ভূমিকা: ওল কচু (বৈজ্ঞানিক নাম: Amorphophallus paeoniifolius, ইংরেজি নাম: এলিফ্যান্ট-জাম) হচ্ছে Araceae পরিবারের কন্দ প্রজাতি। এতে নানা ভেষজ গুণ আছে।
ওল কচু-এর বর্ণনা:
ঋজু বীরুৎ, গুঁড়িক অবদমিত গোলাকার, ৫.৫-১৫.০ x ১৮-২৫ সেমি, বহিঃর্ভাগ ঘন পিঙ্গল। পাতা একল, বৃন্ত দৃঢ়, ৯০-১৪০ x ৪-৮ সেমি, হালকা সবুজ, সাদা দাগ যুক্ত কখনও অমসৃণ, ফলক আঁড়াআড়ি ৩০-৯০ সেমি, ত্রিপক্ষীয়, পার্শ্বীয় খন্ডসমূহ পুনরায় দ্বৈভাগিক এবং চূড়ান্ত রূপে ১০-২০ সেমি লম্বা, পর্বলগ্ন, দীর্ঘায়ত, দীঘাগ্র খন্ডকে বিভক্ত।
পুষ্পবিন্যাস ক্ষুদ্র মঞ্জরী দন্ড যুক্ত, ৪.৫-৮.০ x ১-২ সেমি, বৃন্তের মতো দাগ যুক্ত, চমসা প্রশস্ত ঘন্টাকার, ১৫-২৮ x ১০-২২ সেমি, বৃন্তের মতো দাগ যুক্ত, চমসা। প্রশস্ত ঘন্টাকার, ১৫-২৮ x ১০-২২ সেমি, প্রান্ত তরঙ্গিত ও কুঞ্চিত, মূলীয় অংশ সংবর্ত ও উপরের অংশ প্রসারিত, বাহির সাদা দাগযুক্ত হালকা সবুজ, ভিতর হলুদাভ অংশসহ ঘন রক্ত বেগুনি।
আরো পড়ুন: ওল বা ওলকচু খাওয়ার ষোলটি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা
স্পেডিক্স দৃঢ় ও অবৃন্তক, ১৮-৪০ সেমি, স্ত্রীপুষ্পংশ নিচে, ৪-১১ সেমি লম্বা, পুং পুস্পাংশ। প্রায় ৩-৬ সেমি, উপাঙ্গ নগ্ন, বন্ধ্যা, সবুজাভ রক্তবেগুনি, অনিয়মিত খন্ডায়িত, ভিতর স্পঞ্জী ও সাদা, খাটো বা লম্বা, শাঙ্কব, গোলাকার বা সুক্ষাগ্র শীর্ষ, ৪-১৫ x ৩-৮ সেমি, স্ত্রীপুষ্প অসংখ্য, গর্ভাশয় অর্ধবর্তুলাকার থেকে ডিম্বাকার, ২-৩ প্রকোষ্ঠী, ডিম্বক প্রতি প্রকোষ্ঠে ১টি, এ অধোমুখী, গর্ভদন্ড গর্ভাশয়ের দ্বিগুণ লম্বা, গর্ভমুণ্ড ২-৩ খন্ডক, বৃক্কাকৃতি, হালকা হলুদাভ সাদা, পুংপুষ্প ঘন সুবিন্যস্ত, উল্টো শাঙ্কব আকৃতির, পরাগধানী অবৃন্তক, ২ খন্ডক, হলুদাভ সাদা, শীর্ষর বিদারী। ফল ডিম্বাকৃতি। বেরি, ২-৩ বীজী, কমলা থেকে লাল রঙের।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮ (Petersen, 1989)।
চাষাবাদ: অরণ্য ও বাগানের বড় গাছের ছায়াযুক্ত সেঁতসেঁতে স্থানে জন্মে। ওল কচু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বংশ বিস্তার হয় অপত্য গুঁড়িকন্দের সাহায্যে সহজেই প্রজনন চলে। ফুল ও ফল ধারণ মে-নভেম্বর।
বিস্তৃতি: শ্রীলঙ্কা, ভারত, মায়ানমার, জাভা (ইন্দোনেশিয়া)। বাংলাদেশে সহজলভ্য এবং প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।
ওল কচু-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
সবজিরূপে। বাংলাদেশের সর্বত্রই ব্যবহৃত। এর ভেষজ বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট। পেটের পীড়া, ফোড়া, হাঁপানি রোগ, বমনোদ্রেককর অবস্থা, গোদ, অর্শ বাত, রক্তের ব্যাধি, প্লীহার স্ফীতি প্রভৃতি নিরাময়ের জন্য এর কন্দ উপকারী। গাছের উপরের অংশ। কানের ব্যথা, গলা ফুলা, ফুসকুড়ি, কলেরা, উদরাময়, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় ইত্যাদি অসুখ সারাতেও ব্যবহার হয় (Ghani, 2003)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বাত নিরাময়ের জন্য বাংলাদেশে ভাজা ওল ব্যবহারের প্রচলন আছে। এর রস বিষাক্ত পোকামাকড় কর্তৃক দংশনের স্থানে প্রয়োগ করা হয়।
ওল কচু-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ওল কচু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ওল কচু সংরক্ষণের জন্য কিছু গাছ বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে লাগানো আছে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. হোসনে আরা (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯-৪০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Shijan Kaakkara
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।