ভূমিকা: কালমেঘ (বৈজ্ঞানিক নাম: Andrographis paniculata) একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর সাধারণ গুণ হলো- এটি তিক্তরস, অগ্নিপীপক, রুচিকর, রেচক, বলকারক, কৃমিনাশক, জ্বরাতিসবার নাশক।
কালমেঘ-এর বর্ণনা:
ঋজু বা কখনও অর্ধ-ঋজু, সন্ধিল বিটপযুক্ত একবর্ষজীবী বীরুৎ, ৩০-৮০ সেমি উঁচু, কাণ্ড চতুষ্কোণী মসৃণ। পাতা সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ৪-১০ মিমি লম্বা, পত্রফলক ০.৫-১২.০ x ১.৫-২.৫ সেমি, বল্লমাকার, অখন্ড , দীর্ঘাগ্র, ৪-৬ শিরাল, মসৃণ, শুধুমাত্র মধ্যশিরা এবং শিরাগুলি সামান্য রোমশ, গাঢ় সবুজ বর্ণের।
আরো পড়ুন: কালমেঘ-এর ভেষজ গুণাগুণ ও ঘরোয়াভাবে প্রয়োগ পদ্ধতির বর্ণনা
পুষ্পগুলি শিথিল যৌগিক মঞ্জরীতে সজ্জিত, ৩-৯ সেমি লম্বা, সাথে ১-৫ মিমি লম্বা বৃন্তযুক্ত, গ্রন্থিযুক্ত রোমশ। মঞ্জরীপত্র ২ মিমি লম্বা, বল্লমাকার, মঞ্জরীপত্রিকা অবিকশিত। বৃত্যংশ ৪ মিমি লম্বা, রৈখিক-বল্লমাকার, খন্ডাংশ সমান, বাইরের দিকে গ্রন্থিযুক্ত রোমশ। দলমণ্ডল প্রায় ১.৬ সেমি লম্বা, নিচের ওষ্ঠের গোড়ার দিকের ভিতরে সাদা বা ফ্যাকাশের সাথে গাঢ় গোলাপি বা গাঢ় রক্তাভ বেগুনী দাগ থাকে, উপরের ওষ্ঠ শীর্ষে খাজযুক্ত বা ২-দপ্তর, নিচের ওষ্ঠ গভীরভাবে ৩ খন্ডযুক্ত, বাইরের দিকে গ্রন্থিযুক্ত রোমশ।
পুংকেশর ২টি, পুংদণ্ডের উপরের দিকে রোমযুক্ত, বহির্মুখী, পরাগধানীর কোষগুলো দীঘায়ত, গোড়া শ্মশ্রুল। গর্ভাশয় একটি ছোট চাকতির মধ্যে অবস্থিত, ডিম্বক ৮-১২টি, মসৃণ বা গ্রন্থিযুক্ত, রোম অল্প পরিমানে বিদ্যমান, গর্ভদণ্ড সরু, গর্ভমুণ্ড সূক্ষ্মভাবে দ্বি-খন্ডিত।
ফল ক্যাপসিউল, ১.৫-৩.০ x ০.৪ সেমি, কচি অবস্থায় হালকা গ্রন্থিযুক্ত রোম বিদ্যমান। পূর্ণতাপ্রাপ্ত অবস্থায় মসৃণ, রৈখিক-দীর্ঘায়ত, শীর্ষের দিকে সূচাগ্র এবং গোড়ার দিক সূক্ষ্মাগ্র। বীজগুলি ২ মিমি লম্বা, অর্ধচতুষ্কোণ, মসৃণ, হলুদাভ-বাদামী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৮, ৫০ (Kumar and Subramaniam, 1986 )
চাষাবাদ: বাগান, বসত বাড়ীর আশে পাশে এবং পরিত্যক্ত জমি। ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর থেকে মে মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারত, শ্রীলংকা এবং ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ। বাংলাদেশের সর্বত্র ইহা পাওয়া যায়, বিশেষভাবে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ী জেলায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
এই উদ্ভিদ তিক্ত টনিক এবং জ্বরনাশক হিসেবে ব্যবহৃত ঔষধের একটি উপাদান। ইহা সংকোচক বেদনা উপশমকারী টনিক এবং স্মৃতিবর্ধক, আমাশয়, কলেরা, বক্ষব্যাধি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, চুলকানি এবং অর্শ রোগে ব্যবহৃত হয়। চিরতার বিকল্প হিসেবে ইহা মাঝেমধ্যে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদের ক্বাথ যকৃতের নিষ্ক্রিয়তায় এবং জণ্ডিস রোগে ব্যবহার করা হয়। পাতা এবং মূল জ্বরনাশক এবং কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় (Ambasta, 1986 )।
কালমেঘ-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে শিশুদের যকৃত এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের জন্য কালমেঘ নামের যে ভেষজ ঔষধ দেয়া হয় সেটি এই গাছের তাজা পাতা থেকে তৈরী করা হয়। পটুয়াখালী জেলার চাকমা এবং অন্যান্য আদিবাসীরা এই গাছের তাজা পাতার রস জণ্ডিস এবং রক্ত বিশুদ্ধকারী ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কালমেঘ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যদিও এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ নেই তবে ঔষধ ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত আহরণের কারণে প্রজাতিটির বিলুপ্তির আশংকা আছে। বাংলাদেশে কালমেঘ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বেশী করে চাষ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. মমতাজ বেগম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ৬-৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: H. Zell
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।