জালি বেত বাংলাদেশের ঝোপ ঝাড়ে জন্মানো লতা

লতা

জালি বেত

বৈজ্ঞানিক নাম: Calamus tenuis Roxb., Fl. Ind. 3: 780 (1832). ইংরেজি নাম: র‍্যাটান। স্থানীয় নাম: বেত, জয়ত বেত, জালি বেত, (সিলেট ও চট্টগ্রাম) সাচিবেত (খুলনা), সাঞ্চিবেত, বান্দরী বেত, কেজুনি বেত (চট্রগ্রাম), পাটিবেত (যশোর) ক্রিং (মারমা)। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Arecales. পরিবার: Arecaceae. গণ: Calamus  প্রজাতির নাম: Calamus tenuis

ভূমিকা: জালি বেত (বৈজ্ঞানিক নাম: Calamus tenuis) এরিকাসি পরিবারের এক প্রকারের আরোহী। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জন্মে।

জালি বেত-এর বর্ণনা:

ঝাড়ে জন্মে, আরোহী, ঝাড়ের নিচ থেকে খর্বধাবকের উৎপত্তি। পত্রাবরণ সহ কান্ডের ব্যাস ১-২ সেমি এবং পত্রাবরণ বিহীন অবস্থায় ০.৫-০.৮ সেমি। পর্বমধ্য চকচকে সবুজ, গাঢ় বাদামী বা সাদা বাদামী রোমের দাগ যুক্ত।

অনিয়মিত চ্যাপটা, আনুভূমিক, একল কন্টকে আবৃত, কন্টক ১ সেমি মূলীয় অংশ বিস্তৃত, জানুসন্ধি সুস্পষ্ট, পত্রাবরণের মুখ তীর্যক, উপপত্র অস্পষ্ট, কশা চাবুকবৎ সরু, ১২০ সেমি, নখরযুক্ত, অন্তর্মুখী কালো কন্টক সজ্জিত।

পাতা সবৃন্তক আকর্ষবিহীন ৪০-১০০ সেমি, বৃন্ত ৫-১০ সেমি, পত্রক অক্ষ উত্তল ত্রিকোণাকার, তরুন পত্রক অক্ষ মলিন বাদামী রেশমি রোমে আচ্ছাদিত এবং পৃষ্ঠদেশ ৫ মিমি অন্ত মুখী বাঁকান কালো কন্টকে আবৃত।

পত্রক প্রতি পার্শ্বে ২০-৩০ টি, সমদূরবর্তী, একান্তর থেকে প্রতিমুখ, ১০-২৫ x ০.৫-১.৫ সেমি, রৈখিক, চকচকে সবুজ, উপরের পত্রক ক্রমশ সরু, মধ্য শিরার উভয় পার্শ্বে ২ টি করে গৌণ শিরা, ২টি প্রধান পার্শ্বীয় শিরা এবং প্রধান শিরার উপরের শাখা ৬ মিমি পর্যন্ত সরু কালো কুচঁ দ্বারা আবৃত।

পুং ও স্ত্রী পুষ্প বিন্যাস বাহ্যত একইরূপ, মঞ্জরীদন্ড চমসার পার্শ্বীয় অংশে আবদ্ধ, ১-২ মিটার লম্বা, শীর্ষ কশাযুক্ত, সাধারণত ৫-১০ টি একান্তর অন্তর্মুখী অসম্পূর্ণ মঞ্জরী বিশিষ্ট, ৪০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মূলে নালিকাকার মঞ্জরীপত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, শীর্ষ ফাটল যুক্ত। নিচের প্রাথমিক মঞ্জরীপত্র নৌকাকার।

আরো পড়ুন:  বিছুটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ

অন্তর্মুখী ঘন কন্টকিত, উপরের মঞ্জরীপত্র সামান্য নৌকাসদৃশ ও সামান্য কন্টকিত, গৌণ মঞ্জরীপত্র নালিকাকার, সাধারণত কন্টকবিহীন, মঞ্জরী পত্রাবরণ সুস্পষ্ট, প্রান্তীয় মঞ্জরীপত্র কন্টকিত।

পুংপুষ্পধারী পুষ্প মঞ্জরী অক্ষে ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পুষ্প দ্বিসারী, প্রতিটি পুংপুষ্প ৩ মিমি লম্বা, বৃতি নালি এক পার্শ্বে তীর্যক ফাটল যুক্ত। স্ত্রীপুষ্পের মঞ্জরী অক্ষ ৫ সেমি লম্বা, দ্বিসারী, প্রতিটি পুষ্প প্রায় ৩ মিমি লম্বা, দলনালি অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ চিরযুক্ত।

ফল বাদামী, বৃন্ত যুক্ত ১৩-১৫ x ১০-১২ মিমি, দীর্ঘায়ত উপবৃত্তাকার, দৃঢ় ঠোঁট সহ ১৫-১৭ অনুদৈর্ঘ সারির শল্ক ও অগভীর মধ্যবর্তী নালী যুক্ত।

বীজ ৭-৮ x ৫ মিমি, সবুজাভ, অশ্লীয় শর্করা যুক্ত বহিত্ত্বক, আংশিক গোলাকার, এক পার্শ্ব চ্যাপটা এবং অপর পার্শ্ব উত্তল, উপারিভাগ চর্বিতবৎ অমসৃণ, খাঁজ বিশিষ্ট, চ্যাপটা পার্শ্বে একটি গভীর জনন রন্ধ্র বিদ্যমান।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

গ্রামের ঝোপ ঝাড়, পথপার্শ্ব, অবরুদ্ধ জলাশয়, হাওড়, পুকুর হদ ইত্যাদির কিনারা জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুলাই-এপ্রিল।

ফোটার সময় পুংপুষ্প থেকে এক প্রকার সুরার গন্ধ বের হয়। মৌমাছি ও পিঁপড়া এই গন্ধে মঞ্জরীর চারদিক ঘোরা ফেরা করে। বীজ ও উধ্বধাবক দ্বারা বংশ বিস্তার ঘটে।

বিস্তৃতি: মায়ানমার ও ভারত, বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

গার্হস্থ্য কাজে ব্যপক ব্যবহৃত। বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য বয়নে, চেয়ার ও ঝুড়ি তৈরির কাজে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক।

জালি বেত-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ফল বাজারের বিক্রি হয়, ফলের আম্লিক কোমল আঁশালো অংশ বালক বালিকারা খেয়ে থাকে। সুপারির পরিবর্তে এর বীজ পানের সাথে ব্যবহারের করার প্রচলন আছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নরম কচি কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জালি বেত প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

আরো পড়ুন:  কালকেয়া ক্যাপারিস গণের কাঁটাযুক্ত লতানো ফুল

বাংলাদেশে জালি বেত  সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বাসভবনের আশপাশ এবং গ্রামের কোন ঝাড়ে চাষাবাদ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম কে আলম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১০-১১১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Plague

Leave a Comment

error: Content is protected !!