বোলতা ও ভীমরুল বা কীটের কামড় ও হুলের ব্যথানাশের ঘরোয়া উপায়

বোলতা ও ভীমরুল হাইমেনোপ্টেরা বর্গের কীট। তবে বোলতা এক প্রকারের আক্রমণাত্মক হুল ফোটাতে ও উড়তে পারে এমন পতঙ্গ। বোলতার পেটের পেছনে ডিম পাড়ার অঙ্গটি পরিবর্তিত হয়ে হুল তৈরি হয়। যেটা দিয়ে এরা আক্রমণ করে থাকে। অনেক সময় এই হুল বিষাক্ত হতে পারে। বোলতার বিভিন্ন পোকামাকড়ের শুককীটের মধ্যে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বেরোন বাচ্চা পরজীবী শুককীট অন্য পোকার শুককীটকে খেয়ে বড় হয়। এই বোলতার বড় আকারেরটাকে ভীমরুল বলা হয়। অনেকের বোলতা বা ভিমরুল কামড় দিয়ে থাকে সেক্ষেত্র ঘরোয়া উপায়ে এর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়।

১. গোল মরিচ: বিষাক্ত পোকার জ্বালা যেমন বোলতা, ভীমরুল, কাঁকড়া, বিছে, ডাঁস যেসব কীট পতঙ্গ কামড়ালে বা হুল ফোঁটালে খুব ব্যথা ও কষ্ট হয়। আক্রান্ত হুলবিদ্ধ স্থানে অর্থাৎ জ্বালায় গোল মরিচ পানিতে ঘষে, তার সঙ্গে ২ থেকে ৫ ফোঁটা ভিনেগার মিশিয়ে লাগালে জ্বালাটা কমে যাবে।

২. মুথা:  বোলতার কামড়ে কিংবা বিছে হুল বসালে মুথা বেটে ওখানে লাগিয়ে দিয়ে থাকে গাঁয়ের লোকেরা, ওটাতে যন্ত্রণার উপশম হয়।

৩. জগডুমুর: বিড়াল, ইদুর, বোলতা, ভীমরুলে বা কোনো জানা অজানা বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে অথবা কুকুরের আঁচড়ে অর্থাৎ আঁচড়ে দিয়েছে এমন ক্ষেত্রে জগডুমুর লাগালে জ্বালা যন্ত্রণার উপশম হবে এবং ব্যথাও হবে না।

৪. কলমি শাক: বোলতা, ভীমরুল, মৌমাছি প্রভৃতির হুল ফুটানোর জ্বালায় এই কলমি শাক বেটে লাগালে জ্বালা কমে যায়। অগত্যা পক্ষে কলমীর ডগা ঘষে দিলেও উপকার হয়।

৫. জয়ন্তী: বোলতা, ভীমরুল বা বিছের হুলের বিষের জ্বালায় জয়ন্তীর বীজ বেটে বা ঘষে ওখানে লাগিয়ে দিলে বিষের জ্বালা প্রশমিত হবে।

৬. পুনর্নবার: বিছে বা ভীমরুল অথবা বোলতা এমন কি বিষাক্ত কীটের হুল ফুটিয়েছে এই হুলের জ্বালার অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকের আছে। যাঁর এ অভিজ্ঞতা হয়নি, তিনি যদি কখনও বিপাকে পড়েন, তাহলে পুনর্নবার রস করে ওখানে লাগিয়ে দিয়ে দেখবেন জ্বালার তীব্রতাটা কমে যাবে।

আরো পড়ুন:  ওজন কমানো-এর আটটি ঘরোয়া উপায়

৭. কুল: বিষাক্ত কীট কামড়ে যেমন বোলতা, ভীমরুল বা যে কোনো কীটের হুলের বিষের জ্বালা ও ফুলোয় ও শুয়োপোকা লাগার ফোলায় যজ্ঞডুমুর (Ficusrecemosa Limn.) ও কুলপাতা একসঙ্গে বেটে ওখানে লাগিয়ে দিলে জ্বালা ও যন্ত্রণার উপশম হবে এবং ফুলোও কমে যাবে, তবে কাঁকড়া বিছের হুলের জ্বালা কমাতে পারে না।

৮. তুলসী: কোনো কোনো স্থানে যেকোনো প্রকার পোকামাকড় এমন কি বোলতা বিছাতে কামড়ালে তুলসী পাতার রস লাগিয়ে থাকেন।

৯. ওল: ওলের ডগার আঠা লাগালে বোলতা বা ভীমরুলের কামড়ের জ্বালা দূর হয়।

১০. শিয়ালকাঁটা বা শেয়ালকাটা: শেয়ালকাটার মূল সামান্য পানির সাথে বেটে উক্ত পতঙ্গ কামড়ানো জায়গায় প্রলেপ স্বরূপ ব্যবহার করলে যন্ত্রণা থাকে না এবং ফোলাও কমে যায়।

তথ্যসূত্রঃ      

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩।

২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০।

৩. কবিরাজ বৈদ্যনাথ সেন, সম্পাদনায় কবিরাজ আ: খালেক মোল্লা লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা, সর্বস্বত্ব, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ২০০৯

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Bernie

Leave a Comment

error: Content is protected !!