ভূমিকা: পিয়াল বা চিরঞ্জী (বৈজ্ঞানিক নাম: Buchanania lanzan) হচ্ছে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মে, বন উজার হওয়ার জন্যই গাছটি বিলুপ্ত প্রায়।
পিয়াল বা চিরঞ্জী-এর বর্ণনা:
মাঝারী আকৃতি থেকে বৃহৎ চিরহরিৎ বৃক্ষ, শীতকালে স্বল্প সময়ের জন্য প্রায় পত্রহীন, কচি অংশ রোমশ। বাকল গাঢ় ধূসর থেকে কালচে, উজ্জ্বল লালচে। পত্র সরল, আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, ৪-১৯ x ২-১০ সেমি, স্থূলাগ্র, অখন্ড, চর্মসদৃশ, কচি অবস্থায় অঙ্কীয় পৃষ্ঠ কোমল রোমশযুক্ত, গৌণ শিরা ১৫-২০ জোড়া, স্পষ্ট, বৃন্ত ১.৫-২.০ সেমি দীর্ঘ।
পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয়, ৬২০ সেমি দীর্ঘ, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। পুষ্প ক্ষুদ্র, সবুজাভ-সাদা, অবৃন্তক বা খর্ব, স্থূলাকার, পুষ্পবৃন্তিকা রোমশ, বহু শাখান্বিত, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমশ যৌগিক মঞ্জরীর প্রশাখা প্রান্তে গুচ্ছিত বৃতি খন্ডসমূহ ডিম্বাকার, রোমশ। দল ৩ x ২ মিমি, উপবৃত্তাকার, রোমশ।
পুংকেশর ১০টি, প্রায় ১ মিমি দীর্ঘ। ফলকের ব্যাস ১ মিমি, গভীরভাবে ১০-সভঙ্গিত। গর্ভাশয় শান্ধব, ১ মিমি দীর্ঘ, গর্ভদণ্ড তুরপুন আকার, গর্ভমুণ্ড সরল। ফল ডুপ, স্থায়ী, দীর্ঘাকার বৃতির উপর অবস্থিত, মসৃণ, পরিপক্ক অবস্থায় রক্তাভ-কাল, ব্যাস প্রায় ১-২ সেমি, ডিম্বাকার-বৃক্কাকার, কিছুটা চাপা, ১-বীজবিশিষ্ট। ফলের অন্তস্তৃক শক্ত, অস্থিসদৃশ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২২ (Kumar and Subramaniam, 1986)
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলের জমিতে জন্মে। তবে এই গাছ কখনো চাষ করা হয় না। জঙ্গলে নিজে থেকেই বীজ পড়ে গিয়ে চারা জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারি-মে মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারত এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ও কক্সবাজার জেলায় পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
ফলের কোমল ও রসালো অংশ ভক্ষণ যোগ্য, ফলের শাস কাঁচা বা পুড়িয়ে খাওয়া হয়। বীজ ও শাঁস এর তেল চর্মরোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকল-এ প্রায় ১৩.৪% টেনিন আছে যা চামড়াকে গাঢ় লালচে বাদামি রং দেয়। গাছ এক ধরনের আঠা নিঃসরণ করে যা ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় (Das and Alam, 2001)। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় (Singh et al., 2000)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পিয়াল বা চিরঞ্জী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের প্রজাতিটির আবাসস্থল নিধন হওয়ায় সচরাচর দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি মাত্র দুইটি স্থান থেকে ইহা নথিভূক্ত করার কারণে মনে হয় ইহা বিরল। বাংলাদেশে পিয়াল বা চিরঞ্জী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা উচিত।
তথ্যসূত্র:
১. নাহিদ সুলতানা (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১১৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: MGB CEE
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।