নামবাদ কাকে বলে

ইউরোপের মধ্যযুগীয় দর্শনে সাধারণ ভাবকে বিশেষ বস্তুর নাম বলে আখ্যায়িত করার নাম নামবাদ বা নামসর্বস্বতাবাদ (ইংরেজি: Nominalism) বলে পরিচিত। রাম, রহিম, সক্রেটিস বিশেষ বিশেষ মানুষের নাম। কিন্তু মানুষ বলতে কি বুঝাবে, এটি দর্শনের একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নে দুটি অভিমতের প্রকাশ দেখা যায়। একটি হচ্ছে বাস্তববাদ। অর্থাৎ বিশেষ বস্তুর যেমন অস্তিত্ব আছে, তেমনি সাধারণ ভাবেরও বাস্তব অস্তিত্ব আছে। এর বিপরীত নাম হচ্ছে নামবাদ।

নামবাদের মতে সাধারণ ভাবের কোনো নির্বিশেষ অস্তিত্ব নেই। সাধারণ ভাবও একটি বিশেষ অস্তিত্ব। রহিম যেমন একটি বিশেষ অস্তিত্বের নাম তেমনি মানুষও অপর একটি বিশেষ অস্তিত্বের নাম। নামবাদকে প্রাথমিক বস্তুবাদ বলে বিবেচনা করা যায়। কেননা নামবাদের প্রতিপক্ষে ছিল ভাববাদ। অর্থাৎ সবকিছুই ভাব। ভাবের প্রতিনিধিত্বমূলক কোনো বস্তু আছে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই অভিমতের চরম প্রতিক্রিয়া হিসেবে নামবাদ বিশেষ অবিশেষ সব ভাবকে বিশেষ বস্তুর অস্তিত্ববাচক নাম বলে আখ্যায়িত করে।

পরবর্তীকালের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নামবাদের এই রকম নামসর্বস্বতাকে অস্বীকার করে। দ্বান্দ্বিক বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের মতে মানুষ বিশেষের সঙ্গে বিশেষের তুলনার ভিত্তিতে সাধারণ চরিত্র বা ভাব আবিষ্কারের ক্ষমতা রাখে। সাধারণভাবে অস্তিত্বহীন নয়। কিন্তু তার অস্তিত্ব বিশেষ অস্তিত্ব নয়। বিশেষের মধ্যেই নির্বিশেষ ভাবের অস্তিত্ব।

‘মানুষ’ বলতে আমরা যে সকল গুণ বিভিন্ন বিশেষ মানুষ পর্যবেক্ষণ করে আবিষ্কার করেছি সে সকল গুণের কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব যেমন বুঝায় না, তেমনি মানুষ বলতে রাম, রহিম, সক্রেটিস প্রভৃতি বিশেষ মানুষের মধ্যে সে সকল গুণের যে বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে তাও বুঝায়। একাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর নামবাদীদের মধ্যে ডানস স্কোটাস এবং অকামের উইলিয়ামের নাম উল্লেখযোগ্য। নামবাদের ভাববাদী ব্যাখ্যা দেখা যায় পরবর্তীকালে বার্কলে এবং হিউমের দর্শনে এবং সাম্প্রতিককালের শব্দতত্ত্বের মধ্যে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৯৫।

আরো পড়ুন:  চরমপন্থা বা চরমপন্থাবাদ হচ্ছে কোনো কিছুকে সীমা বা চরম দিকে ধাবিত করা

Leave a Comment

error: Content is protected !!