ধর্মতত্ত্বে নিয়তি (ইংরেজি: Predestination) বা নিয়তিবাদ হচ্ছে এই বিশ্বাস যে, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে, মানুষের জন্ম, মৃত্যু, ব্যক্তির ইচ্ছা, অনিচ্ছা সব কিছুই ঈশ্বরের দ্বারা পূর্ব নির্দিষ্ট। সব ঘটনাই অনিবার্য, সব অস্তিত্বই অপ্রতিরোধ্য।
নিয়তিবাদ স্বীকার করলে জগতের কিংবা মানুষের সমাজের নতুন ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়া কিংবা বিকশিত হওয়ার আর উপায় থাকে না। কেননা জগৎ ও সমাজ কোন্ দিকে যাবে তা ঈশ্বর পূর্বেই নির্দিষ্ট করে রেখেছে। ব্যক্তি সে নির্ধারিত পথ জানে না। তাই তার কাছে ঘটনা নতুন বলে বোধ হয়। সে কারণেই সে মনে করে যে, তার নিজের ইচ্ছামতো ভবিষ্যতের জাগতিক বা সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারবে। জগতে কোনো অণুরই স্বাধীনভাবে অনির্দিষ্টপথে অগ্রসর হওয়ার উপায় নেই।[১]
নিয়তিবাদের তত্ত্ব মানুষকে পরিণামে সমস্যার পরিমন্ডলে অসহায় নিষ্ক্রিয় প্রাণীতে পরিণত করে। বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের মধ্যে পৃথিবীর সবকিছু ঘটনাব কার্যকারণের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বে কোনো কিছুই যেমন ইচ্ছা তেমন ঘটতে পারে না। বিশ্বময় নিয়মের রাজত্ব। কিন্তু বিজ্ঞানের নিয়মের রাজত্ব আর নিয়তিবাদ এক কথা নয়। নিয়তিবাদে ঘটনায় ঘটনায় কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। সব ঘটনার মূল কারণ বিধাতার কারণহীন ইচ্ছা।
নিয়তি’র ইতিহাস
প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় ইহুদী ধর্মের নিয়তি বিষয়ে মতামত সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে কিছু মতবিরোধ রয়েছে, উল্লেখ্য যে ইহুদি ধর্ম থেকেই খ্রিস্টান ধর্ম এসেছে। জোসেফাস প্রথম শতাব্দীতে লিখেছিলেন যে তিনটি প্রধান ইহুদি সম্প্রদায়ের এই প্রশ্নে মতভেদ রয়েছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে এসেনিস এবং ফরীশীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের দৈবযোগ তা সমস্ত মানব ঘটনার আদেশ দেয়, কিন্তু ফরীশীরা এই চিন্তা ধরে রেখেছিল যে মানুষ সঠিক এবং ভুলের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে সক্ষম হয়। তিনি লিখেছেন যে সদ্দূকীদের কাছে দৈবযোগের মতবাদ ছিল না।
নবম শতাব্দীর স্যাকসন সন্ন্যাসী অরবাইসের গটসচক যুক্তি দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর কিছু লোককে পূর্বনির্ধারিত করে দেন জাহান্নামে এবং কিছু লোককে স্বর্গে। এই মতটি দ্বৈত নিয়তি নামে পরিচিত। বেশ কয়েকটি গির্জা-পরিচালকদের সভা দ্বারা তাকে নিন্দা করা হয়েছিল, তবে তার মতামত জনপ্রিয় ছিল। আইরিশ ধর্মতত্ত্ববিদ জন স্কটাস এরিউজেনা গটসচকের চিন্তাকে খণ্ডন লিখেছিলেন।
তথ্যসূত্র
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩২০ ।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।