পদ্ম ফুল বা পদ্ম (দ্বিপদ নাম: Nelumbo nucifera ) হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের একটি পরিচিত জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। নিম্ফাসি পরিবারের এই পদ্ম ফুল চাষ (ইংরেজি: Cultivation of Lotus) করা হচ্ছে যে কোনো বাগানের মালিকের কাছে শ্লাঘার বিষয়। বাগানের উদ্ভিদ হিসেবে পছন্দের তালিকায় পদ্ম আছে শীর্ষস্থানে! আবার এই পদ্ম ফুলের ফুল এবং পাতা ঔষধি কাজে ঐতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে আসছে। পদ্ম শুধু তার রূপ ডালির জন্যেই লোকপ্রিয়।
পদ্ম ফুলের কিভাবে চাষ করবেন, এদের পরিচর্যা ও যত্ন করার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য নিয়ে এই লেখা সাজানো হয়েছে। এভাবে কাজ করলে আপনি সফল হবেন। ধারাবাহিকভাবে কাজ করার প্রক্রিয়াটি দেখুন।
পদ্মের টিউবার বা রাইজোম, যেটাই সংগ্রহ করেন না কেনো প্রথমেই দেখুন এর নোডস আছে কি না। অর্থাৎ ৩ টা নোডস বা পর্ব অন্ততঃ থাকে যেন। চাড়ি বা কনটেইনার যেটাই ব্যবহার করেন না কেনো, তাতে সরাসরি পুকুরের মাটি ব্যবহার করুন। সেটা না পেলে কাদা এবং নদীর মাটি বা দোয়াশ মাটি মিশিয়ে নিন। সরাসরি পুকুরের মাটি নেয়া ভাল।
কাদা মাটির ওপরে টিউবার (ছবি দেখুন) পেতে দিন এবং অল্প চেপে সামান্য মাটিতে গেঁথে দিন। পানি দিয়ে ভরে দিন অন্তত ইঞ্চি চারেক, এবং সেটা ধীরে বা স্বল্প চাপে। পুরো সেটআপটাই সরাসরি রোদে রাখুন যাতে ৪ ঘন্টা রোদের তাপ পায়। পানিটা হালকা গরম হলে পাতা দ্রুত গজাবে ও প্লান্ট হেলদি হবে।
পানি কমে গেলে পূর্ণ করে দিন। ছয় সাতটি পাতা হলে ট্যাবলেট সার দিন। টিউবার থেকে একটু তফাতে মাটিতে গেড়ে দিন ট্যাবলেটটি। মাসে অন্ততঃ একবার দিতে হবে এই সার। পুরো প্রক্রিয়াটি হয়ে যাবার পর দেখুন কোনো পোকা বা মথের বা ক্যাটারপিলারের আক্রমণ হয় কি না। কারণ এরা দ্রুত পাতা খেয়ে ফেলে। পকা হলে পাউডার জাতীয় কীটনাশক পাতার ওপর দিন। লিকুয়িড কীটনাশক একদমই দেবেন না।
নিকোটিন স্প্রে করতে পারেন মশার উপদ্রব হবার আশংকা হলে। অনেকেই বলেন যে পদ্মের পাতা হঠাৎ শুকিয়ে কালো হয়ে যায়, এসব ক্ষেত্রে সামান্য তুঁতে বা কপার সালফেট ১ লিটার পানিতে গুলিয়ে পদ্মের চাড়িতে ঢেলে দিন।
আবার যারা ট্যাবলেট সারের বন্দোবস্ত করতে পারবেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। গরুর গোবর যোগাড় করে পিং পং বলের সাইজে ছোট ছোট বল বানিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন, এটা ব্যবহার করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, এন পি কে সার কয়েকটি দানা ছোট নরম কাপড়ে মুড়িয়ে পোটলা বানান। এটি পদ্মের গোড়ায় মাটিতে দিয়ে দিন। অতিরিক্ত পাতা হয়ে চাড়ি ভরে গেলে কিছু পাতা চারপাশ থেকে কেটে ফেলুন, ছায়া পড়ে গেলে ফুল আসবে দেরীতে।
নিকোটিন স্প্রে বানানোর জন্য গুল ১ টেবিল চামচ ১ লিটার পানিতে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিন, এটা আমাদের নিকোটিন স্প্রে। পানিতে গাপ্পি মাছ থাকলে এটি দেবেন না। পুকুরের মাটি যারা যোগাড় করতে পারবেন না, তাদের জন্যে টিপস হচ্ছে মাটির সাথে লীফ মোল্ড বা পাতা পচানো সার মিশিয়ে নেয়া।
অভিযান শেষ, এবার অপেক্ষার পালা কবে পাতায় পাতায় ভরে যাবে পাত্র, কবে মুকুল আসবে, কবে ফুল ফুটবে।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prenn
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।