আশাবাদ (ইংরেজি: Optimism) হচ্ছে একটি মানসিক মনোভাব। আশাবাদ এমন একটি বিশ্বাস বা আশা প্রতিফলিত করে যেখানে কিছু নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা বা সাধারণভাবে ফলাফলগুলিকে ইতিবাচক, অনুকূল, এবং আকাঙ্ক্ষিত হিসেবে দেখা হয়। ঘটনার মূল্যায়নে মানুষ যে দুটি পরস্পর বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারে তাদের আশাবাদ এবং নিরাশাবাদ বলা হয়।
ব্যক্তি এবং সমাজের জীবনে যে কোনো ঘটনার তাৎপর্য আছে। সমাজের ঘটনাপুঞ্জ দিয়ে ইতিহাস তৈরি হয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক হচ্ছে সংঘটিত ঘটনাপুঞ্জের তাৎপর্য বিশ্লেষণ। এই বিশ্লেষণ সাধারণভাবে দুটি মনোভঙ্গি নিয়ে মানুষ করে এসেছে। ইতিহাসের বিবর্তনকে কোনো মানুষ সমাজের জন্য মঙ্গলকর বলে মনে করতে পারে। অপর একজন তাকে অমঙ্গলকর বলে ধারণা করতে পারে। অবশ্য ইতিহাসের এই মঙ্গলকর বা আশাবাদী এবং অমঙ্গলকর অর্থাৎ নিরাশাবাদী ব্যাখ্যা একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার দ্বারাই নির্ধারিত হয় না।
প্রকৃতি জগতের ন্যায় সমাজ ও নিরন্তর শ্রেণীর দ্বন্দ্ব, নতুন ও পুরাতনের বিরোধ চলে আসছে। এই দ্বন্দ্বে যে ব্যক্তি বা যে শ্রেণী নতুনের পক্ষভুক্ত, ঘটনার ব্যাখ্যা তার হাতে অবশ্যই আশাবাদী হতে বাধ্য। অপর দিকে যে ব্যক্তি সচেতন কিংবা অচেতনভাবে পুরাতনের পক্ষভুক্ত, তার ব্যাখ্যা নিরাশাবাদী হতে বাধ্য। ইতিহাসের যে কোনো পর্যায়কেই যে কেবল আশাবাদী কিংবা নিরাশাবাদী দৃষ্টিকোণ হতে দেখা যায়, তাই নয়। ইতিহাসকে সামগ্রিকভাবেও আশাবাদী কিংবা নিরাশাবাদী হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়। মার্কসবাদ ইতিহাসের বিবর্তনকে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হতে ব্যাখ্যা করে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩০০।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।