ভূমিকা: শিয়ালমুঠা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cirsium arvense) বাংলাদেশের সব জেলাতেই জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
শিয়ালমুঠা-এর বর্ণনা:
অনুর্ধ্ব ৭০ সেমি লম্বা, বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, কাণ্ড সরেখ, মাঝে মধ্যে ফাঁপা। পত্র ৪-১২ সেমি লম্বা, আয়তাকার বা রৈখিক-আয়তাকার পক্ষবৎ খন্ডিত, খন্ড শীর্ষ ও তরঙ্গিত প্রান্ত কণ্টকী, অবৃন্তক, মসৃণ বা উপরিভাগ হালকাভাবে ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত ও অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সাদা পশম সদৃশ রোমাবৃত।
পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, একল বা গুচ্ছিত, পত্রাবরণ ১-২ x ১.০-১.৫ সেমি, শিথিল, মঞ্জরীপত্র বিশিষ্ট ঘন্টাকৃতি। মঞ্জরী পত্রাবরণ ঘন দীর্ঘ কোমল রোমাবৃত প্রান্ত বিশিষ্ট মসৃণ বা অর্ধমসৃণ, বহির্দেশীয় গুলি কন্টকী শীর্ষ বিশিষ্ট ত্রিকোণাকৃতি-ডিম্বাকার, অধিকতর অন্তর্বর্তী গুলি দীর্ঘতর, রৈখিক থেকে বল্লমাকৃতি, ঈষৎ পশ্চাদমুখী বক্র কন্টকী শীর্ষ বিশিষ্ট, শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ বা শুধুমাত্র প্রান্ত শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ।
পুষ্প গোলাপি, ৫-খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট, দলমণ্ডল নল সরু, অনূর্ধ্ব ১.৯ সেমি লম্বা। গর্ভদন্ডীয় বাহু রোমশ, দ্বি-খন্ডিত বিন্দুর নিম্নাংশে একটি অতি ক্ষুদ্র রোমবলয় বিশিষ্ট, অনুর্ধ্ব ১.০ মিমি লম্বা। ফল সিপসেলা, মসৃণ বা রোমশূণ্য, বিডিম্বাকার, বৃতিরোম রোমশ, অনূর্ধ্ব ১৭.৫ মিমি লম্বা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩৪ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
বাগান ও রাস্তার পাশে আবাদ করা হয়। ফুল ও ফল ধারণ ও ফেব্রুয়ারি-জুন। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
ভারত, পশ্চিম এশিয়া ও আটলান্টিকের পশ্চিম পার্শ্ব। বাংলাদেশে এটি দেশের সব স্থানে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
উদ্ভিদটি বমোন্দ্রেককর, বলকারক এবং ঘর্মকারক, এর কাণ্ড এবং পাতা স্কাভিনাশক, শেকড় পেট ফাপায় আভ্যন্তরীণভাবে এবং বহির্ভাগে ঘা ও ব্রনে ব্যবহৃত হয়। এর বীজে শতকরা ২১.৯ ভাগ চর্বিযুক্ত তেল আছে।
উদ্ভিদটি একটি উদ্বায়ী ক্ষারীয় পদার্থ এবং নিছিন নামক একটি পদার্থ ধারণ করে, একটি স্ফটিকতুল্য, তিক্ত গ্লুকোজ ডি উৎপাদনক্ষম উদ্ভিদ বমোন্দ্রেককর ও রাজোদ্দীপক গুণাবলী বহন করে।
শিয়ালমুঠা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শিয়ালমুঠা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে শিয়ালমুঠা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৬-৩১৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Peripitus
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।