জাগমদন এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ গুণ সম্পন্ন গুল্ম

গুল্ম

জাগমদন

বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia gendarussa সমনাম: Gendarussa vulgaris Nees (1832). ইংরেজি নাম: Gendarussa. স্থানীয় নাম: জগৎমদন, জাগমদন, বিষআলা, বিষদালানী, জুগা-জবি।

ভূমিকা: জাগমদন (বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia gendarussa) এশিয়া জন্মানো ভেষজ গুল্ম। বাগান বা সীমানা ঘেরার জন্য এর ব্যবহার খুব হয়।

জাগমদন-এর বর্ণনা:

ছোট গুল্ম, শাখা ঘন রক্তবর্ণ, মসৃণ। পাতা সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ১ সেমি লম্বা, পত্রফলক ৯-১৫ X ২-৩ সেমি, রৈখিক-বল্লমাকার, উভয় পৃষ্ঠ মসৃণ, অখন্ড। পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয় বা কাক্ষিক স্পাইক অথবা স্পাইকের যৌগিক মঞ্জরী। পুষ্প অর্ধবৃন্তক, ভিতরে রক্ত বর্ণের আঁকাবাকা ডোরা ও বিন্দু বিশিষ্ট, সাদা। মঞ্জরীপত্র ৩-৪ মিমি লম্বা, বল্লমাকার, মঞ্জরীপত্রিকা অনুপস্থিত। বৃতি প্রায় নিম্নাংশ পর্যন্ত ৫-খন্ডিত, খন্ডগুলি ৪-৫ মিমি লম্বা, রৈখিক, বল্লমাকার, দীঘাগ্র।

দল নল বেলনাকৃতি, প্রায় ১ সেমি লম্বা, প্রায় মসৃণ, দলফলক দ্বি-ওষ্ঠীয়, উপর ওষ্ঠ প্রায় ৮ মিমি লম্বা, অগভীরভাবে ২-খন্ডিত, নীচেরটি প্রায় ১ সেমি লম্বা, ৩-খন্ডিত, প্রসারিত। পুংকেশরীয় দন্ড প্রায় ৫ মিমি লম্বা, পরাগধানীর খন্ড অসমান, নিচের পরাগধানী কোষ। স্পষ্টভাবে গুচ্ছিত। গর্ভাশয় প্রায় ২ মিমি লম্বা, দীর্ঘায়তবেলনাকার, ৪-ডিম্বকবাহী, গর্ভদণ্ড সূত্রাকার, প্রায় ১ সেমি। লম্বা, অণুরোমশ।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৮, ৩০, ৩২ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: পরিত্যক্ত স্থান এবং বাগানের বেড়া হিসেবে লাগানো হয়। ফুল ও ফল ধারণ ডিসেম্বর থেকে মে মাস। বংশ বিস্তার হয় কাণ্ডের কলম এবং বীজ দ্বারা।

বিস্তৃতি: চীন, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি বাগানের বেড়া হিসেবে সর্বত্র লাগানো হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

গাছের পাতার পেষ্ট ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পাতা এবং কচি ডগা বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য সংশ্লেষণকারী এবং ক্বাথ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী বাতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পাতার নির্যাস আভ্যন্ত রীণভাবে মাথা ব্যথা, অসাড়তা এবং মুখমণ্ডলের প্যারালাইসিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। পাতার তেল চর্ম রোগের জন্য উপকারী (Naska, 1993).

আরো পড়ুন:  করন কর্পুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলে জন্মানো গুল্ম

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:

বাংলাদেশে গারো আদিবাসী লোকেরা এই গাছের পাতার সাথে নিশিন্দা পাতা (Viter negundo L.) মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করে ক্ষতস্থানের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। তারা এই গাছের পাতার গরম নির্যাস শরীরের কালশিরের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করে থাকে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জাগমদন প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জাগমদন সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. মমতাজ বেগম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ৪০-৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg

Leave a Comment

error: Content is protected !!