কচ্ছপ (ইংরেজি: Turtle বা Testudines) হচ্ছে সরীসৃপ শ্রেণির অন্তর্গত একটি বর্গের প্রাণীর নাম। এরা মাংসাশী ও তৃণভোজী উভচর জাতীয় প্রাণী। সবচেয়ে বড় কচ্ছপ সমুদ্রে বাস করে এবং দ্বৈত আকৃতির কাছিম দ্বীপ শুষ্ক (arid) পরিবেশে বাস করে। বেশির ভাগ কচ্ছপেরা কাছাকাছি বাস করে তবে বক্স কচ্ছপ বনাঞ্চলের খােলাস্থানে বাস করে। স্থলজ কাছিম (tortoises) শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। ছোট কচ্ছপ (turtles) খাদ্য হিসেবে জলজ অমেরুদন্ডী প্রাণী গ্রহণ করে। স্থলজ কচ্ছপ, সামুদ্রিক কাছিম আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে উদ্ভিজ খেয়ে থাকে।
মানুষের খাদ্য হিসাবে কচ্ছপের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে গেছিল, তাই অতিরিক্ত আহরণ ও পরিবেশের বিপর্যয়ের দরুণ বাংলাদেশে কচ্ছপের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়াও এরা রপ্তানী পণ্য ছিল, বিধায় এর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। কচ্ছপের বাসস্থানের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও আহরণ বন্ধ করতে না পারলে শীঘ্রই এদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কচ্ছপ ধরা, মারা, শিকার, বিক্রি, বিপণন, স্থানান্তর, চাষ, পাচার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে কচ্ছপ ধরা, মারা, শিকার, বিক্রি, বিপণন, স্থানান্তর, চাষ, পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পরিবেশ রক্ষায় কচ্ছপ
কচ্ছপ মানব সমাজে বিভিন্ন রকম উপকার করে থাকে। এরা সর্বভুক প্রাণী, এরা জলাভূমিতে, নদীনালায় মরা, পচা-গলা, ময়লা জিনিস খেয়ে জলকে পরিষ্কার রাখে এবং জল দূষণ রােধ করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং আমাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সহায়তা করে ।
কচ্ছপ বিভিন্ন প্রকার পােকামাকড় এবং মশার ডিম ও লার্ভা খেয়ে এদের বংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিভিন্ন রােগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। কচ্ছপেরা, আর কাছিম যেসব স্থানে বসবাস করে, ডিম পাড়ে সেই সব স্থানের বাস্তুতন্তের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা যে কোন জল ভাগের তীরবর্তী অংশের উদ্ভিদ জগতকে বেড়ে উঠতে ও পুষ্টি জোগানে সাহায্য করে।
এই প্রাণিরা জলভাগের অবাঞ্ছিত ঘাস, উদ্ভিদদের খেয়ে এদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, না হলে এগুলি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাবে এবং জলের বস্তুতন্ত্রের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। যেমন সবুজ কচ্ছপ, যারা সামুদ্রিক ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকে।
লেদার – ব্যাক কচ্ছপেরা প্রচুর পরিমাণে জেলিফিশ খেয়ে বেঁচে থাকে, এই জেলিফিশ গুলি সাধারনত মাছের লার্ভা খেয়ে নেয়। ফলে এই কচ্ছপেরা জলের খাদ্য শৃঙ্খল রক্ষা করে।
একবার ভেবে দেখুন, এমন এক উপকারী বন্ধুকে আমরা আমাদের লালসা মেটাতে প্রতিদিন হত্যা করে নিজেদের খাদ্য বানাই। মানব সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এদের প্রাকৃতিক পরিবেশে এই কাছিম ও কচ্ছপের অস্তিত্ব বজায় রখতে হবে। এদের রক্ষা করা আমাদের মানবিক ও সামাজিক কর্তব্য।
বাংলাদেশে ৫টি পরিবারে কচ্ছপগুলো আছে ২৯ প্রজাতির। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ২৯ প্রজাতির কচ্ছপের তালিকা পড়তে হলে এই তালিকায় ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র
১. মোহাম্মদ সামছুর রহমান অনূদিত এবং সৈয়দ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মোনাওয়ার আহমাদ ও আবু তৈয়ব আবু আহমদ সম্পাদিত, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ, বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড ২৫, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, প্রথম প্রকাশ জুন ২০১১, পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।