বড় বেত দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো উপকারী লতা

লতা

বড় বেত

বৈজ্ঞানিক নাম: Calamus viminalis Willd., Sp. Pl. 2(1): 203 (1799). সমনাম: Calamus fasciculatus Roxb. (1832), Calamus extensus Martius (1838), Calamus viminalis var. fasciculatus (Roxb.) Becc. ex Becc. (1908), Calamus viminalis var. andamanicus Becc. (1908). ইংরেজি নাম: র‍্যাট্যান। স্থানীয় নাম: বড় বেত (চট্টগ্রাম), খোরখোঁইজ্যাবেত (কক্সবাজার)। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Arecales. পরিবার: Arecaceae. গণ: Calamus  প্রজাতির নাম: Calamus viminalis

ভূমিকা: বড় বেত (বৈজ্ঞানিক নাম: Calamus viminalis) এরিকাসি পরিবারের এক প্রকারের আরোহী। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জন্মে।

বড় বেত- এর বর্ণনা:

ঝাড়ে জন্মে, আরোহী এবং উন্মুক্ত স্থানে ঘন ঝোপ সৃষ্টি করে। অবলম্বনের মাধ্যমে উঁচুতে আরোহনে সক্ষম, পত্রাবরণ সহ কান্ডের ব্যাস ৩-৪ সেমি এবং পত্রাবরণহীন। কান্ড ১-৫ সেমি।

পর্বমধ্য ৯-১৫ সেমি। পত্রাবরণ সাদা রোম যুক্ত (তরুণ অবস্থায় ঘন এবং পরিপক্ক অবস্থায় পাতলা করে সন্নিবেশিত), ফিকে সবুজ, চ্যাপটা, অনিয়মিত কন্টকে আবৃত, কন্টক একল, জানুসন্ধি সুস্পষ্ট, পত্রবরণের মুখ তীর্যক, উপপত্র অস্পষ্ট, কশা চাবুকবৎ সরু, ৩-৫ মিটার লম্বা, পাতলা, মূলীয় অংশ পত্রাবরণে আচ্ছাদিত, হালকা হলুদাভ-সুবজ অন্তর্মুখী কন্টক দ্বারা সজ্জ্বিত, কন্টক প্রায় ২ সেমি পর্যন্ত লম্বা।

পাতা ৯০-১০০ সেমি। পত্রবৃন্ত খাটো ১৫ সেমি লম্বা, পত্রক অক্ষ তরুন অবস্থায় ঘন এবং পরিক অবস্থায় হালকা রোমাবৃত, উত্তল ত্রিকোণাকার, পাতলা শীর্ষে সম্প্রসারিত এবং একল কন্টকে সীমিত, নিম্নতল প্রশস্ত সম্প্রসারিত, চ্যাপটা কন্টকাবৃত, কন্টক ৪ সেমি লম্বা, অনিয়মিত, একল বা জোড়ায় বা ৩টি করে জন্মে।

পত্রক অনেক, একই সমতলে নিয়মিত অন্তর বিশিষ্ট নয়, ১, ২, ৩ বা ৪টি করে একত্রে জন্মে, ২০-২৫ x ১.৫-২.০ সেমি, রৈখিক, ফিকে সবুজ, তরুন অবস্থায় ঘন রোমযুক্ত, পরিণত পাতার উপর পৃষ্ঠ মসৃণ এবং অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সামান্য রোমাবৃত, মধ্যশিরা ও প্রান্ত সূক্ষ্মরোম যুক্ত, অঙ্কীয়। পৃষ্ঠের শিরা সামান্য পাতলা কুচযুক্ত।

আরো পড়ুন:  দুরালভা লতা-র নানাবিধ উপকারিতা ও প্রযোগ

পুং ও স্ত্রী পুষ্পবিন্যাস বাহ্যত একইরূপে, কশাযুক্ত, ১.০-১.৫ মিটার লম্বা, শীর্ষে কশা উপস্থিত। মঞ্জরীদন্ড পত্রাবরণের পার্শ্বীয় অংশে আবদ্ধ, ৪-১০ একান্তর পার্শ্বীয় পুং পুষ্পমঞ্জরী ২০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, স্ত্রীপুষ্পমঞ্জরী ২৫ সেমি, মূলীয় অংশ নলাকার মঞ্জরীপত্রে আচ্ছাদিত, প্রাথমিক মঞ্জরী পত্র ১২-২০ সেমি, নলাকার, দীর্ঘায়ত, নীচেরটি চাপা, ২টি তরীদল যুক্ত, কন্টকিত, নলের উপরিভাগে কন্টক ঘন সন্নিবেশিত, পেছনের অংশ।

ধুসর-বাদামী রোম এবং বক্র কন্টকে আবৃত, কন্টক ৩-৬ মিমি, নলের মুখ তীর্যক, গৌণ মঞ্জরীপত্র মসৃণ, মঞ্জরী পত্রাবরণ সুস্পষ্ট, পুংপুষ্পধারী মঞ্জরী অক্ষ ১২ সেমি, নীচেরগুলি ক্রমশ লম্বা, পুষ্প দ্বিসারী। স্ত্রী পুষ্পধারী মঞ্জরী অক্ষ ১৫ সেমি, পুষ্প দ্বিসারী।

ফল ফিকে সবুজ, বৃতি ও দলের অবশিষ্টাংস দ্বারা আলম্বিত, প্রায় ১ x ১ সেমি, বৃত্তবৎ। শীর্ষ তীক্ষ, ত্রি-খন্ডিত গর্ভমুন্ডের মুকুট যুক্ত, ফিকে হলুদ রঙের ১৫ অনুদৈর্ঘ্য সারির শল্ক দ্বারা আবৃত, শল্ক অগভীর নালীযুক্ত, প্রান্ত শুষ্ক ঝিল্লি সদশ, শীর্ষ ফিকে লাল।

বীজ প্রতি ফলে ১টি, ঋজু, বহত্বিক বাদামী থেকে ফিকে লাল, ৫-৬ ও ৬ মিমি, অর্ধগোলাকার, এক পার্শ্ব চ্যাপটা এবং অপর পার্শ্ব উত্তল, মূলীয় অংশ তরঙ্গিত, সস্য শৃঙ্গবৎ, অ্যারিওল যুক্ত, দ্রুণমূলীয়, তীর্যক।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

নগ্ন ও শুষ্ক পাবর্ত্য ঢাল, গ্রামের ছোট ঝোপ ঝাড়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল সারা বছর জন্মে। বীজ ও উর্ধধাবকের মাধ্যমে বংশ বিস্তার।

বড় বেত-এর বিস্তৃতি:

ভারত (উত্তর-পূর্ব ভারত ও এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ) মায়ানমার, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ চীন লেজার দ্বীপপুঞ্জ। (জাভা, ইন্দোনেশিয়া)। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের শুষ্ক পাহাড়ী ঢাল এবং ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার গ্রামের ঝোপ ঝাড়ে জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

আসবাবপত্র ও যষ্টি নির্মাণে ব্যাপক ব্যবহৃত। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ধানক্ষেত বেড়া দিতে বহুল প্রচলন।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: গ্রামবাসীরা খেয়ে থাকে পাকা ফল।

আরো পড়ুন:  ধেমনা বা চেমনা বাংলাদেশের বর্ষা অরণ্যে জন্মানো লতা

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বড় বেত প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে বড় বেত সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বাসভবনের আশপাশ এবং গ্রামের কোন ঝাড়ে চাষাবাদ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম কে আলম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১১-১১২ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!