ভূমিকা: বনমালা বা বরমালা (বৈজ্ঞানিক নাম: Callicarpa arborea) ভারবেনাসি পরিবারের এক পত্রঝরা বৃক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জন্মে। নানা প্রকার ভেষজ গুণ আছে এই গাছে।
বনমালা বা বরমালা-এর বর্ণনা:
ছোট থেকে মধ্যম-আকৃতির, চিরহরিৎ বা পত্রঝরা বৃক্ষ, বাকল কখনো কর্কসদৃশ, বাদামী, ধূসর বা গাঢ় অমসৃণ যা অগভীর খাঁজযুক্ত, উজ্জ্বল হলুদাভ-বাদামী প্রশস্ত দাগযুক্ত।
পত্র সরল, ৭.৫-৩০.০ x ৪.৫-১২.৫ সেমি, ডিম্বাকার থেকে সরু আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার-বল্লমাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘা, অখন্ডিত বা প্রায় কাছাকাছি, চর্মবৎ, উপরিভাগ রোমহীন, নিম্নভাগ ময়দাসদৃশ দৃঢ় থেকে তারকাকার রোমাবৃত, গোড়া সূক্ষ্মাগ্র থেকে কীলকাকার, পার্শ্বীয় শিরা মধ্য শিরার উভয় পাশে ৮-১২টি, পত্রবৃন্ত ১.২-৫.০ সেমি লম্বা, ময়দাসদৃশ দৃঢ় রোমাবৃত।
পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক মঞ্জরীদন্ডযুক্ত সাইম, ৫১২ সেমি চওড়া, ঘন, দ্ব্যগ্র শাখান্বিত, ময়দাসদৃশ দৃঢ় রোমাবৃত, মঞ্জরীদন্ড ৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পুষ্প ছোট, ফিকে রক্ত-বেগুনি বা ঈষৎ নীল রক্তিমাভ, সম্পূর্ণ বৃন্তহীন।
বৃতি খুবই ছোট, অর্থ-কর্তিতা, তারকাকার রোমশ, ক্ষুদ্র ৪-খন্ডিত। দলমন্ডল ফিকে রক্ত-বেগুনি, ছোট, প্রায় ৩.৫ সিমি লম্বা, নলাকার ৪টি ছড়ানো খাটো খন্ডকবিশিষ্ট।
পুংকেশর ৪টি, সামান্য বহিঃমুখী, দলমণ্ডল নলের খানের উপরে প্রবেশিত। গর্ভাশয় অপ্রকৃত ২-কোষী, প্রতি কোষে ডিম্বক ২টি, গর্ভদণ্ড রেখাকার, চ্যাপ্টা, গর্ভমুন্ড অস্পষ্টভাবে ১-খন্ডিত।
ফল ছোট ড্রুপ, প্রায় ২.৫ মিমি চওড়া, মসৃণ, ১-বাজা পাইরিন, পাকলে রক্ত-বেগুনি।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
শুষ্ক এবং মিশ্র বন, পাহাড়ী ঢাল, সমভূমি এবং গ্রাম্য ঝোপের রাস্তার পাশের জঙ্গল। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মে-নভেম্বর। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বনমালা বা বরমালা-এর বিস্তৃতি:
ভারত, মায়ানমার, দক্ষিণ চীন, ইন্দো-চীন এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেট এবং কিছু উত্তরাঞ্চলীয় জেলায় পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল সুগন্ধি, তিক্ত। বাকল সিদ্ধ ক্বাথ চর্মরোগে ব্যবহৃত হয় (Yusuf et al., 1994)। কাঠ কয়লা তৈরীতে ব্যবহৃত হয় (Gamble, 1922) । ইহা টনিক এবং বায়ুরোধক (Watt., 18891892)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাংলাদেশে গ্রামের শিশুরা বিশেষত বগুড়া জেলায় পাকা ফল খায়। আসামে (ভারত) পাতা মহিষের খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয় (Kanjilal et al., 1939)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বনমালা বা বরমালা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে বনমালা বা বরমালা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৪১-৪৪২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি.দ্র ছবিটি নেওয়া হয়েছে ফেসবুকের বাঙলার গাছ-গাছড়া গ্রুপ থেকে। আলোকচিত্রী: Mim Dabernush Khan
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।