রুশ সাহিত্যের ব্যক্তিত্ব তলস্তয় নিজের লেখায় দেখিয়েছেন রুশ প্রাক-বৈপ্লবিক জীবন

কাউন্ট লিও তলস্তয় বা টলস্টয়কে (ইংরেজি: Lev Nikolayevich Tolstoy; ২৮ আগস্ট ১৮২৮ – ২০ নভেম্বর ১৯১০) রুশ সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নিজের লেখা গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধে তলস্তয় দেখিয়েছেন ১৯০৫ সালের প্রথম রুশ প্রাক-বৈপ্লবিক রাশিয়ার জীবন। তিনি তার লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন সেই সময়ের পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতি যাতে গড়ে উঠত রুশ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও স্তরের মানস গঠন ও বিভিন্ন রূপ।[১]

রাশিয়ার কাউন্ট তলস্তয়কে যুগাবতার বললেও অত্যুক্তি হয় না। সকল দেশেই দেখা যায়, সাধারণত মধ্যবিত্ত অবস্থাপন্ন শ্রেণিতেই ধর্মবীর, সাহিত্যরথী, বিজ্ঞানাচার্য, রাজনীতিক নেতা প্রভৃতির আবির্ভাব হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সে নিয়মের ব্যতিক্রম হয়। কাউন্ট তলস্তয় তাহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি রাশিয়ার ক্ষমতাগর্বিত স্বাধিকার প্রমত্তবিলাসী অভিজাত সম্প্রদায়ে জন্ম গ্রহণ করে সমাজের দরিদ্র, অজ্ঞাত ও উপেক্ষিত লোকের দুঃখে অশ্রুবিসর্জন করেছেন। তার শিক্ষা যদি জগতে গৃহীত হয় তবে এই শোকদুঃখময় সংসার নন্দনে পরিণত হবে। যখন জার্মান যুদ্ধে বিধ্বস্ত হবার পূর্বে রাশিয়ার অবস্থা বিবেচনা করা যায়, তখন সেই দেশে বিলাসী অভিজাত সম্প্রদায়ে টলস্টয়ের আবির্ভাব পঙ্কিল সলিল পঙ্কজের বিকাশের মতই বোধ হয়। যে প্রাকৃতিক নিয়মে পঙ্কিল জলে পদ্মের ও অভিজাত সম্প্রদায়ে টলস্টয়ের আবির্ভাব সে নিয়ম যে ব্যতিক্রম তা প্রায় সকলেই বলবে?[২]

টলস্টয় ঋষি—টলস্টয় সাহিত্য-শিল্পী। টলস্টয়ের ঋষিত্ব-গৌরব অধিক কি সাহিত্য-শিল্পীর কৃতিত্ব অধিক, তার বিচারে আমরা প্রবৃত্ত হবার দরকার নেই। তবে এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তার সাহিত্য-সাধনাও শেষে তার উদার মতে প্রভাবিত হয়েছিল ; তিনি সাহিত্যের পথে তাহার মত জগতে ব্যক্ত করেছিলেন।

টস্টয়ের মত প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক পৃথিবীতে অল্প। তার রচনায় জটিল মনস্তত্বের যেরূপ বিশ্লেষণ দেখা যায়—মানব চরিত্রাতিজ্ঞতার যে পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়, তা সচরাচর দেখা যায় না। বিশেষ তাহার উপন্যাসে সমসাময়িক রুশ সমাজের যে চিত্র মানসপটে প্রতিফলিত হয় তা সযত্নে সংরক্ষিত হবার উপযুক্ত।

আরো পড়ুন:  অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও আলোকচিত্রী

আনন্দের বিষয় বাঙ্গালী পাঠক বিশ এবং একুশ শতকে টলস্টয়ের রচনার সহিত পরিচিত হয়েছেনন। রুশ সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বাংলা ভাষায় এখন সুলভ। আমরা আশা করি, বাঙ্গালী পাঠক টলস্টয়ের এই রচনা পাঠ করিয়া আনন্দ ও শিক্ষা লাভ করবেন এবং তাদের আদরে উৎসাহিত হয়ে গ্রন্থকার আমাদিগকে তলস্তয়ের আরও রচনা উপহার দিবেন।

তথ্যসূত্র

১. ভি. আই. লেনিন, অনুপ সাদি সম্পাদিত সাহিত্য প্রসঙ্গে টাঙ্গন, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২০, পৃষ্ঠা ২৪

২. হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, ভূমিকা, টলস্টয়ের গল্প, বৃন্দাবন ধর এণ্ড সন্স লি. কলকাতা, দ্বাদশ সংস্করণ ১৩৬২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!