প্রকৃতি (ইংরেজি: Nature), বিস্তৃত অর্থে বললে, প্রাকৃতিক, ভৌত বা বস্তুগত জগত বা মহাবিশ্ব। “প্রকৃতি” ভৌত জগতের ঘটনাগুলি এবং সাধারণভাবে জীবনকেও নির্দেশ করতে পারে। প্রকৃতির অধ্যয়ন বিজ্ঞানের একমাত্র অংশ নয়, তবে বিশাল অংশ। যদিও মানুষ প্রকৃতির অঙ্গ, মানব ক্রিয়াকলাপ প্রায়শই অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহ থেকে পৃথক বিষয়শ্রেণি হিসাবে দেখা হয়।
প্রকৃতি শব্দটি লাতিন শব্দ natura, বা “প্রয়োজনীয় গুণাবলী, সহজাত স্বভাব” থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং প্রাচীন কালে এর আক্ষরিক অর্থ ছিল “জন্ম”। Natura হলো গ্রীক শব্দ ফিজিস (φύσις) এর লাতিন অনুবাদ, যা মূলত উদ্ভিদ, প্রাণী এবং বিশ্বের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির নিজস্ব বিকাশের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত। সামগ্রিকভাবে প্রকৃতির ধারণা বা ভৌত মহাবিশ্বের ধারনাটি মূল ধারণা থেকে পরবর্তীকালে অনেক বিস্তৃত হয়েছে; এই φύσις শব্দটির অন্তঃসার প্রয়োগ শুরু হয়েছিল প্রাক-সক্রেটিক দার্শনিকদের দ্বারা এবং এর পর থেকে অবিচলিতভাবে চিন্তাটি বিস্তৃতি অর্জন করেছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আবির্ভাবের সময় থেকে গত কয়েক শতাব্দীতে এই ব্যবহার অব্যাহত ছিল।
ইদানিং শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহারের মধ্যে, “প্রকৃতি” প্রায়শই ভূতত্ত্ব এবং বন্যপ্রাণকে বোঝায়। প্রকৃতি জীবিত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সাধারণ ক্ষেত্রকে এবং কিছু ক্ষেত্রে জড় পদার্থের সাথে সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলিকে আরোপ করতে পারে; — অর্থাৎ যেভাবে পৃথিবীর আবহাওয়া এবং ভূতত্ত্বের মতো নির্দিষ্ট ধরণের জিনিসগুলির অস্তিমান থাকা এবং তাদের নিজস্ব পরিবর্তনকে বোঝাতে প্রকৃতিকে আরোপ করা হয়। এটি দ্বারা প্রায়শই “প্রাকৃতিক পরিবেশ” বা বন্যতাকে হিসাবে বোঝানো হয় — বন্য প্রাণী, পাথর, জংগল এবং সাধারণভাবে সেই জিনিসগুলি যা মানুষের হস্তক্ষেপের দ্বারা যথেষ্ট পরিবর্তন হয়নি, বা যা মানুষের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও স্থায়ী অবস্থায় রয়েছে।
মানুষের আন্তঃসম্পর্ক
যদিও পৃথিবীতে মোট জীবিত সমগ্র জীবসমষ্টির তুলনায় মানুষ একটি ক্ষুদ্র অণুমাত্র, সেই তুলনায় প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব অসমঞ্জস্যভাবে বড়। প্রকৃতি পরিবেশমুখী জীবনযাত্রা, প্রাচীনকালে সংগ্রহ-শিকারের যুগে প্রতিষ্ঠিত ছিল। নানা দেশের আদিবাসীদের সমাজ যুগ যুগ ধরে অরণ্য প্রকৃতি পরিবেশ-মাঝে তাদের জীবন ও জীবিকা গড়ে তুলেছিল। পাখির কলতান, জীববৈচিত্র্য, প্রাণী সম্পদ ও মানুষ এককালে এই পৃথিবীতে সহাবস্থান-সুনীতি নিয়েই নানান ছন্দে গড়ে উঠেছিল।
পৃথিবীতে সহাবস্থানের সুরক্ষা বা পারস্পরিক ভারসাম্যের পরিবেশে আঘাত হানলো মানুষ। তার বিশিষ্ট বুদ্ধি বলে, প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়ে প্রকৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার করেই চলল। তারপর বেহিসেবি উন্নতির মত্ততায় বিভিন্ন মারাত্মক শক্তি প্রয়োগে পরিবেশের স্থায়ী পরিবর্তন এনে ফেলল। জয়ী মানুষ শিল্পবিপ্লবের সাফল্যে আত্মহারা হয়ে, স্থিতিয্যোগ্য পরিবেশ উন্নয়নের আবশ্যিক শর্তগুলিকে হারাল।
মানব জাতি দ্বারা প্রযুক্তির বিকাশ প্রাকৃতিক সম্পদের বৃহত্তর ব্যবহার শোষণের অনুমতি দিয়েছে এবং প্রাকৃতিক বিপদ থেকে কিছুটা ঝুঁকি নিরসনে সহায়তা করেছে। এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার ভাগ্য পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত রয়েছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য মনুষ্যনির্মিত হুমকির মধ্যে রয়েছে দূষণ, বনভূমি এবং তেল ছড়িয়ে পড়ার মতো দুর্যোগ। মানুষ অনেক গাছপালা এবং প্রাণী বিলুপ্তিতে অবদান রেখেছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।