তত্ত্ববিদ্যা বা পরাবিদ্যা হচ্ছে (ইংরেজি: Ontology) দর্শনের সত্তা সম্পর্কিত আলোচনা যা দর্শনের বুনিয়াদি প্রশ্নের প্রথম দিকে আলোচিত হয়।[১] নির্দিষ্ট কোনো অস্তিত্বকে আমরা বিশেষ বলি বলটি, বৃক্ষটি, লোকটি বিশেষ বস্তু। কিন্তু বিশেষই মূল না বিশেষের পিছনে নির্বিশেষ কোনো সত্তা আছে, এ চিন্তা দার্শনিকদের আদিকালের চিন্তা। এরিস্টটল এই প্রশ্নের জবাবে নির্বিশেষ অস্তিত্ব বা সত্তার তত্ত্ব তৈরি করেন। তাঁর মতে বিশেষ হচ্ছে খন্ডিত সত্তা। সমস্ত বিশেষ নিয়ে অখন্ড নির্বিশেষ সত্তা। কিন্তু তাই বলে বিশেষের সমাহার মাত্র নির্বিশেষ নয়। পরন্তু নির্বিশেষের প্রকাশেই বিশেষ এবং বৈচিত্র।
বিশেষ নির্বিশেষের প্রশ্নে প্লেটো, এ্যারিস্টটল পূর্বে এরূপ অভিমত প্রকাশ করেন যে জগতের বিশেষ বিশেষ বস্তু পরিপূর্ণ সত্তা নয়। পরিপূর্ণ সত্তা বিশেষকে অতিক্রম করে বিরাজমান। নির্বিশেষের সাথে বিশেষের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অস্তিত্বের যথার্থতার পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়। অর্থাৎ নির্বিশেষ হচ্ছে বিশেষের নিয়ামক। প্লেটো-এ্যরিস্টটলের নির্বিশেষের এই তত্ত্ব পরাদর্শন বা পরাবিদ্যা বলে অভিহিত হয়।
ইউরোপের মধ্যযুগের ধর্মীয় দর্শন প্লেটো এ্যরিস্টটলের এই তত্ত্বকে ব্যবহার করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করে। সেন্ট টমাস একুইনাসের মধ্যে এই ব্যাখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। ষোড়শ শতকের পর থেকে নির্বিশেষ অস্তিত্বের তত্ত্ব দ্বারা ভাববাদী দার্শনিকগণ বস্তুমাত্রকেই অস্তিত্বহীন ও ভাব বলে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন। এই প্রয়াসের চরম দেখা যায় জার্মান দার্শনিক উলফের রচনায়। উলফের ব্যাখ্যায় ‘অস্তিত্ব’ ‘বাস্তবতা’ ‘সংখ্যা’ ‘কারণ’-এই সমস্ত ভাবের সঙ্গে বস্তুর কোনো সম্পর্ক নেই। হবস, স্পিনাজো, লক এবং অষ্টাদশ শতকের ফরাসি বস্তুবাদী দার্শনিকগণ অস্তিত্ত্বের এই ভাববাদী ব্যাখ্যাকে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে খন্ডন করেন।
তথ্যসূত্র:
১. গ. কিরিলেঙ্কো ও ল. করশুনোভা, দর্শন কী, প্রফুল্ল রায় অনূ., প্রগতি প্রকাশন, মস্কো ১৯৮৫, পৃষ্ঠা ২৬৪
২. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩০০।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।