ভূমিকা: শিমুল আলু (বৈজ্ঞানিক নাম: Manihot esculenta) বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বর্তমানে বাজারে প্রায় দেখা যায়। এই আলু দিয়ে ময়দা বানানো যায়; যা দিয়ে রুটি তৈরি করে খাওয়া যায়।
শিমুল আলু বা কাসাভা-এর বর্ণনা:
রোমশ বিহীন বা সামান্য রোমশ গুল্ম, প্রায় ৫ মিটার উঁচু, কন্দমূল গোলাকার, প্রায় ৫০ সেমি লম্বা, বাকল মসৃণ, লালাভ। পত্র সোপপত্রিক, উপপত্র ত্রিকোণাকার ভল্লাকার, ৫-৭ মিমি লম্বা, অখন্ড বা ১-২টি শক্ত রোম সদৃশ খন্ডিত, বৃন্ত ৫-২০ সেমি লম্বা, ৩-৯ করতলাকার খন্ডিত, সরু তাম্বুলাকার, পত্রফলক বিভল্লাকার থেকে সরু উপবৃত্তাকার, ৬-১৮ x ১-৫ সেমি, দীর্ঘা, অখন্ড, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, নিচের পৃষ্ঠ উজ্জ্বল, পার্শ্বীয় শিরা ১৮ জোড়া। পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয় বা কাক্ষিক রেসিম, ৫-১০ সেমি লম্বা। মঞ্জরী পত্র দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার।
আরো পড়ুন: শিমুল আলু বা কাসাভার চাষ পদ্ধতি ও আটা প্রস্তুত প্রণালী
পুংপুষ্প: সবৃন্তক, বৃন্ত ৪-৬ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৪ x ৬ মিমি, দীর্ঘায়ত ডিম্বাকার, অর্ধসূক্ষ্মাগ্র, সবুজাভ, কমলা ও লাল দাগযুক্ত, অভ্যন্তর রোমশ, পুংকেশর ১০টি, লম্বা পুংদন্ড ৭ মিমি, খাটো পুংদন্ড ৩ মিমি লম্বা, সরু পরাগধানী ১.৫ মিমি লম্বা, ৭ উপর সাদা রোমশ, চাকতি অবতল, ১০ খন্ডিত। স্ত্রীপুস্প: বৃন্ত ৬ মিমি লম্বা বৃত্যংশ ১০ x ৫ মিমি, ত্রিকোণাকারডিম্বাকার, চাকতি ৫ খন্ডিত, গর্ভাশয় ডিম্বাকার, ২ × ২ মিমি, অনুদৈর্ঘ্য ৬টি কোনযুক্ত, গর্ভদন্ড ১.৫ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড বক্র। ফল ক্যাপসিউল, উপবৃত্তাকার, ৬টি পযুক্ত। বীজ সামান্য ত্রিকোণাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৬ (Jos and Nair, 1979).
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার:
সুনিষ্কাশিত জমিতে চাষাবাদকৃত। শিমুল আলু গাছে সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নাই। শীতের শেষ হতেই লাগিয়ে দিলে ভালভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফুল ও ফল ধারণ সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি। বংশ বিস্তার হয় বীজে বংশ বিস্তার।
বিস্তৃতি: আদিনিবাস ব্রাজিল। পৃথিবীর সর্বত্র এখন চাষাবাদ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদ করে ।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
উদ্ভিদের রস বিষাক্ত। মুল থেকে সাগু সদৃশ শস্য পাওয়া যায়। রাইজোম। পুলটিসরূপে আলসার রেগে ব্যবহার করা হয়। ফল মাছের বিষপ্রয়োগে ব্যবহার করা হয় (Kirtikar et al., 1935)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: গিনিতে কন্দমূল সিদ্ধ করে বিরেচকরূপে গ্রহণ করা হয়। কম্বোডিয়ায় বিচূর্ণ মূল আলসার নিরাময়ে এবং ব্রাজিলে মাংস সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয় (Caius, 1998)।
শিমুল আলু বা কাসাভা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শিমুল আলু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে শিমুল আলু সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৪৬৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Renatosjoao
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।