করন কর্পুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলে জন্মানো গুল্ম

গুল্ম

করন কর্পুর

বৈজ্ঞানিক নাম: Clausena heptaphylla (Roxb.) Wight & Arn. ex Steud., Nomencl. Bot. ed. 2, 1: 377 (1840). : Amyris heptaphylla Roxb. (1832), Clausena macrophylla Hook. f. (1875). স্থানীয় নাম: করন ফল, পান কপুর, পানবাহার। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ:  Angiosperms. অবিন্যাসিত:  Asterids. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Sapindales পরিবার: Rutaceae. গণ: Clausena. প্রজাতি: Clausena heptaphylla.

ভূমিকা: করন কর্পুর (বৈজ্ঞানিক নাম: Clausena heptaphylla) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

করন কর্পুর-এর বর্ণনা:

নিচু গুল্ম থেকে ছোট বৃক্ষ, ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু, পাতা সছূড় পক্ষল যৌগিক, ৪৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রক ৫-১১টি, অর্ধপ্রতিমুখ এবং একান্তর, ৬.৫-১৯.০ x ৩.৫-৬.৫ সেমি, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার-বল্লমাকার, গোড়া কীলকাকার, শীর্ষ দীর্ঘ্রাগ্র, শিরা নিম্নভাগে স্পষ্ট, মসৃণ বা রোমশ, প্রান্তে অখন্ডিত থেকে প্রান্ত বরাবর গোলাকার দস্তুর।

যা প্রচুর গ্রন্থিল দাগযুক্ত পত্রবৃন্তবিশিষ্ট, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, সামান্য দাগযুক্ত। পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক বা কাক্ষিক, করিম্ব বা প্যানিকল সদৃশ সাইম, ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মঞ্জরীদ এবং শাখাপ্রশাখা ঘনভাবে ক্ষুদ্র রোমাবৃত।

পুষ্প ৪-অংশক, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, পুষ্পবৃন্ত প্রায় ৩ মিমি লম্বা, মসৃণ। বৃত্যংশ ৪(৫)টি, প্রায় ১ মিমি লম্বা, সিলিয়াযুক্ত। পাপড়ি প্রান্ত-আচ্ছাদী, আয়তাকার, কদাচিৎ অর্ধবতুলাকার, স্থূলাগ্র বা গোলাকার, অবতল, ৩-৪ মিমি লম্বা, সাদা বা সবুজাভ-হলুদ।

পুংকেশর ৮টি, গাইনোফোর স্পষ্ট, বালির ঘড়ি-আকৃতির, প্রায় ১ মিমি লম্বা, মসৃণ। গর্ভাশয় বেলনাকার, ডিম্বাকার বা ত্রিভূজাকার, খাঁজযুক্ত, ৪-খন্ডিত, ৪-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড বেলনাকার, প্রায় ১ মিমি লম্বা, মসৃণ, গর্ভমুন্ড কর্তিতা, গর্ভদন্ডের সমান লম্বা, প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ২টি।

ফল বেরী, আয়তাকার বা ডিম্বাকার, ১.০-১.৫ সেমি লম্বা, শীর্ষ কর্তিতা, পাকলে কমলা, সূক্ষ্ম গ্রন্থিযুক্ত, ১-২ বীজী। বীজ ডিম্বাকার, তীব্র গন্ধযুক্ত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

চিরহরিৎ বনাঞ্চলে অরণ্য তলীয় উদ্ভিদ। ফুল ও ফল ধারণ সময় মার্চ-আগষ্ট মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

আরো পড়ুন:  পুষ্কর মূল গুল্মের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

করন কর্পুর-এর বিস্তৃতি:

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার বনে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

তাজা পাতা পান পাতার সাথে চিবিয়ে খাওয়া হয়। ফিলিপাইনে পাতা থেকে সংগৃহীত উদ্বায়ী তেল অ্যালকোহলিক পানীয়তে। সুগন্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Valkenburg and Bunyapraphatsara, 2002).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ভারতের লাখার উপজাতীয়রা এর পাতা জ্বরনাশক হিসেবে ব্যবহার করে (Singh et al., 2002).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) করন কর্পূর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে এটা সংকটের কোনো সম্ভবনা নেই ও বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে করন কর্পূর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৩-১৭৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Satheesan.vn

Leave a Comment

error: Content is protected !!