ ও শাখা কলমে বংশ বিস্তার করা হয়।  শুষ্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল স্থান, সাধারণত উদ্যান, পার্ক এবং ব্যক্তিগত বাসভবন ও তৎসংলগ্ন জমি।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Atchison, 1951).

বিস্তৃতি:

পশ্চিম আমেরিকায় আদিনিবাস। বর্তমানে সব উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র রোপণ করা হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভেষজ গুণ:

রাধাচূড়া বাহারি গাছ। রূপে উদ্যান, পার্ক, গৃহাঙ্গন, রাস্তার সংযোগ স্থলে। যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রনের জন্য তৈরি দ্বীপ, দুই রাস্তার মধ্যবর্তী ভূখন্ড বীথি, ব্যক্তিগত বাসভবন সংলগ্ন জমি ইত্যাদিতে রোপণ করা হয়। পত্র, পুষ্প ও বীজ ভারতীয় ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পিষ্ট মূল শিশুদের মাংশ পেশীর আক্ষেপ নিরাময়ে কার্যকরী। ফুল গরম পানিতে ঢেলে সেই পানি থেকে উত্থিত বাষ্প নাকমুখ দ্বারা গ্রহণ করা হলে পুরাতন সর্দি, কাশি, হাঁপানি ও ম্যালেরিয়া জ্বর নিরাময় হয়।

পত্ররস জ্বর নিবারনে ব্যবহৃত (Bor and Raizada, 1954)। বাকলে গর্ভপাত ঘটাবার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ফল থেকে ট্যানিন ও ফুল থেকে লাল রং তৈরি করা হয় (Chakraverty and jain, 1984)।  ফিলিপাইনে পত্র রেচক ও উদ্দীপক হিসেবে এবং বাকল সৌন্দর্য বর্ধক রূপে ব্যবহার করা হয়। উপরন্তু সে দেশের অধিবাসীরা পুষ্পের গরম বাষ্প ম্যালেরিয়া হাঁপানি, শ্বাসনালীর প্রদাহে ব্যবহার করে থাকে। (Caius, 1989)।।

রাধাচূড়া গাছের অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রাধাচূড়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত না হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রাধাচূড়া সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]

তথ্যসূত্র:

১.  দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৫৯, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

২. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশে পুষ্পশিল্পের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে

Leave a Comment

error: Content is protected !!