শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে ডালিয়া চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা

আজকাল ফুলের চাষ অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়ে গেছে। অবশ্য পারিবারিক ভাবে টবে, ছাদে বা বারান্দায়ও চাষ হয়ে থাকে। প্রায় সকল মৌসুমী ফুলই টবে চাষ সম্ভব অন্ততঃ পারিবারিক চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ জমিতেই সুবিধাজনক।

ডালিয়া ফুলের চাষ:

শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে ডালিয়াই সর্ববৃহৎ আকার ও আকর্ষণীয় রঙ এর এবং ডালিয়ার চাষ পদ্ধতিও সহজ। এই ফুল টব ও জমিতেই উভয় পদ্ধতিতে চাষ করা যায়।

ডালিয়া ফুল খুব বেশি বৃষ্টিপাত, অত্যাধিক ঠান্ডা বা অত্যাধিক গরম সহ্য করতে পারেনা। বছরে গড় বৃষ্টিপাত ৫০-৭০ সেঃ মিঃ ডালিয়া চাষের উপযোগী। একটু উচু পাহাড়ী অঞ্চলে সহজেই চাষ করা যায় এবং সমতল অঞ্চলে উত্তম যত্ন ও পরিচর্যায় এর সফল চাষ সম্ভব হচ্ছে।

ডালিয়ার জাত:

ডবল ও সিংগল উভয় প্রকারের হয়ে থাকে। ক্যাকটাস, অ্যানিমেল, কলারেট, পীত্তলী জাতের ডালিয়াই অন্যতম। সাধারণত ৯০ থেকে ১৫০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত উচ্চতার হয়ে থাকে, তবে ক্ষুদ্র আকারের বামন ডালিয়া ও দেখা যায়। বামন লাল ও সাদা প্রজাতির শক্ত গড়নের ফুলের গাছ ১৫-২০ সেঃ মিঃ হয়ে থাকে।

জমির মাটি তৈরী:

ডালিয়া চাষের জমির মাটি তৈরীর কাজটি ২ ধাপে করা হয়ে থাকে। হালকা উর্বর ও সরস দো-আঁশ মাটি ডালিয়া চাষের জন্য উত্তম।

১. প্রথম ধাপে জমির মাটি তৈরী: ডালিয়ার চারা উৎপাদনের জন্যে প্রথম ধাপে মাটি তৈরী করতে হয়। ডালিয়া ফুলের চাষের জন্যে জমি তৈরী করতে জমির উপরিভাগের দোঁআশ মাটি শতকরা ৫০ ভাগ ও ভালো গোবর শতকরা ৫০ ভাগ ভালো করে মিশিয়ে নিতে হয়।

টবে চাষ করতে হলে উপরের অনুপাতের মাটি ও গোবরের সাথে টব প্রতি চা চামচের ১ চামচ চুন মাটিতে মিশিয়ে নিতে হয়। মাটি ও গোবরের এবং টবের ক্ষেত্রে চুন এর মিশ্রণ সপ্তাহ খানেক জলের ঝাপটা দিয়ে ভিজিয়ে রাখার পর রোদে শুকিয়ে চালা নিতে চেলে ঘাসছাড়া ও ঝুরঝুরে করতে হয়। এটাই হচ্ছে ডালিয়া চারা লাগানের মাটি তৈরীর পদ্ধতি।

২. মাটি তৈরীর দ্বিতীয় ধাপ: ডালিয়া ফুলের চারা বেড়ে ওঠার পর এ গাছের গোড়ায় ক্রমাগত বা কয়দিন পরপর দেবার মাটি তৈরী করতে হয়।  অর্ধেক জমির উপরিভাগের মাটির সাথে অর্ধেক গোবর ভালো করে মিশিয়ে নিতে হয়। এই মিশ্রণের ১টা পরিমাণে ১৫০ গ্রাম সরিষার খইল মিশায়ে নিতে হয়।

এই মিশ্রিত মাটি ২ সপ্তাহকাল জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয় যাতে খইল ভালো ভাবে পচে যায়। সবশেষে মাটিকে রোদে শুকিয়ে ভালো করে চালনিতে চেলে এই চালা ঝুরঝুরে মাটি কিছুদিন পরপর বা ক্রমাগত গাছের গোড়ায় দিতে হয়।

ডালিয়ার চারা তৈরী ও লাগানো:

ডালিয়া কন্দ বা আলু জাতীয় গাছ। গোড়ায় কন্দ বা ছোট চারা বের হবে। ডালিয়ার কন্দ বা চারা বা ডাল ছোট অবস্থায় কেটে সাদা বালিতে বসিয়ে বা লাগিয়ে নিতে হবে। কন্দ বা ছোট চারা বা ডাল লাগানোর পর দুবেলা ঝাঝারি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চারার শিকড় বের হলে চারার গোড়া ৩ ভাগ গোবর ও ১ ভাগ দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ দিতে হবে। এ অবস্থায় চারাকে রোদ খাওয়ালে কিছুদিনের মধ্যেই ডালিয়ার চারা জমিতে বা টবে লাগানো উপযুক্ত হবে। তৈরী করা চারা টবে বা জমিতে লাগিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন পর থেকে প্রচুর জল এবং তৈরী মাটি দিতে হবে।

কুড়ি আসা পর্যন্ত মাটি ও সেচ দেবার প্রয়োজন হয়। কুড়ি আসার পর দুবেলা সেচ দিতে হবে। গাছ বাড়তে থাকলে ছোট ছোট খুটি পুতে গাছকে হালকা ভাবে বেঁধে দিতে হবে।

পরিচর্যা ও যত্ন:

রীতিমতো মাটি ও পানি দেবার ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক এবং তা কুড়ি আসা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। ঐ সময় কুড়ি দেখা দিলে ৩ ভাগ মিউরেট অব পটাশ, ১ ভাগ সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ০.৫ ভাগ ইউরিয়া মিশিয়ে টব প্রতি ২ চা চামচ আর জমির বেলায় ঐ একই অনুপাতের মিশ্রণ দিতে হবে।

সার দেওয়ার ৩ দিন পর খইল-গোবর পচানো জল প্রয়োগ করতে হবে এবং পরের ৩ দিন কেবল জল সেচ দিতে হয়। ডালিয়ার ডালের মাথায় ২ থেকে ৩টি কুড়ি আসলে কচি অবস্থায় বড় কুড়িটি রেখে বাকীগুলো ভেংগে দিলে ফুল বড়ো হবে। কুড়িতে পাপড়ি দেখা দিলে কোনো প্রকার সার ব্যবহার করা যাবেনা।

ফুল সংগ্রহ:

গাছ লাগানোর ৬০-৮০ দিনের মধ্যে ফুল পাওয়া যায়। যারা বড়ো ফুল পেতে উৎসাহী তাদের ফুল প্রদর্শনীতে নেয়া যেতে পারে। আবার অনেকে সংখ্যায় অনেক ফুল পেতে চান তারাও কুড়ি না ভাংলে বেশি সংখ্যক ফুল পেতে পারেন।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ৯২-৯৩। আইএসবিএন 984-461-128-7

আরো পড়ুন:  নয়নতারা এপোসিনাসি পরিবারের একটি আলংকারিক ফুল

Leave a Comment

error: Content is protected !!