কুনছিছিরি বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো উপকারী অর্কিড

অর্কিড

কুনছিছিরি

বৈজ্ঞানিক নাম: Cymbidium aloifolium (L.) Sw., Nov. Act. Soc. Upsal. 6: 73 (1799). সমনাম: Epidendrum aloifolium L. (1753), Epidendrum pendulum Roxb. (1795), Cymbidium bicolor Lindl. (1833), Cymbidium erectum Wight (1851). ইংরেজী নাম: Aloe-leafed cymbidium. স্থানীয় নাম: ছুরি, কুনছিছিরি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Asparagales পরিবার: Orchidaceae. গণ: Cymbidium. প্রজাতি: Cymbidium aloifolium.

ভূমিকা: কুনছিছিরি (বৈজ্ঞানিক নাম: Cymbidium aloifolium) প্রজাতিটির দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে জন্মে। বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

কুনছিছিরি-এর বর্ণনা:

বৃক্ষাশ্রয়ী উদ্ভিদ, অতিকায়, দৃঢ়, অপ্রকৃত কন্দ কোনক্রমে প্রথক যোগ্য, ৪-৬ সেমি লম্বা, ডিম্বাকার, পাতার পাদদেশ দ্বারা আবৃত। পাতা ২০-৩০ x ২ সেমি, পুরু, চর্মবৎ, ফ্যাকাশে সবুজ, অগ্রভাগ অসম এবং স্থূলভাবে ২খন্ডিত, সীথ ৫-৮ সেমি লম্বা, অতি দৃঢ়, সবুজ। পুষ্পমঞ্জরী ২৫-৪৫ সেমি লম্বা, পাতার সমান অথবা পাতা থেকে খাটো বা লম্বা, তেমন ঝুলন্ত নয় কিন্তু অপ্রকৃত কন্দের পাদদেশ থেকে ধনুকাকার, সীথ ২-৩টি।

পুষ্প সংখ্যায় ১০-২৫টি, আড়াআড়িভাবে ৩.৫ সেমি, হলুদ এবং গাঢ় বেগুনি বর্ণের, সরস, পুষ্পবৃন্ত ২ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ক্ষুদ্র। বৃত্যংশ ২.০ X ০.৭ সেমি, হলুদ এবং বেগুনি বর্ণের সরু একটি কেন্দ্রীয় বলয় বিশিষ্ট যার কিনারা বৃত্যংশের হলুদ বর্ণের সাথে একাকার হয়ে গেছে, পার্শ্ব বৃত্যংশ কিছুটা কাস্তে আকৃতির।

পাপড়ি বৃত্যংশের অনুরূপ কিন্তু কিছুটা খর্বাকার, কিছুটা সরু এবং মধ্য বলয় বেগুনি বর্ণের, অধিক স্পষ্ট। লিপ ১৬-২০ মিমি লম্বা, হুবহু অন্যান্য পুষ্পপুট খন্ডের মতই, পাদদেশ অনেকটা থলি সদৃশ, ত্রি-খন্ডিত, পার্শ্ব খন্ড খাড়া, মধ্য খন্ড বাকা এবং সূঁচালো অগ্রভাগ বিশিষ্ট, ৩টি খন্ডের সবগুলোই হলুদ এবং গাঢ় বেগুনি বর্ণে সরেখিত।

ডিস্ক হলুদ এবং ক্লাব আকৃতির অগ্রভাগ বিশিষ্ট ২টি S-আকৃতির ল্যামিলা বিশিষ্ট যা হাইপোকাইল ও এপিকাইলের সংযোগ স্থলে শেষ হয়। কলাম লম্বা, ধনুকাকার, গাঢ় বেগুনি বর্ণের। পলিনিয়া ২টি, ত্রিকোণাকার, মোম সদৃশ হলুদ। কডিকল চাবুক আকৃতির। ফল ক্যাপসিউল, বৃহৎ, শৈলশিরা বিশিষ্ট, মাকু আকতির।

আরো পড়ুন:  চিকনপাতা বেলী একটি শোভাবর্ধনকারী গুল্ম

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪০ (Vatsala, 1964).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের গুঁড়ি ও শাখা-প্রশাখায় উদ্ভিদটি পরাশ্রয়ী হিসেবে জন্মায়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল এপ্রিল-জুন মাস (Abraham and Vatsala, 1981).। উদ্ভিদটি সুপ্ত অপ্রকৃত কন্দের পাদদেশ থেকে তরুণ উদ্ভিদ উৎপন্নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জনন ঘটায়। ব্যাপক আকারে চাষাবাদের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

বিস্ততি: ভারত, মায়ানমার থেকে জাভা এবং শ্রীলংকা। বাংলাদেশে প্রজাতিটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।

কুনছিছিরি-এর ঔষধ হিসাবে ব্যবহার:

এই প্রজাতির পুষ্পমঞ্জরী খুবই সুদৃশ্য। সমগ্র উদ্ভিদটি জোলাপ হিসেবে, বমনোদ্রেককারী, টনিক এবং কর্ণ শূলের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইন্দো-চীনে এই উদ্ভিদটি শারীরিকভাবে দুর্বল শিশুদের গোসল করাতে এবং মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবের চিকিৎসায় এবং অগ্নি দগ্ধ ও ক্ষত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় (Chowdhery, 1998). ।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

বাংলাদেশের তনচিঙ্গা এবং চাকমা আদিবাসী লোক ফোড়াজ্বরের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদটি ব্যবহার করে থাকে। ফোড়ার চিকিৎসায় তারা ইহার পাতা ধৌত করে পেষ্ট তৈরি করে ফোড়ার ওপরে প্রলেপ হিসেবে এবং জ্বরের চিকিৎসায় পাতার নির্যাস সেবন করে থাকে (Huda, 2000). ভারতের কয়াস উপজাতী ইহার বায়বীয় মূলের পেষ্ট দিয়ে হাড় ভাঙ্গায় দৃঢ়ভাবে প্লাষ্টার করে থাকে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কুনছিছিরি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মাত্রাতিরিক্ত আহরণ এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে রয়েছে। এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কুনছিছিরি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম কে হুদা (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  হলুদ ঘাস ফুল বাগানের শোভাবর্ধনকারী বিরুৎ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Scott Zona

Leave a Comment

error: Content is protected !!