শিউলির চাষ শুধু সুগন্ধি ফুলের জন্যই না, এর বাজার চাহিদাও আছে। সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই জাতীয় ফুলের আদর বেশি। শিউলি ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তৈল নিষ্কাশন করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নানা রোগ সারাতে এই গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শিউলি ফুলের চাষ খুব লাভজনক। অবাধ সূর্যালোক পায় এমন উঁচু পলি-দো-আঁশ মাটি শিউলি ফুলের চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। যথাসময়ে সারপ্রয়োগ, জলসেচন ও গাছ ছাঁটাই -এর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিলে লাভজনকভাবে এই ফুল উৎপাদন করা যায়
প্রজাতি
আমাদের দেশে এ ফুলের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রজাতি খুব একটা দেখা যায় না। তবে জাতভেদে এর ফুল কমবেশি বা ছোট বড় হয়ে থাকে।
জমি প্রস্তুত
১ কোদাল দ্বারা প্রাথমিক কর্ষণের পর মই দিয়ে জমি সমতল করে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
২ তারপর, সারি হতে ১৫০ সেঃ মিঃ ও গাছ হতে গাছের দূরত্ব ১০০ সেঃ মিঃ রেখে ৪৫ × ৪৫ × ৩০ সেঃ মিঃ আকারের গর্ত খনন করতে হবে।
৩ প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর সার ও এক কেজি কাঠের ছাই প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
চারা রোপণ
সাধারণতঃ জুলাই মাসে শিউলির চারা রোপণ করা হয়। এই চারা প্রতিটি গর্তে ৮-১০ সেঃ মিঃ গভীরতায় সোজাভাবে রোপণ করতে হবে। বীজ থেকে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়।
পরিচর্যা
বর্ষাকালে জলসেচনের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। শুধু মাঝে মাঝে কোদাল দিয়ে কোপাইয়া মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। শিউলির চাষ করলে খেয়াল রাখতে হবে শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে যেন নিয়মিত সেচ দেয়া যায়। শিউলি গাছে মাকড় এবং পত্রভুক পোকার উপদ্রব দেখা যায়। এই কীট-শগুলি দমনের জন্য কেলথেন ১৮ ই. সি.-র ।
গাছ ছাঁটাই
শিউলির চাষ শুরুর পরে জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাটাই করতে হবে। ছাইয়ের ১৫ দিন আগে হতে জমিতে জলসেচ বন্ধ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় পুরাতন শাখাগুলির বাড়তি অংশ ছটিয়া দিতে হবে। তারপর, প্রতি গাছের পুরাতন পাতাগুলিও ছেটে ফেলতে হবে। ছাটাইয়ের এক সপ্তাহ পরে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাটি সরিয়ে সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে ।
সার প্রয়োগ
শিউলি গাছের বর্ধনশীল নরম কান্ড ও শাখায় পুষ্প মুকুল আসে বলে এদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট সার প্রয়োগ করা দরকার। গাছ ছাঁটাইয়ের পর জানুয়ারী মাসে একবার ও জুলাই মাসে আর একবার সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিবারে গাছপিছু খামারের সার ১৫ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট ৩০০ গ্রাম, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ৭৫০ গ্রাম এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।।
জলসেচ
ফুলের বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সেচ আবশ্যক। জানুয়ারী মাসে সার প্রয়োগের পর হতে প্রতি ৪ দিন অন্তর সেচ দিলে বড় বড় কুঁড়ি হয় এবং ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়। সেচের অভাব হলে, কুঁড়ি ছোট হইয়া যায় অথবা শুকাইয়া নষ্ট হইয়া যায় ।
ফুল সংগ্রহ
সাধারণত বর্ষার শেষে শরৎকালে বিভিন্ন জাতের শিউলি গাছে ফুল ফুটিতে আরম্ভ করে এবং শীতের পূর্ব পর্যন্ত ফুল ফোটা চলতে থাকে। বাজারে বিক্রয় করতে হলে, সন্ধ্যার আগে প্রস্ফুটিত পুষ্পগুচ্ছ চয়ন করে কলাপাতার মোড়কে স্থানীয় বাজারে পাঠানো হয় অথবা পরদিন সকালে দূরের বাজারে প্রেরণ করা হয়। ফুলের পাপড়ি হতে বান তৈল নিষ্কাশনের জন্য সদ্য ফোটা ফুল কারখানায় পাঠানো হয়।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১৩৯-১৪০। আইএসবিএন 984-461-128-7
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krish Dulal
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।