রাজ নাগেশ্বর পাহাড়ি অঞ্চলের ভেষজ গুণ সম্পন্ন আলংকারিক উদ্ভিদ

ভূমিকা: রাজ নাগেশ্বর (বৈজ্ঞানিক নাম: Mammea suriga) ফেবিয়াসিস পরিবারের,  ফানেরা গণের একটি এক প্রকারের বৃক্ষ। এটি ভারতীয় প্রজাতি। মাঝারি আকৃতির পত্রমোচক, প্রায় গোলাকৃতির এই গাছের সাদা রঙের ফুল ফোটে।

বৈজ্ঞানিক নাম: Mammea suriga (Buch.-Ham. ex Roxb.) Kosterm., Comm. For. Res. Inst. Indones. Bogor. 72: 33, f. 19 (1961). সমনাম:  Calophyllum suriga Buch.-Ham. ex Roxb. (1832), Calysaccion longifolium Wight (1840), Mammea longifolia (Wight) Planch. & Triana (1861), Ochrocarpus longifolius (Wight) T. Anders. (1874). ইংরেজি নাম:  জানা নেই। স্থানীয় নাম: নাগেশ্বর, রাজা চম্পকা, উনডি, সুরিঙ্গি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Phanera  প্রজাতির নাম: Bauhinia purpurea L

রাজ নাগেশ্বর গাছের বর্ণনা:

রাজ নাগেশ্বর মধ্যম আকৃতির, সুদর্শন চিরহরিৎ বৃক্ষ। গাছটি প্রায় ১৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। বাকল লালাভ বাদামী রঙের ও মসৃণ। প্রায় ৬ মিমি পুরু এই বাকলে তরু অবস্থায় ক্ষীর লাল গঁদ যুক্ত হয়। তরুণ বিটপ অস্পষ্ট কোণাকার। পাতা সরল, প্রতিমুখ বা আবর্ত, দৈর্ঘ্য ১৫-২১ সেমি ও প্রস্থ ৫-৬ সেমি, দীর্ঘায়ত থেকে ভল্লাকার, সূক্ষ্মাগ্র, দৃঢ় চর্মবৎ।

পাতার উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ এবং অঙ্কীয় পৃষ্ঠ বিবর্ণ, মধ্যশিরার উভয় পার্শ্বে অস্পষ্ট পার্শ্বীয় শিরা বিদ্যামান। শুকনো অবস্থায় শিরা স্পষ্ট, বৃন্ত প্রায় এক সেমি লম্বা, পুষ্প ঝরে পড়া পাতার অক্ষে বা পুরাতন কান্ডের গায়ে জন্মে। এদের মিশ্রবাসী বা উভলিঙ্গ দন্ডযুক্ত, সুগন্ধী বেগুনি লাল বা সাদা লাল রেখা যুক্ত, ঘন গুচ্ছাকার, মূলীয় অংশে মঞ্জরীপত্র অসংখ্য।

পুং এবং উভলিঙ্গ পুষ্প আড়াআড়ি দেড় সেমি, একই বৃক্ষে জন্মে। বৃন্ত ১.২-১.৭ সেমি লম্বা, উর্ধ্বাংশ পুরু। বৃত্যংশ ২-৩ টি, যুক্ত প্রস্ফুটন কালে উন্মুক্ত, প্রান্তস্পর্শী। পাপড়ি সাদা, প্রায় ৮ মিমি লম্বা, ডিম্বাকৃতি-দীর্ঘায়ত, সূক্ষ্মাগ্র, লাল ডোরা যুক্ত, পর্ণমোচী।

আরো পড়ুন:  শ্বেত কাঞ্চন দক্ষিণ এশিয়ার সুগন্ধি ও ভেষজ প্রজাতি

পুংকেশর অসংখ্য, হলুদ, পুংদন্ড সূত্রাকার, ৪-৫ মিমি লম্বা, মুক্ত বা মূলীয় অংশে যুক্ত, পরাগধানী রৈখিক দীর্ঘায়ত, ২.০-২.৫ মিমি লম্বা, গর্ভাশয় ২-৪ কোষী, গভদন্ড খাটো, শক্ত, গর্ভমুন্ড খন্ডিত। ফল বেরি, ২.৫-৩.০ × ১.০-১.৫ সেমি, তির্যকপন্ন ডিম্বাকার, শক্ত গর্ভদন্ড দ্বারা তীক্ষ্মাগ্র, রসালো গোলাপী গন্ধযুক্ত। ফলের ভেতর বীজ থাকে ১-৪ টি ও বীজের আকার ২ থেকে ১ সেমি।

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

চিরহরিৎ ও পর্নমোচী অরণ্য রাজ নাগেশ্বর জন্মে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ভূখন্ডে জন্মাতে পারে। এই গাছের বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার । মার্চ থেকে জুন মাসে ফল ও ফুল ধরে।

বিস্তার:

আদিনিবাস ভারত। মহারাষ্ট্র, কর্নাটেক, তামিল নাড় ও কেরালা, পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা ও উত্তর প্রদেশসহ, মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও ভেষজ গুণ:

মায়ানমারে এই উদ্ভিদের কাষ্ঠ তক্তা, নৌকার মাস্তুল ও আড়কাঠ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পুষ্প উত্তেজক ও বায়ুরোগহর অজীর্ণ ও অর্শ রোগে উপকারী, পুষ্প মুকুল সঙ্কোচক ও সুগন্ধযুক্ত বৈশিষ্ট্যি সম্পন্ন। পুষ্প মুকুলের নির্যাস থেকে এক প্রকার রঙ তৈরি হয় যা রেশমি লাল এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্প মুকুল থেকে একপ্রকার প্রসাধনীও প্রস্তুত করা হয়

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

প্যারিসে পুষ্প মুকুল থেকে টনিক তৈরি করা হয় (Caius, 1998)। ভারতে অনেক স্থানে ফলের রস গুরুত্ব সহকারে সেবন করা হয়।

রাজ নাগেশ্বর গাছের অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রাজ নাগেশ্বর  প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রাজ নাগেশ্বর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ প্রয়োজন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা যেতে পারে।

আরো পড়ুন:  কুনছিছিরি বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো উপকারী অর্কিড

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!