গুণ এবং পরিমাণ (ইংরেজি: Quality and Quantity) হচ্ছে বস্তুর দুটি দিক। একটি তার গুণের দিক, অপরটি পরিমাণের। গুণ বলতে কোনো বস্তুর সত্তানির্ণয়ক বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র বুঝায়। গুণের বর্ণনার দ্বারা বস্তুকে বোঝার সঙ্গে বস্তুর বিরামহীন পরিবর্তনশীলতা এবং তার আপেক্ষিক স্থিরতার প্রশ্নটি জড়িত।
কোনো বস্তুই স্থির নয়। অণুর সংগঠনে বস্তু। কিন্তু অণু গতিময়, তাই বস্তু গতিময়। এই অস্থিরতায় বস্তুকে কোনো নির্দিষ্ট মুহুর্তে ‘এই বস্তু’ কিংবা ‘ঐ বস্তু’ – অর্থাৎ এই গুণসম্পন্ন বস্তু বা ঐ গুণসম্পন্ন বস্তু বলা অসম্ভব বলে বোধ হয়। তথাপি আমরা ব্যবহারিক জীবনে বস্তুকে বিশেষণ দ্বারা নির্দিষ্ট করে থাকি। বস্তুর বিশেষণের ভিত্তিতে বস্তুকে আমরা পর্যবেক্ষণ করি এবং তার পরিবর্তনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। এটা সম্ভব এই কারণে যে, বস্তুর পরিবর্তনশীলতা সত্ত্বেও আপেক্ষিকভাবে নির্দিষ্ট মুহুর্তে একটি সংগঠন অপর বস্তু বা সংগঠনের সঙ্গে তার সহস্র সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্টতায় স্থির থাকে।
বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে তার পরিমাণের প্রশ্নটিও জড়িত। মূলত বস্তুর পরিবর্তন ঘটে তার অণুর সাংগঠনিকতায়। অণুর সাংগঠনিতায় ক্রম পরিবর্তনে নতুন সাংগঠনিতার উদ্ভব ঘটে আর এই নতুন বিন্যাসই নতুন গুণসম্পন্ন বস্তু বলে দৃষ্ট হয়। প্রকৃতি বিজ্ঞানে এর সহজ দৃষ্টান্ত উত্তাপে কিংবা শৈত্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে পানির বাষ্প কিংবা বরফে রূপান্তরিত হওয়া। বস্তুর এই পরিবর্তনের একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, পরিবর্তনের পরিমাণ একটি বিশেষ আকার কিংবা মুহূর্ত প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বস্তুর বাহ্যিক গঠন অপরিবর্তিত বলে বোধ হয় এবং এই বাহ্যিক গঠনকে বিশেষ গুণ দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
পানিতে তাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি মুহুর্তে পানি পরিবর্তিত হয়ে বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। পানিকে তরল পদার্থ বলে আমরা চিহ্নিত করি। অথচ তাপের মাধ্যমে পানি নিরন্তর তরল হতে বাষ্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তথাপি যেহেতু উত্তাপের বিশেষ মুহুর্তের পূর্ব পর্যন্ত পানির তরলতা পরিবর্তিত হয়ে যায় না, এ কারণে এই বস্তুটিকে তার নিরন্তর পরিবর্তনশীলতা সত্ত্বেও একটা সময় পর্যন্ত পানি বলে অভিহিত করতে পারি। ফলে দেখা যাচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত বস্তুটি পানি, ততক্ষণ পর্যন্ত তার চরিত্র অবশ্যই তরল।
তথ্যসূত্র
১. সরদার ফজলুল করিম, দর্শনকোষ, প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২, পৃষ্ঠা ৩২৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।