স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ও চর্চা সম্পর্কে জানা

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব (ইংরেজি: The importance of health science) হচ্ছে স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ও চর্চা সম্পর্কে জানা এবং দৈনন্দিন জীবনে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করা। শরীর, স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি ইত্যাদি শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অনিবার্য এ বিষয়গুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ও পরস্পর নির্ভরশীল।

আমরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাতে বা আপনজনদের মঙ্গল প্রার্থনায় তাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। সন্তানের জন্য মায়ের প্রথম চাওয়া থাকে “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”। সচেতন এবং অসচেতন – যে ভাবেই হোক না কেন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ আমরা জানি যে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”। তাই স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা সবার জন্য জরুরী। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিজ্ঞানে সুস্থতার ধারণা ও সুস্থ থাকার উপায় ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

যে বিজ্ঞানে সুস্থ শরীরে দীর্ঘ জীবন লাভের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি আলোচনা করা হয় তাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলে। স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল ও ধারণা, সুস্বাস্থ্যের শর্তাবলি ও গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের অন্তর্ভুক্ত। এ পাঠে আমরা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও সুস্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনা করবো।

সুস্বাস্থ্য কী? 

সাধারণভাবে স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক সুস্থতা ও সক্ষমতাকে বোঝায়। যদিও সামগ্রিক অর্থে শরীর ও মনের মিলিত সুস্থতাই প্রকৃত সুস্বাস্থ্য। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একে অপরের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে জীবনযাপনের সামর্থ্যকে শারীরিক সুস্থতা বলে। শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক সুস্থতা একে অপরের পরিপূরক, প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল। তাই পরিপূর্ণভাবে সুস্থ থাকতে হলে শরীর ও মন উভয়ের সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। 

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্য

 নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন ১. স্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। ২. স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। ৩. স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ও কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা। ৪. সুস্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা ও সুঅভ্যাস চর্চা করা ইত্যাদি। 

আরো পড়ুন:  ক্ষীর, মালাই ও ছানা দুগ্ধজাত খাবারে আছে হরেক রকমের গুনাগুণ

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব 

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে আলোচিত বিষয়াদি যেমন- স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ও চর্চা ইত্যাদি পাঠ করলে সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে জানা যায়। স্বাস্থ্যনীতিসমূহ মেনে চললে রোগের কারণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। রোগ প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে ব্যবহারিক জীবনে তা প্রয়োগ করে সুস্থ থাকা যায়। অর্থাৎ, রোগের কারণ ও রোগ প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে রোগ হতে দূরে থেকে সুস্থ শরীরে দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। যেমন- আমরা সাধারণভাবে জানি যে, স্বাস্থ্যের উপর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ প্রভাব ফেলে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে সংক্রামক ব্যাধি তথা রোগ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। দূষিত পানি, দূষিত বায়ু, পচা, বাসি খাবার উন্মুক্ত জায়গায় ও অস্বাস্থ্যকরভাবে প্রস্তুত খাবার গ্রহণ, আবর্জনা ও মলমূত্র নিষ্কাশন অব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, স্যাঁতস্যাঁতে বাসস্থান ও কর্মস্থল ইত্যাদি রোগ বিস্তারে সহায়তা করে ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। বিশুদ্ধ পানি, মুক্ত বাতাস, পরিচ্ছন্ন পথঘাট, আলো ও বাতাসময় পরিবেশ, নিরাপদ ও পুষ্টিকর সুষম খাদ্য ইত্যাদি সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত। এসব জ্ঞান স্বাস্থ্যনীতি অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান আমাদের নিরোগ জীবনযাপনের পথ দেখায়। উন্নত জীবন ব্যবস্থা ও চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করা, শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা, দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবিধান করা, সেবা দেয়া ইত্যাদি স্বাস্থ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য। 

স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা গ্রহণে স্বাস্থ্যবিধির প্রচার ও প্রসার অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তবেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!