ভূমিকা: উচুন্টি (বৈজ্ঞানিক নাম: Ageratum conyzoides) পতিত জমি, ঝোপ-ঝাড়ে জন্মানো ভেষজ গুণসম্পন্ন বিরুৎ। বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া বিশিষ্ট্য জেলায় বেশি দেখা যায়।
উচুন্টি-এর বর্ণনা:
একবর্ষজীবী, সুগন্ধী বীরুৎ, অনূর্ধ্ব ৮০ সেমি লম্বা, প্রস্থচ্ছেদ গোলাকার, কাণ্ড ঋজু, কণ্টক রোমাবৃত।
পত্র ডিম্বাকার, সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত রোমাবৃত, পত্রফলক ২.০-৬.৫ x ১-৪ সেমি, করতলাকারে ৩টি শিরা বিন্যাসিত, শীর্ষ অর্ধ-সূক্ষ্মাগ্র,
নিম্নাংশ কর্তিতাগ্র-গোলাকার বা কীলকাকার, প্রান্ত দপ্তর, সভঙ্গ বা ক্রকচ, উভয় পৃষ্ঠ রোমাবৃত।
পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, সমপরিণত, ব্যাস ৩-৬ মিমি, প্রান্তীয় ঘন সমভূমঞ্জরীতে সজ্জিত, ০.৫-৩.০ মিমি লম্বা রোমশ পুষ্পদন্ডে অবস্থিত, পত্রাবরণ অনূধ্ব ৬ x ৫ মিমি।
মঞ্জরীপত্র ৩-৪ মিমি লম্বা, ২-৩ স্তরে সজ্জিত, আয়তাকার থেকে বি-বল্লমাকার, সরেখ, সূক্ষ্মাগ্র বা আকস্মিকভাবে দীর্ঘাগ্র,
বহির্দেশীয় গুলি ৩টি শিরা বিন্যাসিত, প্রান্ত কিছু রোম বিশিষ্ট, শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ, পুষ্পধার উত্তল, উন্মুক্ত।
দলমণ্ডল সাদা, হালকা গোলাপি বা সাদাটে-নীল, ২.০-২.৫ মিমি লম্বা। গর্ভদন্ডীয় বাহু ৩.৩-৫.০ মিমি লম্বা, দলমণ্ডল মুখ ছাপিয়ে যায়।
পরাগধানী উপাঙ্গ বিশিষ্ট, নিম্নাংশ স্থূলাগ্র সিপসেলা সংকীর্ণভাবে আয়তাকার।
পরাগধানীর ১.০-১.৫ মিমি লম্বা, কৃষ্ণবর্ণ, সূক্ষ্মভাবে ও হালকাভাবে কৌণিক রোমাবৃত, শল্কবৰ্মীয় বৃতিরোম, শল্ক ৫টি, মুক্ত, ২.০-২.৫ মিমি লম্বা, প্রান্ত সূক্ষ্মভাবে খসখসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০, ৪০ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
উন্মুক্ত ভূমি, রাস্তার পার্শ্ব, গৌণ বনাঞ্চল, অস্থায়ী বনভূমি, চা-বাগান ও টিলা। ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর-জুন মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়, বর্তমানে বিশ্বের সকল উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
বাংলাদেশে পরিত্যক্ত ভূমির অতি সাধারণ উদ্ভিদ, বিশেষভাবে আর্দ্র অবস্থায় জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
সম্পূর্ণ উদ্ভিদের পুরো ভাগ পর্যায়-জ্বর আক্রান্তে বহির্ভাগে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদটির পাতা রক্তস্রাবরোধী, পাতার রস শারীরিক ক্ষত ও শ্লৈষ্মিক ঝিলির ক্ষতে প্রয়োগ করা হয়।
চোখের সমস্যা ও দীর্ঘস্থায়ী আলসারে এবং জরায়ুর সমস্যায় স্ত্রী যোনীর ভেতর লোশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উদ্ভিদের রস শুল বেদনায় কার্যকর হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে কথিত আছে, ডায়রিয়া ও গ্যাসের ব্যথায় উদ্ভিদের রস কার্যকর বলবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মূলের রস আমাশয় নিরামক পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতার সঙ্গে এর রস মিলিয়ে ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
পাতার সঙ্গে মূলের রস মিলিয়ে ডায়রিয়া নিরাময়ে ও ব্লাডারে পাথর বা মূত্রশিলা তৈরীর প্রতিরোধক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
ঠাণ্ডা ক্বাথ লোশন হিসেবে চোখের যোজকত্বকের ক্রম প্রদাহ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
ছোটদের নিউমোনিয়া প্রতিকারে উদ্ভিদটির ব্যবহার বর্ণিত আছে। চর্মরোগ বিশেষভাবে কুষ্ঠ রোগে এ উদ্ভিদের পাতা ও কানে তা ধনুষ্টংকার প্রতিরোধ নিশ্চিত করে।
উচুন্টি-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাংলাদেশের ত্রিপুরা আদিবাসীরা কাটা এবং ঘায়ের ক্ষতে উদ্ভিদটির পাতার রস ব্যবহার করে।
লিভার বেদনা উপশমে খাসিয়া আদিবাসীরা সম্পূর্ণ উদ্ভিদটির ক্বাথ ব্যবহার করে উপজাতীয় সংগঠন সমূহ;
যেমন মৌলভীবাজার জেলার মনধা জনগোষ্ঠী উদ্ভিদটির শিকড় ক্ষতিকারক শয়তানী শক্তির হাত থেকে শিশুদের রক্ষাকারক হিসেবে;
সম্পূর্ণ উদ্ভিদটির ক্বাথ চর্মরোগ চিকিৎসায় ব্যবহার করে। নেত্রকোনা, শেরপুর ও টাঙ্গাইল জেলার গারো উপজাতীয়রা ডায়রিয়া, পাকস্থলীর ব্যথা ও চর্মরোগে উদ্ভিদটি ব্যবহার করে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) উচুন্টি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে উচুন্টি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ২৮৬-২৮৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।