গ্লোব অ্যামারাস্থ বা বোতাম ফুল গাছ ডাটা দোপাটির মতো দেখতে, পাতা সুবঞ্চিত ও প্রায় দীর্ঘ, চ্যাপ্টা ও রঙিন ফুলের শীতে ফুল ফোটে থাকে। এর আরেকটি নাম গমফারেনা। প্রায় সবরকম মাটিতে চাষ হয়। তবে হালকা উর্বর দো-আঁশ মাটিতে ফলন ভালো হয়ে থাকে। জমি এবং টবে চাষ করা যায় । সমতল অঞ্চলে মে-জুলাই এবং পার্বত্য অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিল মাসে চাষ হয়।
অ্যামারান্থ জাত:
লাল, সাদা, গোলাপী, বেগুনী রঙের গোলাকার ফুলের সমাহারে অ্যামারাস্থ গাছ। দেখতে বেশ সুন্দর। গাছের উচ্চতা ১-১.৫ হয়ে থাকে। ট্রাইকালার কডেটাস, প্রিন্সেস ফেদার ইত্যাদি জাতের অ্যামারান্থ দেখতে পাওয়া যায় ।
জমি প্রস্তুত
অ্যামারাস্থ গাছের প্রথমে চারা উৎপাদন করে পরে স্থায়ী বপনের জমিতে লাগাতে হয়। কাজেই চারা উৎপাদনের বীজতলা এবং চারা লাগানোর স্থায়ী জমি হিসাবে প্রস্তুত করতে হয়।
চারা উৎপাদনের বীজতলা প্রস্তুত
সূর্যালোকিত জায়গায় উচু দো-আঁশ বা বেলে মাটিই বীজতলার জন্যে উপযোগী। ৭৫ সেঃ মিঃ থেকে ১ মিঃ প্রস্থ, ১.৫ মিঃ থেকে ৩ মিঃ বা তারও বেশি দৈর্ঘ্য এবং ভূমি থেকে ১০-১৫ সেঃ মিঃ উচু জমি বাছাই করে তার চারপাশে ২০-৩০ সেঃ মিঃ চওড়া ও ১০-১৫ সেঃ মিঃ গভীর সেচনালা রাখতে হবে। বীজ তলা প্রস্তুতির কাজগুলি যথাক্রমে-
১. মাটি কুপিয়ে নরম ও ঝুরঝুরে করতে হবে।
২. কোপানো মাটির সাথে ঝুরঝুরে মাটির ১০ ভাগ এর সাথে ১ ভাগ পচা পাতা সার বা শুষ্ক গোবর সার মিটাতে হবে।
৩. উপরোক্ত আয়তনের জমিতে ২০০-২৫০ গ্রাম এস এস পি ও ৫০-৬০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করে মিশানোর পর মাটি সমান করে দিতে হবে ।
৪. এই সময় ব্রাসিকল ৭৫ এবং বি সি ৫০ এর ০.৪% স্প্রে দ্বারা ৪-৬ সেঃ মিঃ গভীর পর্যন্ত মাটি ভিজিয়ে মাটি শোধন করতে হবে।
৫. এর ৪-৫ দিন পর মাটির উপর স্তর আলগা করে জমিতে বীজ বা কাটিং লাগাতে হবে।
চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত
মোরগঝুঁটি ফুল চাষের জমি উর্বর, উঁচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিষ্কাশন করা যায় এমন জমিই উত্তম। দক্ষিণ খোলা উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি মোরগঝুঁটি চাষে উপযোগী। তবে এটেল মাটি আরো ভালো।
১. নির্বাচিত জমি লাঙ্গল বা কোদাল দিয়ে ৪ থেকে ৫ বার গভীর ভাবে কর্ষণ করেতে হবে। যাতে মাটি ঝুরঝুরে হয়ে যায়।
২. আগাছা, ইট, পাটকেল, পাথর, আবর্জনা ইত্যাদি পরিষ্কার করে প্রতি ১০০ মিটার জায়গায় ২০০ কেজি পাতা-পচা সার বা গোবর সার, ৬-১০ কেজি কাঠের ছাই, ২-৩ কেজি এস এস পি সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩. এটেল মাটির জমিতে চাষের সময় সামান্য চুন মিশাতে হবে যা দো-আঁশ মাটিতে দরকার হবে না। মাটি শোধণের জন্যে সমগ্র মাটিতেই ৩০ গ্রাম অলড্রিন এবং ২৫০ গ্রাম ব্রাসিকল ২০ সামান্য গুড়া সারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ৪ এই অবস্থায় মাটি সমতল করে ৩ থেকে ৪ সেঃ মিঃ বীজের ও ৪-৫ টি পাতার কলমের চারা রোপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা উৎপাদন ও চারা রোপণ করা
১ প্রস্তুতকৃত বীজতলা মাটি যথাযথ ভাবে প্রস্তুত ও ঝুরঝুরে করে এপ্রিল-মে মাসে। অ্যামারাস্থ ফুলের বীজ সামান্য ছাই এর সাথে মিশিয়ে বপন করতে হয়।
২ বপনের পর সামান্য জল ছিটিয়ে মাটি হালকা ভাবে চাপিয়ে সমান করে দিতে হয় এবং মোরগ বা ছাগল-গরু যাতে ক্ষতি না করতে পারে সেজন্যে চারদিকে বেড়া দিয়ে দেয়া ভালো।
৩ বীজতলায় যাতে কোনভাবেই জলাবদ্ধতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রয়োজনে মাটি খুব বেশি শুকিয়ে গেলে পরিমাণ মতো জলসেচ দিতে হবে।
৪ চারায় ৪-৫টি পাতা গজালেই পূর্বে প্রস্তুত করা স্থায়ী বাগানের মাটিতে রোপনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১৫-২৫ সেঃ মিঃ এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হতে পারে ৩০-৪০ সেঃ মিঃ।
পরিচর্যা ও যত্ন
গাছ লাগানোর সময় থেকে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা ভালো ফল পাওয়া যাবেনা।
১. চারা লাগানোর সময়ই সামান্য ফসফেট সার দিতে হবে এবং সামান্য জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পানি জমে যাওয়া বা পানি শূন্য হয়ে যাওয়া কোনটাই চন্দ্রমল্লিকা সহ্য করতে পারেনা বিধায় ফুল আহরণ পর্যন্ত প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে।
৩. গাছ সামান্য বড় হলেই ছোট ছোট চিকন খুটির সাথে গাছগুলিকে বেঁধে দিলে ভালো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ভাল ছেটে দিতে হবে।
৪. গাছের চাহিদার অতিরিক্ত সার দেয়া হলে গাছ ছারিয়ে পাতা বড় হবে ও ডগা দুটি বেঁধে যাবে এবং ফুল ছোট হবে। এ অবস্থায় গাছের ডগা ছেটে দিতে হবে।
৫. চারা লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার পরিমাণ মতো তরল সার এবং মাসে একবার মাছের গুড়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে ।
৬. গাছে কুড়ি আসার সময় একবার বা দুইবার অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ইউরিয়া বা অন্য কোনো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে।
৭. নাইট্রোজেন সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা। কেননা তাতে ফুলের আকার ছোট ও রঙ ফ্যাকাসে হবে।
৮. অতিরিক্ত পর্যাপ্ত পটাশ সার দিলে ফুলের রঙ ভালো হয় এবং অতিরিক্ত ফসফরাস সার দিতে ফলের রঙ খারাপ হয়। তাই ফসফরাস সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা।
৯. গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মাটি সাবধানে খুড়তে হবে যাতে গাছের শেকড় না কাটে।
১০. গাছ বড় হলে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪টি বড় শাখা রেখে বাকীগুলি ছেটে দিলে ফুল বড়ো হবে।
১১. প্রদর্শনীর জন্যে বড় ফুল পেতে পাশের কুড়ি ছেটে দিয়ে নিয়মিত সার প্রয়োগ, জলসেচ ও রোগ বালাই দমন করতে হবে।
১২. গোবর সার ও সরিষার খইল ভিজিয়ে তরল সার তৈরী করে চারা রোপণের পরের মাস থেকেই দিতে হবে এবং কুড়ি আসার সময় তরল সারে সামান্য ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে।
১৩. গাছ ২৫/৩০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রধান শাখাটি কোন বাউনীতে বাড়িলে দিলেও তাতে ছোট ছোট শাখা বের হবে এবং ফুলের উৎপাদন হবে।
ফুল সংগ্রহ
জুলাই-আগষ্ট মাসে অর্থাৎ চারা লাগানো ২-৩ মাসের মধ্যেই অ্যামারান্থ গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। এ সময় নিজস্ব ব্যবহারের জন্যে লম্বা বোটাসহ তুলে এনে সাজানো যায়। এ ফুলের বাণিজ্যিক মূল্য এখনো তেমন একটা সৃষ্টি হয়নি। তবে এর বাণিজ্যিক মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা অচিরেই সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১২০-১২৩। আইএসবিএন 984-461-128-7
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
আপনার পরামর্শ মেনে চাষ করব
লেখাটা ভাল হয়েছে। অনেক এমন লেখা দেবেন।
Thanks
এই ফুলের রং দেখতে সুন্দর।
আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ
লেখাটা ভালো হয়েছে।