শিমুল আলু বা কাসাভার চাষ পদ্ধতি ও আটা প্রস্তুত প্রণালী

শিমুল আলু (ইংরেজি: Cassava)-এর আদি জন্মস্থান আমেরিকা। ১৮৪০ সালে পুর্তগীজদের দ্বারা ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এই আলুর বিস্তার হয়। বর্তমানে পণ্ডিচারী, দমন, দিউ ও গোয়া প্রভৃতি স্থানে অধিক পরিমাণে এর চাষ হয়ে থাকে। দুর্ভিক্ষের সময় এটা খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। এই আলু দুই রকম। ইংরেজি নাম কসাভা।

গাছের পরিচয়: শিমুল আলু বা কসাভা গাছ রেড়া গাছের ন্যায় লম্বা, পাতা শিমূল গাছের পাতার ন্যায়। পাতার উপরিভাগ গাঢ় সবুজবর্ণ, নীচের দিক ফিকে সবুজ বর্ণের। একই ডাঁটায় স্ত্রী ও পুং ফুল জন্মে থাকে। স্ত্রী পুষ্প অপেক্ষা পুরুষ পুষ্প আকারে ক্ষুদ্র এবং পুং পুষ্প স্ত্রী পুষ্পের উপরে থাকে। ফুলগুলির বহির্ভাগ গাঢ় লালবর্ণের আভাযুক্ত সবুজ, ভিতর সামান্য লালের আভাযুক্ত সবুজ। বীজগুলি দেখতে কৃষ্ণবর্ণ, গাছের মূল দেখিতে ধূসর ও লালের আভাযুক্ত। মূলের ভিতর শ্বেতবর্ণ। প্রায়ই ভারতে মিষ্টি কসাভা গাছের ফুল হয় না।

চাষাবাদ: শিমুল আলু গাছে সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নাই। এই গাছের ডাল ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি করে কাটে বেড়ার গায়ে পুতে দিলে তা বেড়ার কাজ করবে। জমির মাটি গভীর ভাবে কোপানোর পরে চাষ দিয়ে চার হাত অন্তর ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা ডালগুলি একটু বাঁকা করে বৈশাখ মাসে বৃষ্টির পর পুঁতে দিতে হবে এবং প্রতি ২ মাস অন্তর গাছের গোড়া পরিষ্কার করে খুঁচে দিতে হবে। শীতের শেষ হতেই লাগিয়ে দিলে ভালভাবে বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন: শিমুল আলু বা কাসাভা হচ্ছে শর্করা জাতীয় কন্দজ গুল্ম

এই কসাভাকে পূর্ববঙ্গে শিমূল আলু, মেদিনীপুরে সকরকন্দ আলু বলে। গাছগুলি ৪ ফুট হইতে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতি গাছে ৪ থেকে ৫ সের হইতে অর্ধ মণ পর্যন্ত আলু বা মূল হয়। এটা থেকে ময়দা প্রস্তুত হয়ে থাকে। এই গাছ পশ্চিম বাংলা বা বাংলাদেশের সর্বত্র উচু জমিতে হতে পারে। মিষ্টি জাতীয় গাছ লাগান ভাল, তবে গরম জলে সিদ্ধ করিলে সামান্য তিক্ততা চলিয়া যায় ।

আরো পড়ুন:  লম্বা পাতা মাকাঞ্চি বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মানো গুল্ম

ময়দা প্রস্তুত প্রণালী: মূলগুলি মাটি হতে তুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ধারাল ছুরি দ্বারা কাটে টুকরা টুকরা করে ১ ঘণ্টা জলে ভিজাইয়া রেখে চেঁকিতে কুঁটে মণ্ড তৈরী হলে কাপড়ে বেঁধে ছানার জল ফেলার ন্যায় ভারি জিনিষ চাপা দিয়া রাখিতে হইবে। তাহাতে তিক্ত ও বিষ পদার্থ বাহির হয়ে যাইবে। পরে উক্ত মণ্ড ঠান্ডা পানি বা জলে গুলিয়ে কিছু সময় পরে ধীরে ধীরে উপরের জল ঢেলে ফেলতে হবে। নিচের দ্রবময় পদার্থ শুকালে ময়দা হইবে। গমের ময়দা সহ মিশিয়ে আটার রুটির ন্যায় রুটি, লুচি হালুয়া ইত্যাদি প্রস্তুত হবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. ডা: শ্রীযামিণী রঞ্জন মজুমদার: খাদ্যশস্য, মি: বি ছত্তার, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৫১, পৃষ্ঠা, ৯৪-৯৬।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Renatosjoao

Leave a Comment

error: Content is protected !!