ভূগোল শাস্ত্রে স্থানিক ও কালিক পর্যায়ে মানুষ ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক পঠন ও বিশ্লেষণ করা হয়

সাধারণভাবে ভূগোল বা ভূগোল শাস্ত্র বা ভূগোলবিদ্যা বা ভূগোলকবিদ্যা (ইংরেজি: Geography) বলতে এমন শাস্ত্রকে বুঝায় যাতে স্থানিক ও কালিক পর্যায়ে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে ̈আন্তঃসম্পর্ক পঠন পাঠন ও বিশ্লেষণ করা হয়। ভূগোল হলো মহাবিশ্ব এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলির একটি পদ্ধতিগত গবেষণা। ভূগোল শাস্ত্রকে চারটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: ক)গাণিতিক ভূগোল খ) প্রাকৃতিক ভূগোল গ) মানবিক ভূগোল ঘ) পদ্ধতিগত ভূগোল।

ভূগোলের যে শাখা সৌরজগৎ, পৃথিবীর আকার, আয়তন, গতি, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, ঋতু পরিবর্তন, দিবা রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়সহ এদের গাণিতিক হিসাব-নিকাশ নিয়ে আলোচনা করে তাকে গাণিতিক ভূগোল বলে।

প্রাকৃতিক ভূগােল কি?

বিজ্ঞানের যে শাখা অধ্যয়নে ভূ-ত্বকের উপরিভাগের ভৌত পরিবেশ এবং এতে কার্যরত বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে জানা যায় তাকে প্রাকৃতিক ভূগােল বলে। এটি প্রকৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক শাখা সমূহ নিয়ে গড়ে উঠেছে। যেমন: আবহাওয়াবিদ্যা, জলবায়ুবিদ্যা, সমুদ্রতত্ব, ভূমিরূপবিদ্যা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান ইত্যাদি।

যে সব ভূগােলবিদ প্রাকৃতিক ভূগােল চর্চা করেন তাঁদের মুখ্য বিষয় প্রাকৃতিক বিষয়াদি। যেমন পৃথিবীর জন্ম, ভূ-প্রকৃতি, শিলা ও খনিজ, ভূমিরূপ, নদ-নদী, জলবায়ু, মৃত্তিকা ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক ভূগােলের শ্রেণিবিভাগ

লক্ষণীয় যে, প্রাকৃতিক ভূগােলের প্রতিটি উপ-বিভাগ এর সমগােত্রীয় বিষয়ের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রাকৃতিক ভূগােল পাঠের সুবিধার জন্য ভূগােলবিদগণ একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। মূলত এর ভাগ পাঁচটি। যথা – ভূমিরূপবিদ্যা জলবায়ুবিদ্যা সমূদ্রবিদ্যা মৃত্তিকাবিদ্যা উদ্ভিদবিদ্যা।

(১) ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology): ভূগােলের এই শাখা পৃথিবীর অভ্যন্তরীন অবস্থা, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূ-তাত্ত্বিক সময় মাপনী, ভূ-আলােড়ন, ভূ-আন্দোলন বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে। এই শাখার অধ্যয়নে পৃথিবীর অভ্যন্তরীন অবস্থার বর্ণনা ও এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ভূ-ত্বকের পরিবর্তন, পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত নানা প্রকার মতবাদ ও এর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা, প্রাথমিকভাবে পৃথিবীর আকার ও আয়তন কেমন ছিল তার বর্ণনা, ভূমিকম্প ও আলােড়নের ফলে পৃথিবীতে যে নানা প্রকার ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে নানারূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়।

আরো পড়ুন:  সরকার হলো ব্যবস্থা বা গোষ্ঠী যা সংগঠিত সম্প্রদায়, প্রায়শই একটি রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে

(২) জলবায়ুবিদ্যা (Climatology): এই শাখা বায়ু, বায়ুস্তর, বায়ুর উপাদান, বায়ুর ধর্ম, বায়ুর তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুপুঞ্জ, বায়ুপ্রাচীর, ঘুর্ণিবাত, প্রতিপ ঘুর্ণিবাত, বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প, বৃষ্টিপাত, পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল প্রভৃতি নিয়ে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে উপরােক্ত বিষয়সমূহের বিশ্লেষণ মূলক সমীক্ষা, পরিমাপ, তথ্য, তত্ত্ব ও পূর্বাভাস পর্যন্ত দেয়া সম্ভব। পৃথিবীর অঞ্চলভেদে আবহাওয়ার রূপ, বিস্তরণ, নানা প্রাকৃতিক কারণে এসব আবহাওয়ার পরিবর্তন, কোন স্থানের আবহাওয়ার বিন্যাস, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রভৃতি বিষয় আবহাওয়াবিদ্যার অন্তর্গত। ভূগােলের আওতাভূক্ত পদ্ধতি দুর অনুধাবনের (Remote Sensing) মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও বিন্যাস প্রত্যক্ষ রূপে জানা সম্ভব।

(৩) সমুদ্র তত্ত্ব বা সমুদ্র বিদ্যা (Oceanography): প্রাকৃতিক ভূগােলের এই ভাগটি সাগর, মহাসাগর, উপসাগর ইত্যাদির উৎপত্তি, বিন্যাস, বিস্তরণ, সমুদ্রস্রোত, সমুদ্র তরঙ্গ ও এর কার্য, সমুদ্র তলের বিন্যাস, সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণী ও উদ্ভিদের বিন্যাস, সমুদ্র তলের ভূ-প্রকৃতি, স্থলভাগের উপর সমুদ্রের প্রভাব, জোয়ার-ভাঁটা প্রভৃতি বিষয়ে আলােচনা করে। এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও সে অনুযায়ী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়।

(৪) মৃত্তিকাবিদ্যা (Soil science): পৃথিবীর বহি:রাবরণ ভূ-ত্বকের গঠণ উপাদান মৃত্তিকা ভূগােলের এই শাখার আওতায় পড়ে। মৃত্তিকার উৎপত্তি, গঠণ, ভূতাত্ত্বিক সময় মাপনী অনুযায়ী মৃত্তিকার গঠণ ও বিন্যাস, অঞ্চল ও সময় ভেদে মৃত্তিকার বিস্তরণ, মৃত্তিকার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের বিন্যাস, মৃত্তিকার প্রকার সর্বোপরি মৃত্তিকা ও পরিবেশের আন্ত:সম্পর্ক ও এর প্রভাব নিয়ে ভূগােলের এ শাখাটি কাজ করে।

(৫) উদ্ভিদ বিদ্যা (Biotic science): ভূগােলের এই শাখায় অন্তর্ভুক্ত বিষয় সমূহ হচ্ছে উদ্ভিদের সময় ও স্থান ভেদে ক্রমবিকাশ, পরিবেশের ওপর উদ্ভিদের প্রভাব বা পরিবেশ ভেদে উদ্ভিদের বিস্তরণ, স্থান ও সময় ভেদে উদ্ভিদের বিন্যাস, উদ্ভিদ বাস্তব্যবিদ্যা এবং উপরােক্ত বিষয়সমূহের আলােকে পৃথিবীর ভূ-আচ্ছাদন সম্পর্কে ধারণা ও সে অনুযায়ী কি পদক্ষেপ নিলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা।

আরো পড়ুন:  তুমি মৃত জেনেও

1 thought on “ভূগোল শাস্ত্রে স্থানিক ও কালিক পর্যায়ে মানুষ ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক পঠন ও বিশ্লেষণ করা হয়”

  1. সুন্দর উপস্থাপনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এরকম লেখা ভবিষ্যতে আরো চাই, শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!