শ্বেত কাঞ্চন দক্ষিণ এশিয়ার সুগন্ধি ও ভেষজ প্রজাতি

গুল্ম

শ্বেত কাঞ্চন

বৈজ্ঞানিক নাম: Bauhinia acuminata L., Sp. Pl.: 375 (1753). সমনাম: Bauhinia Candida auct. non Ait. (1825), Bauhinia grandiflora auct. non Blanco (1907). ইংরেজি নাম: White Bauhinia, Mountain Ebony. স্থানীয় নাম: শ্বেত কাঞ্চন। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Bauhinia  প্রজাতির নাম: Bauhinia variegata L

ভূমিকা: শ্বেত কাঞ্চন (বৈজ্ঞানিক নাম: Bauhinia acuminata, ইংরেজি: White Bauhinia, Mountain Ebony) ফেবাসিস পরিবারের একটি এক প্রকারের বৃক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে জন্মে।

শ্বেত কাঞ্চন-এর বর্ণনা:

ছোট, ঋজু, প্রচুর শাখা-প্রশাখা যুক্ত গুল্ম, ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু, তরুণ শাখা-প্রশাখা ধূসর রোমশ, পরবর্তীতে রোম বিহীন, ক্ষুদ্র শাখাসমূহ আঁকাবাঁকা সর্পিল এবং কম ছড়ান।

পত্র সরল, সোপপত্রিক, উপপত্র ২ টি, ১-২ সেমি লম্বা, রৈখিক, আশুপাতী, পত্রক ৭-১৪ x ৫-১২ সেমি, ডিম্বাকার থেকে গোলাকার, ৯-১১ শিরা বিশিষ্ট, দ্বিখন্ডিত,

পত্র খন্ডকীয় খাঁজ প্রশস্ত, খন্ডকের শীর্ষ কৌণিক সূক্ষ্মাগ্র, মূলীয় অংশ তাম্বুলাকার থেকে গোলাকার, উপরিভাগ রোম বিহীন, নিচের পৃষ্ঠ ধূসর বাদামী রোমযুক্ত, শিরাবিন্যাস সুস্পষ্ট,

বৃন্ত ৩-৬ সেমি লম্বা, খাঁজযুক্ত, পার্শ্বীয় ও প্রান্তীয় রেসিম ৩-১০ পুষ্প বিশিষ্ট। পুষ্প তুষার শুভ্র, আড়াআড়ি ৮ সেমি, সহপত্রী, পুষ্পমুকুল প্রায় ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মূলকাকার।

পুষ্পধার কৌণিক, সমান্তরাল, অনুদৈর্ঘ্য রেখাযুক্ত, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, পুষ্পবৃন্ত ০.৫-১.৫ সেমি লম্বা, কখনও ২.০ সেমি, মঞ্জরীপত্র রৈখিক, দীর্ঘাগ্র, মঞ্জরীপত্রিকা মঞ্জরীপত্রের মতো,

পুষ্প বৃন্তের মাঝামাঝি অংশের নিচে সন্নিবিষ্ট। বৃতি চমসাবৎ, ৩ সেমি লম্বা, পাতলা রোমশ থেকে রোম বিহীন, একপার্শ্ব কাটা, বৃতিকন্টক ৫ টি, মুক্ত, ৩ মিমি লম্বা।

পাপড়ি ৫ টি, মুক্ত, ৪-৬ x ১.৫-৩.০ সেমি, বিডিম্বাকার, দীর্ঘায়ত বা গোলাকার, খাটো দলবৃন্তযুক্ত। পুংকেশর ১০ টি, সবকটি উর্বর, অর্ধসম, পুংদন্ড ১.৫-২.৫ সেমি লম্বা, নিচের অংশ রোমশ,

পরাগধানী ৩-৫ সেমি লম্বা, ফ্যাকাশে হলদে। গর্ভাশয় বৃন্তযুক্ত, অর্ধরোমশ, গর্ভদন্ড প্রায় ১.৫ সেমি লম্বা, গর্ভমুন্ড ছোট, ছত্রবদ্ধ।

আরো পড়ুন:  পাতালপুর দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ লতা

ফল পড, ৭-১১ X ১.৫-২.০ সেমি, রৈখিক, শক্ত, তীক্ষ্ণাগ্র, মোটা, রোম বিহীন, সন্ধি উপরে উত্থিত, বিদারী। বীজ প্রতি পডে ৫-১১ টি, চ্যাপ্টা, আড়াআড়ি ১ সেমি।

ত্রোমসোম সংখ্যা: 2n = ২৬, ২৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

সুনিষ্কাশিত, শুল্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল ভূখন্ড, সমতল ভূমি এবং পাহাড়ী ঢাল। ফুল ও ফল প্রায় সারা বর্ষব্যাপী ধরে। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

বিস্তৃতি:

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের সর্বত্র রোপণ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

সাধারণ বাহারি গাছ রূপে উদ্যান, পার্ক, অফিস চত্বর, পথপার্শ্ব ও গৃহাঙ্গনে লাগানো হয়। রাসায়নিক পদার্থ, পরিবেশ, খাদ্য, পানীয় ও ভেষজের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

উত্তর বোর্ণিওর আদিবাসী মহিলারা। চুলে কাঞ্চন ফুল পরিধান করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে তরুণীরা চুলে ও খোপায় এই ফুল ব্যবহার করে।

শ্বেত কাঞ্চন-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ-এর ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শ্বেত কাঞ্চন  প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে শ্বেত কাঞ্চন  সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮৯-৯০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Joydeep

Leave a Comment

error: Content is protected !!