গেন্দি লতা বা নাগবেলি দক্ষিণ এশিয়ার চিরহরিৎ কাষ্ঠল লতা

লতা

গেন্দি লতা

বৈজ্ঞানিক নাম: Bauhinia scandens L., Sp. Pl. 1: 344 (1753). সমনাম: Bauhinia anguina Roxb. (1814), Lasiobema horsfieldii Miq. (1855), Bauhinia anguina Roxb. var. horsfieldii (Miq.) Prain (1897), Phanera scanderns (L.) Raf. (1991). ইংরেজি নাম: The Snake Climber. স্থানীয় নাম: নাগপাত, গেন্দি লতা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Bauhinia  প্রজাতির নাম: Bauhinia scandens

ভূমিকা: গেন্দি লতা বা নাগবেলি (বৈজ্ঞানিক নাম: Bauhinia scandens) ফেবাসিস পরিবারের একটি এক প্রকারের আরোহী প্রজাতি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে জন্মে।

গেন্দি লতা বা নাগবেলি-এর বর্ণনা:

বহুল বিস্তৃত, চিরহরিৎ, কাষ্ঠল আরোহী, ৩০-৫০ মিটার লম্বা, তরুণ বিটপ সরু জোড়া আকর্ষযুক্ত, আকর্ষী প্রতিমুখ, তরুণ শাখা মরচে বাদামী, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমশ; পরিণত অবস্থায় রোম বিহীন, পুরাতন কান্ড চ্যাপ্টা, তরঙ্গিত, ২৫ সেমি পর্যন্ত প্রশস্ত এবং ১.২ সেমি পুরু, ‘বানরের সিঁড়ি’ এর মতো গঠন।

পত্র সরল, একান্তর, সহপত্রী, উপপত্র ক্ষুদ্র, কাস্তে আকৃতি বিশিষ্ট, সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, আশুপাতী, ফলক ৫-১২ x ৬-১০ সেমি, বিভিন্ন আকার বিশিষ্ট, অখন্ড, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে খাতাগ্র বা গভীর খন্ডিত, খন্ডকের শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে স্থূলা, মূলীয় অংশ তাম্বুলাকার থেকে কর্তিতা, ৭ শিরাল, উপরের পৃষ্ঠ চকচকে ও মসৃণ, নিচের পৃষ্ঠ স্বল্প রোমশ বা রোম বিহীন, বৃন্ত ১.৫-৫.০ সেমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস দীর্ঘায়ত রেসিম, ১৫-১৮ সেমি লম্বা, কখনও শীর্ষীয় প্যানিকল গঠন করে। প্রধান অক্ষ মরচে রোমশ, বহুপুষ্প বিশিষ্ট। পুষ্প খুব ছোট, সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না, পুষ্পমুকুল গোলাকার, ১-২ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, অণুরোমশ, ৩-৫ মিমি, লম্বা বৃন্ত যুক্ত, মঞ্জরীপত্র কাগজতুল্য, প্রায় ২ মিমি লম্বা, মঞ্জরী পত্রিকা ক্ষুদ্র।

পুষ্পধার অত্যন্ত ছোট। বৃতি পেয়ালা আকৃতি, ৩ সেমি লম্বা, ব-দ্বীপাকার প্রসারিত দন্তযুক্ত। পাপড়ি ৫টি, হলদে সাদা, ২-৩ x ১.৫-২.৫ মিমি, বি-ডিম্বাকার-অর্ধগোলাকার, মূলীয় অংশে অতি ছোট দলবৃন্ত যুক্ত।

আরো পড়ুন:  নীল অপরাজিতা ভেষজ ও টবে চাষযোগ্য শোভাবর্ধক লতানো ফুল

উর্বর পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড ৪-৫ মিমি লম্বা, পরাগধানী উপবৃত্তাকার, বন্ধ্যা। পুংকেশর ২ টি, ক্ষুদ্র।

গর্ভাশয় রোম বিহীন, ১ মিমি লম্বা, দন্ড রোম বিহীন থেকে রোমশ, গর্ভদন্ড সরু, রোম বিহীন, ১ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড অস্পষ্ট, চক্র রোমশ।

ফল পড, ৩-৪ x ১.৫-২.৫ সেমি, তির্যকরূপে উপবৃত্তাকার থেকে দীর্ঘায়ত, সরু কপাটিকা যুক্ত, সামান্য রসস্ফীত, অবিদারী।

বীজ প্রতি পডে ১-২ টি, দীর্ঘায়ত, ৬ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

চিরহরিৎ অরণ্য, নদীতট, মিশ্র পর্ণমোচী অরণ্য এবং চুনা পাথরীয় অঞ্চল। জুন-জানুয়ারি মাসে এর ফুল ও ফল ধারণ হয়। বীজ এবং দাবা কলমে বংশ বিস্তার

গেন্দি লতা বা নাগবেলি-এর বিস্তৃতি:

ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্মে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গেন্দি লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, অরণ্য উচ্ছেদের কারণে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে গেন্দি লতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির যথাস্থানে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj

Leave a Comment

error: Content is protected !!