আতা বা নোনা আতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Annona reticulata, ইংরেজি নাম: Bullock’s Heart.) হচ্ছে এনোনাসি পরিবারের সপুষ্পক একটি উদ্ভিদ। গাছটি মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট গাছ। আবহাওয়ার গুণে কোথাও বিশ ফুট, আবার কোথাও ৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
আতা বা নোনা আতার পাতা পাঁচ থেকে আট ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা এবং দেড় থেকে দু’ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। গাছে ফুল ২ থেকে ৩টি এক একসাথে ফোটে। ফুলের পাপড়ি থাকে তিনটি। ফল দেখতে গোলাকার, তবে লম্বা ধরনের। পাকা অবস্থায় ফলের রং পীতের আভাযুক্ত বা হালকা লালবর্ণ। গাছে ফুল ফোটে গরমকালে আর ফল ধরতে শুরু করে শরৎকালে।
বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার:
আতা বা নোনা আতা বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার করা হয়। এটি উকুন হলে, ফোঁড়া বা বিষফোঁড়া হলে, ক্রিমি হলে, রক্ত আমাশয় হলে এবং গর্ভপাতে এবং পশুদের ক্ষতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজে লাগানো হয়। নোনা আতার বীজ, পাতা, শুকনো ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উকুন হলে:
নোনা ফলের শুকনা বীজ ভালোভাবে গুড়া করে ১০ গ্রাম (মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০ গ্রাম) পানির সাথে গুলে (পানির পরিমাণ হবে এক কাপ) মাথায় দিতে হবে গোসল করতে যাবার তিন ঘণ্টা আগে; তাহলে উকুন দূর হবে। তবে মনে রাখতে হবে, নোনা বীজের শাঁস খুবই বিষাক্ত। কাজেই মাথায় প্রয়োগ করার সময় যথেষ্ট সাবধান হতে হবে।
আরো পড়ুন: আতা বা নোনা আতা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফলদ গাছ
ফোড়া ও বিষ ফেঁড়ায়:
উভয় ক্ষেত্রেই নোনা গাছের কচি টাটকা পাতা (২০ থেকে ৩০টি বেটে তা বিষ ফোঁড়ায় প্রলেপ দিলে খুব তাড়াতাড়ি ফেটে যায়।
পেট খারাপে:
কাঁচা এবং শুনা নোনা ফল ৩০ গ্রাম গুড়া করে ঠাণ্ডা পানির সাথে দিনে দু’বার খেলেই উপকার হয়।
জ্বর ও শ্বাসকাশে:
নোনা গাছের শুক্ৰ ছাল ভালোভাবে গুড়া করে বয়স অনুপাতে ৫০০ মিলিগ্রাম বা একগ্রাম এক কাপ ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে মোট দু’বার খেলেই জ্বর ছেড়ে যায় এবং শ্বাসকাশ কমে।
ক্রিমি রোগে:
নোনা গাছের কচি পাতার টাটকা রস ১০ মিলিলিটার এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে সকালে একবার খেলে মলের সাথে ক্রিমি মৃত বা জীবন্ত অবস্থায় বের হয়ে আসে। একবার খেলে যদি উপকার না হয় তবে, দ্বিতীয় দিন একইভাবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
রক্ত আমাশয়ে:
কাঁচা অবস্থায় শুকিয়ে রাখা নোনা ফলের গুঁড়া ২০ গ্রাম এবং ছাগলের দুধ আধা কাপ, এ দুটি একসাথে মিশিয়ে রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে উপকার হবে।
গর্ভপাতে:
নোনা ফলের শুকনা বীজের গুঁড়া যোনির দ্বিতীয় আবর্তে প্রয়োগ করলে গর্ভপাত ঘটে। তবে গর্ভে শিশু দু’মাসের বেশি হলে সে রকম ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়। কারণ এতে গর্ভবতীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
পশুদের ক্ষতে:
অনেক সময় দেখা যায়, গৃহপালিত পশুসহ গবাদি পশুদের ঘা, বিষাক্ত হয়ে তাতে ছোট পোকার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পোকার আকার এত ছোট থাকে যে খালিচোখে দেখা যায় না। এ ধরনের ক্ষতে নোনা গাছের কচি পাতা আট থেকে দশটি এবং তামা পাতা মাঝারি আকারের একটি, উভয়কে একসাথে বেটে প্রয়োগ করলে পোকা মরে। মাত্র দু’দিন একবার করে প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট।
সতর্কীকরণ:
ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ১৩৯-১৪০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।