সর্দি: রাইনোভাইরাস এবং অন্য অনেক ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে নাকের ভিতরকার বিলীর প্রদাহ হলে সর্দি হয়। ছোটদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা গেলেও কম-বেশি সকলেই কোনো না কোনো সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সর্দি একটি সংক্রামক অসুখ। বাচ্চারা সাধারণত স্কুলে অন্য বাচ্চার কাছ থেকে সংক্রামিত হয়ে থাকে। ভাইরাস নাকে ঢোকার দু’একদিন বাদে প্রদাহের সৃষ্টি করে ও সর্দির লক্ষণ দেখা যায়। হাঁচি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও নাক দিয়ে পানিপড়া হল এই রোগে লক্ষণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলার ভিতরে ইউস্টেশিয়ান টিউবের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গিয়ে কান ব্যথা বা নাকের পাশে থাকা সাইনাসের মুখ বন্ধ হওয়ার জন্যে সাইনাসের প্রদাহ ইত্যাদি উপসর্গও হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি থেকে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস বা ব্রঙ্কোনিমোনিয়ার উৎপত্তি হতে পারে। চিকিৎসা করা হোক বা না হোক, সর্দি ৪ থেকে ৯ দিনের মধ্যে নিজেই সেরে যায়। সে জন্যেই বোধ হয় একটি প্রবাদ আছে, ‘সর্দির চিকিৎসা করলে সারতে লাগে ৭ দিন না করলে এক সপ্তাহ।’ বাবা-মায়েরা যদিও বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লাগবে এই ভয়ে তাদের আপাদমস্তক না মুড়ে শীতকালে রাস্তায় বের করেন না, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় কিন্তু আবহাওয়ার তাপমানের সঙ্গে সর্দির কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না।
কাশি: কাশি (ইংরেজি: Cough) হলো শ্বাসনালীতে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ বাইরে বরে করে দেয়ার একটা উপায়। কাশি এমন এক প্রকিয়া যা মানুষ স্বেচ্ছায় করতে পারে, আবার প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও হতে পারে। কাশির সাহায্যে শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখা যায়, ফলে ক্ষতিকর কোনো জীবাণু বা পদার্থ ফুসফুসে পৌঁছতে পারে না। সেই অর্থে কাশি একটি জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া। আবার অন্যদিক থেকে দেখলে নানারকম শারীরিক অসুখ বিসুখের একটি প্রধান উপসর্গই হল কাশি। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডাক্তারের কাছে রোগীরা যত রকম উপসর্গ নিয়ে হাজির হন, কাশি তাদের মধ্যে অন্যতম।
শ্বাসনালীর বা ফুসফুসের যে কোনো অংশে প্রদাহ হলে কাশির উদ্রেক হয়। এই প্রদাহের কারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ধূমপান, অতিরিক্ত ধুলো বা ধোয়ার শ্বাসনালীতে প্রবেশ ইত্যাদি। শ্বাসনালীর টিউমার হলেও রোগীকে অনেক সময়ে কাশতে দেখা যায়। এছাড়া হৃদযন্ত্রের নানাবিধ অসুখেও কাশি হয়ে থাকে। সবশেষে হাঁপানি জাতীয় অসুখে কাশির কথা বলা প্রয়োজন। এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর প্রদাহ ও অতিরিক্ত সংকোচনের ফলে কাশির সৃষ্টি হয়।
অনেক সাধারণ রোগেও যেমন কাশি হয়, তেমনি অনেক মারাত্মক রোগও কাশির মাধ্যমে জানান দিতে পারে। কাজেই কাশিকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেয়া উচিত।
কাশি প্রতিকারের উপায়:
সর্দি ও কাশি যদি দীর্ঘদিন থাকে তাহলে অবশ্যয় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এছাড়া ঋতু পরিবর্তনের কারণে সর্দি কাশি হলে ভেষজ পদ্ধতিতে ঘরোয়া উপায়ে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। যেমন কাশি হলে অনেকেই তুলশি পাতার রস মধু দিয়ে খাওয়ায়। এছাড়া বাজারে বাসক পাতার সিরাপ পাওয়া যায় তাতেও বেশ উপকার হয়। কিছু আমরা যদি নিয়ম মেনে বাড়িতেই সর্দি ও কাশি-র চিকিৎসা শুরু করি সেটাও ফলস্রুত হবে। লিংকে গেলে কিছু ভেষজ চিকিৎসার সঠিক পদ্ধতি জানা যাবে- কাশি নিরাময়ে ঘরোয়া কয়েকটি ভেষজ চিকিৎসা।
তথ্যসূত্রঃ
১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১৫ ও ২১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।