বয়স, দেহের ওজন, পরিশ্রমের ধরনের ভিন্নতায় খাদ্য ও ক্যালরি চাহিদা ভিন্ন হয়

সারাদিন আমরা নানা ধরনের কাজ করে থাকি। খাওয়া, গোসল, হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলা করা, বাগান করা, ঘর পরিষ্কার করা, রান্না করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, কাপড় ধোয়া, লেখাপড়া করা, সেলাই করা, টিভি দেখা, গল্প করা ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজ ছাড়াও আমরা কর্মক্ষেত্রে যার যার নিজের নিজের কাজ করি। এসব কাজে শারীরিক পরিশ্রম হয়। এ পরিশ্রম করার জন্য প্রয়োজন হয় শক্তি।

আমরা জানি যে, খাদ্য থেকেই শক্তি উৎপন্ন হয়। তাই, জীবনধারণের জন্য আমাদের প্রয়োজন শক্তি তথা খাদ্য। লিঙ্গ, বয়স, দেহের ওজন, পরিশ্রমের ধরন ইত্যাদির তারতম্যের কারণে ব্যক্তিবিশেষের শক্তি এবং খাদ্য চাহিদা (ইংরেজি: Food and calorie demand) ভিন্ন ভিন্ন হয়।

খাদ্য চাহিদা

বয়স, লিঙ্গ, দেহ ওজন, শারীরিক অবস্থা, পরিশ্রমের ধরন ইত্যাদির তারতম্যের কারণে একেক জনের খাদ্য চাহিদাও একেক রকম হয়। যেমন, শিশু ও বাড়ন্ত বয়সে দেহ গঠন ও বৃদ্ধিসাধনের প্রয়োজনে আমিষের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এ বয়সে খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করার কারণে শক্তি ক্ষয় বেশি হয়। সেজন্য শৈশব ও কৈশোরে শর্করা ও স্নেহ পদার্থের চাহিদাও বড়দের তুলনায় বেশি থাকে। পরিণত বয়সে অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়সে দেহ গঠন সম্পন্ন হয়ে যায় এবং বৃদ্ধিসাধন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় দেহ গঠনকারী প্রোটিনের চাহিদা বাড়ন্ত বয়সের তুলনায় কমে আসে। একইভাবে বড়রা খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি তেমন করে না বলে শর্করা ও স্নেহ পদার্থের চাহিদাও কমে যায়। তবে, খেলোয়াড়রা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে বলে তাদের খাদ্য চাহিদা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের প্রোটিন, শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ ইত্যাদি খাদ্য উপাদানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিশোরী ও নারীদের লৌহের চাহিদা বেশি থাকে। এদের খাদ্য পরিকল্পনার সময় এ জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয়।

ক্যালরি ও কিলোক্যালরি 

কাজ করার জন্য শক্তি প্রয়োজন। কাজের ধরনভেদে শক্তির প্রয়োজন কম-বেশি হয়। শক্তি পরিমাপের একক হলো ক্যালরি। খাদ্য হতে উৎপন্ন শক্তি পরিমাপের জন্য একক হিসেবে কিলোক্যালরি ব্যবহার করা হয়। ১ কিলোগ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে ১ কিলোক্যালরি শক্তি বলা হয়। যেমন

আরো পড়ুন:  স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি অনুসারে খাদ্য উপাদান হচ্ছে ছয় ধরনের খাদ্যের সমষ্টি

১ গ্রাম শর্করা হতে প্রায় ৪ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। 
১ গ্রাম প্রােটিন হতে প্রায় ৪ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় 
১ গ্রাম স্নেহপদার্থ হতে প্রায় ৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়

শক্তি চাহিদা 

শ্রমভেদে দেহের শক্তি চাহিদা বিভিন্ন হয়। সব ধরনের কাজকে মোটামুটি তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়

হালকা শ্রম: বই পড়া, সেলাই করা, ছবি আঁকা, টিভি দেখা ইত্যাদি।

মাঝারি শ্রম: কাপড় কাচা, সাইকেল চালানো, বাগানে কাজ করা, খেলাধুলা করা, দৌড়ানো, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা ইত্যাদি।

ভারি শ্রম: রিক্সা চালানো, গাছ কাটা, শরীরচর্চা, ফুটবল খেলা, মাটি কাটা, পাহাড়ে চড়া, ঠেলাগাড়ি চালানো, নির্মাণ কাজ করা, ইত্যাদি।

দেহের ওজন বেশি হলে এসব শ্রমে শক্তি ব্যয় আরো বৃদ্ধি পায়। নিচে প্রতি কিলোগ্রাম দেহ-ওজনের জন্য প্রতি ঘন্টায় শক্তি (কিলোক্যালরি) ব্যয়ের তালিকা দেয়া হলো 

শ্রমের ধরনশক্তি ব্যয় কিলোক্যালরি/ঘন্টা/দেহওজন (কেজি)
হালকা শ্রম১.৫-৩.০
মাঝারি শ্রম৩.০-৫.০
ভারি শ্রম৫.০-১০.০

ব্যয়িত শক্তি পরিমাপ পদ্ধতি 

কোন কাজের জন্য কতটুকু শক্তি ব্যয় হয় তা উপরের তালিকা থেকে অনুমান করা যায়। এ হিসেবে কোনো কাজের জন্য কোনো ব্যক্তির কত শক্তি ব্যয় হয় তা নির্ণয় করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মনে করি একজন উঠতি বয়সের খেলোয়াড়ের দেহের ওজন ৫০ কেজি। সকালের শরীরচর্চা করার জন্য সে ২ ঘন্টা সময় ব্যয় করে। শরীরচর্চার মাত্রা অনুযায়ী একে ভারি কাজ হিসেবে ধরা হয়। মনে করি তার ঘন্টায় প্রতি কেজি দেহওজনের জন্য ৫ কিলোক্যালরি শক্তি ব্যয় হয়। সুতরাং ২ ঘন্টা শরীরচর্চার জন্য ব্যয়িত শক্তি হলো:

৫০ কেজি x ২ ঘন্টা X ৫ = ৫০০ কিলোক্যালরি 

এভাবে কোনো কাজের জন্য ব্যয়িত শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।

বয়স অনুযায়ী ক্যালরি ও খাদ্য উপাদানের দৈনিক চাহিদা  

বয়স (বছর)শক্তি (কিলোক্যালরি)প্রোটিন (গ্রাম)ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম)লৌহ (মিলিগ্রাম)ভিটামিন এ (মিলিগ্রাম)
কিশোর (১৩-১৮)২৫০০-৩০০০৫৫-৬০৫৫০-৬৫০১২-১৫৭৫০  
কিশোরী (১৩-১৮)২২০০ (প্রায়)৫০  ৫৫০-৬৫০২০-২৫  ৭৫০  
পুরুষ (১৮+)২৫০০ (প্রায়)৫৫৫০০১০৭৫০
নারী (১৮+)১৯০০ (প্রায়)৪৫৪৫০২৫-৩০৭৫০

বয়স, লিঙ্গ, দেহওজন, শারীরিক অবস্থা, শ্রমের প্রকৃতি ইত্যাদির পার্থক্যের কারণে একেক জনের খাদ্য ও ক্যালরি চাহিদায় তারতম্য ঘটে। শক্তি চাহিদা বা ব্যয়িত শক্তির পরিমাপ করতে হলে শ্রমের ধরন এবং ব্যক্তির দেহওজন জানতে হবে। কোনো কাজের জন্য ব্যয়িত শক্তি পরিমাপ করতে হলে নির্দিষ্ট শ্রমের জন্য ব্যয়িত কিলোক্যালরিকে দেহ ওজন ও ঘন্টা দিয়ে গুণ করতে হবে। তবেই মোট ব্যয়িত শক্তি পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:  ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষা হচ্ছে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলা

1 thought on “বয়স, দেহের ওজন, পরিশ্রমের ধরনের ভিন্নতায় খাদ্য ও ক্যালরি চাহিদা ভিন্ন হয়”

  1. What a fantastic post! This is very important and useful information. I read a lot of blog posts and this kind of nice information from your blog is very few websites. I love these posts. The post carries very insightful information.

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!